আরও বাড়তে পারে বিদেশি মদের দাম
আমদানি শুল্ক ও আমদানি কোটার কারণে দেশে বিদেশি মদের দাম এমনিতেই বেশি। আমদানির ওপর নতুন বিধি-নিষেধ আরোপ করে প্রণীত সরকারের সংশোধীত অ্যালকোহল নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা, ২০২২ এর কারণে আরও বাড়তে পারে বিদেশি মদের দাম।
মদ বিক্রেতারা তাদের চাহিদার মাত্র ৪০ শতাংশ বিদেশি মদ আমদানি করতে পারবে, স্থানীয়ভাবে তৈরি মদের মাধ্যমে বাকি ৬০ শতাংশ চাহিদা মেটাতে হবে।
একইভাবে যে সব ক্লাবের দুইশোর বেশি সদস্যের লাইসেন্স আছে, তারাও তাদের চাহিদার মাত্র ৪০ শতাংশ বিদেশি মদ আমদানি করতে পারবে, স্থানীয়ভাবে তৈরি মদের মাধ্যমে বাকি ৬০ শতাংশ চাহিদা মেটাতে হবে।
এর আগে বার, রেস্টুরেন্ট বা ক্লাবে বিদেশি মদ বিক্রির কোনো নির্দিষ্ট সীমা ছিল না।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন এই নিয়মের কারণে বিদেশি মদের দাম বাড়ার পাশাপাশি চোরাচালানিও বেড়ে যেতে পারে।
সরকার যখন বন্ডেড ওয়্যারহাউজের ওপর নজরদারি বাড়িয়ে এবং আমদানির নানা সীমাবদ্ধতা কমিয়ে মদের অবৈধ বাণিজ্য বন্ধের চেষ্টা করছে, এমন এক সময় এই সীমা নির্ধারণের ঘোষণা আসে।
বর্তমানে উচ্চ আমদানি শুল্ক (আমদানি শুল্ক সর্বোচ্চ ৬০০ শতাংশ হতে পারে) আর বিভিন্ন আমদানি সীমাবদ্ধতার কারণে বিদেশি মদের কালো বাজার গড়ে উঠেছে।
শুল্কমুক্ত আমদানি সুবিধার অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে একটি সফটওয়্যার নিয়ে আসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এই সফটওয়্যার ব্যবহার নিয়ে এনবিআর ও বেসরকারি কূটনৈতিক বন্ডেড ওয়্যারহাউসগুলোর মধ্যে রেষারেষির কারণে দেশে বিদেশি মদের সরবরাহ উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসে, কারণ এই বন্ডেড ওয়্যারহাউজগুলোই দেশের অন্যতম প্রধান বিদেশি মদ সরবরাহকারক।
এছাড়া কালো বাজারে বিক্রির কারণে রাজস্ব বঞ্চিত হয়েছে সরকার।
গত পাঁচ বছরে সরকারের বিদেশি মদ আমদানির ওপর রাজস্ব আয় হয়েছে মাত্র ৫২ কোটি টাকা। দেশে বিদেশি মদ আমদানির মাত্র ৫ শতাংশ বাণিজ্যিকভাবে হওয়ায় রাজস্ব আয়ের পরিমাণও কমেছে।
মদের ওপর শুল্ক ৬০০ শতাংশ হলেও আমদানি থেকে সরকারের রাজস্ব আয় ছিল অনেক কম। কারণ, বেশিরভাগ বিদেশি মদই শুল্ক ছাড়া আমদানি করে দেশের ছয়টি বেসরকারি ডিপ্লোম্যাটিক বন্ডেড ওয়্যারহাউজ।
মদের ব্যবসায় সরকার রাজস্ব হারানোয়, বাণিজ্যিক আমদানি বাড়াতে আর শুল্কমুক্ত ওয়্যারহাউজ থেকে অবৈধ সরবরাহ বন্ধ করতে শুল্ক কমিয়ে আনার পরিকল্পনা করছে এনবিআর।
মদ আমদানিকারকরা তাদের বিদেশি মুদ্রার অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্সের কতো শতাংশ মদ আমদানি করতে পারবে সে সীমা বাড়িয়ে আমদানি নীতি সংশোধন করতে যাচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বর্তমানে আমদানিকারকরা তাদের বিদেশি মুদ্রার অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্সের ৭.৫ শতাংশ অ্যালকোহলিক বেভারেজ আমদানি করতে পারে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে, আমদানি নীতি আদেশের খসড়া সংশোধনীতে এ হার বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব রেখেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
তবে, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি) এ হার ১২ শতাংশ করার প্রস্তাব রেখেছে।
বর্তমানে বিদেশি মুদ্রা আয় করে এমন হোটেলগুলো মদ আমদানি করতে পারে।
আমদানি নীতি আদেশের খসড়া সংশোধনীতে বলা হয়েছে, ডিএনসি আর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি নেওয়া সাপেক্ষে বিদেশি কর্মী কাজ করে এমন প্রতিষ্ঠানগুলো মদ আমদানি করতে পারবে।
তবে, বিদেশি মুদ্রা আয় না করলেও অন্য রেস্টুরেন্ট ও বারগুলো পর্যটন করপোরেশন থেকে মদ কিনতে পারবে। বর্তমান আমদানি নীতি আদেশে বিদেশি মুদ্রা আয় করে না এমন প্রতিষ্ঠান কোথা থেকে মদ কিনতে পারবে এ নিয়ে কিছু বলা নেই।
এদিকে, ছয়টি বন্ডেড ওয়্যারহাউজের মদ বিক্রির সিন্ডিকেট ভাঙতে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেল আর পর্যটন করপোরেশনকে লাইসেন্স দেওয়ার কথা ভাবছে রাজস্ব কর্তৃপক্ষ।
নতুন এই নীতিমালায় মদ পরিবহন করা আরও সহজ হয়ে উঠবে।
যারা মদ পরিবহন করতে চান তারা পাসের জন্য ডিএনসির উপ-পরিচালকের কাছে আবেদন করতে পারবেন।
যাদের লাইসেন্স নেই তারা এই পাস ব্যবহার করে মদ পরিবহন করতে পারবেন, যার সময়সীমা বাড়ানো যাবে এক মাস পর্যন্ত।