এলডিসি উত্তরণের পরেও ভারতের বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধা চাইবে বাংলাদেশ
স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পরও ভারতের বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধা চাইবে বাংলাদেশ। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্রানুযায়ী, আগামী ৪ মার্চ নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া দুই দেশের বাণিজ্য সচিব পর্যায়ের বৈঠকে নতুন অ্যাজেন্ডা হিসেবে বিষয়টিকে অন্তর্ভুক্ত করতে যাচ্ছে ঢাকা।
এছাড়াও ২০২০ সালে ভারতের জারি করা নতুন কাস্টমস নীতির কারণে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানিতে সৃষ্ট বাধা দূর করা, পাটপণ্য ও ফ্লোট গ্লাস রপ্তানির ওপর বিদ্যমান অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক প্রত্যাহার করা, ভারত থেকে পণ্য নিয়ে আসা রেলওয়ে কন্টেইনারে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানি করা এবং ভারতের ওপর দিয়ে নেপাল ও ভুটানে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির বিষয়ে গুরুত্ব দেবে বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধিদল।
সচিব পর্যায়ের বৈঠকে আগে ২-৩ মার্চ নয়াদিল্লিতে দুই দেশের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সভা হবে। সেখানেই সচিব পর্যায়ের সভায় দুই পক্ষের অ্যাজেন্ডা চূড়ান্ত করা হবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নূর মো. মাহবুবুল হক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ সাউথ এশিয়ান ফ্রি ট্রেড এরিয়া (সাফটা) চুক্তির আওতায় ভারতে ২৫টি পণ্য বাদে সকল পণ্যে শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা পেয়ে থাকে। ২০২৬ সালে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পরও যাতে এ সুবিধা অব্যাহত থাকে, বাণিজ্য সচিব পর্যায়ের বৈঠকে সে প্রস্তাব তুলে ধরব আমরা।"
"ভারতের পক্ষ থেকে কম্প্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ অ্যাগ্রিমেন্ট স্বাক্ষরের অ্যাজেন্ডা রাখা হচ্ছে। কিন্তু এটি একটি দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক চুক্তি, যাতে উভয় পক্ষই লাভবান হবে। এর বাইরে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য যেভাবে এলডিসি গ্রাজুয়েশনের পরও শুল্কমুক্ত সুবিধা দিয়ে থাকে, ভারতের কাছ থেকেও একই সুবিধা চাইবে ঢাকা"- যোগ করেন তিনি।
মাহবুবুল হক বলেন, "বাণিজ্য সচিব পর্যায়ের বৈঠকে এটিই বাংলাদেশের একমাত্র নতুন অ্যাজেন্ডা। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য জোরদার করার ক্ষেত্রে বিদ্যমান বিভিন্ন সমস্যা সমাধানেও গুরুত্ব দিবে ঢাকা।"
উত্তরণের পরেও এলডিসিগুলো যাতে ১২ বছর পর্যন্ত প্রেফারেন্সিয়াল বাণিজ্য সুবিধা পায়, সেজন্য ডাব্লিউটিওতে প্রস্তাব রাখা হয়েছে, যা এখনও নিষ্পত্তি হয়নি। আগামী জুনে জেনেভায় অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া মিনিস্ট্রিয়াল কনফারেন্সে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে জানান তিনি।
২০২০ সালে নতুন কাস্টমস নীতি জারি করেছে ভারত, যার আওতায় দেশটির কাস্টমস কর্মকর্তারা রপ্তানি পণ্যের রুলস অব অরিজিন, পণ্যের ভ্যালু এডিশনসহ রপ্তানিকারকদের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের নথিপত্র তলব করতে পারে। ভারতের এই নীতিকে সাফটা চুক্তির বিরোধী উল্লেখ করে গতবছর ঢাকায় অনুষ্ঠিত সচিব পর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ওই নীতি কার্যকর না করতে অনুরোধ করেছিল ঢাকা। তখন বাংলাদেশ থেকে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে সাফটার রুলস অব অরিজিন মেনে চলতে প্রতিবেশি দেশটিকে অনুরোধ করা হয়।
মাহবুবুল হক বলেন, "ভারতের নতুন কাস্টমস নীতির কারণে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের পণ্য রপ্তানিতে সমস্যা হচ্ছে। অনেক রপ্তানিকারক আমাদেরকে তা জানিয়েছেন। ভারতের কাস্টমস কর্তৃপক্ষ রপ্তানিকারকের কাছে বিভিন্ন ধরনের নথিপত্র চাচ্ছে, যা সরবরাহ করা সময়সাপেক্ষ ও ব্যয় সাপেক্ষ। এতে ভারতে রপ্তানি ব্যাহত হচ্ছে। সচিব পর্যায়ের বৈঠকে এ সমস্যা সমাধানে গুরুত্ব দেবে ঢাকা।"
তিনি বলেন, "বাংলাদেশ থেকে ভারতে সয়াবিন ও পামঅয়েল রপ্তানিতে সমস্যা হচ্ছে। পাটপণ্য ও ফ্লোটিং গ্লাস রপ্তানিতে ভারতের আরোপ করা অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক প্রত্যাহারের প্রস্তাব থাকবে।"
ভারতের ওপর দিয়ে নেপাল ও ভুটানে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানির বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে আগামী মাসের প্রথমার্ধে বাংলাদেশ-ভুটান-ভারত-নেপাল (বিবিআইএন) মোটর ভেহিক্যাল অ্যাগ্রিমেন্ট নিয়ে বৈঠক হবে জানিয়ে মাহবুবুল হল জানান, এর সঙ্গে নৌ মন্ত্রণালয়, সড়ক ও সেতু বিভাগ ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডও সম্পৃক্ত থাকবে।
তবে করোনার সময় ভারত থেকে ট্রেন কন্টেইনারে বাংলাদেশে পণ্য ও কাঁচামাল আমদানি শুরু হয়েছে। ভারতীয় পণ্য বাংলাদেশে আনলোড করার পর কন্টেইনারগুলো ভারতে খালি ফেরত যায়। সেগুলোতে বাংলাদেশি পন্য রপ্তানির সুযোগ রয়েছে। তবে এজন্য ভারতীয় কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিতে হয়। বাংলাদেশ যাতে খালি কন্টেইনারে ভারতে পণ্য রপ্তানি করতে পারে, সে বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হবে।