জানুয়ারিতে আমদানি প্রবৃদ্ধি কমেছে প্রায় ২ শতাংশ
কোভিড পরিস্থিতি তুলনামূলক স্বাভাবিক হলে আমদানির পরিমাণ ব্যপক বাড়ার পর চলতি অর্থবছরের জানুয়ারিতে এসে প্রবৃদ্ধি কিছুটা কমেছে। এক মাসের ব্যবেধানে প্রায় ২ শতাংশ কমে অর্থবছরের সাত মাসে প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৫২ শতাশ।
চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে এলসি সেটেলমেন্টের পরিমাণ ছিল ৪২.১২ বিলিয়ন ডলার। গত অর্থবছরের তুলনায় এটি ছিল ৫৪.৪৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি। এক মাসের ব্যবধানে এসে প্রবৃদ্ধি কমেছে ১.৯৭ শতাংশ।
আগস্টে ৭১৮ কোটি ৪০ লাখ (৭.১৮ বিলিয়ন) ডলারের এলসি খুলেছেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই এক মাসে এত বেশি ডলার এলসি খুলেনি।
চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) হিসাবে এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে ৪৫.৪৮ বিলিয়ন ডলার যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ২৯.৮২ বিলিয়ন ডলার। সে হিসেবে এলসি নিষ্পত্তির পরিমাণ বেড়েছে ৫২.৫০ শতাংশ।
অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা বলেন, দেশের রপ্তানির চেয়ে আমদানির পরিমাণ বেশি। ব্যালেন্স অব পেমেন্টস এ সমতা আনতে হলে আমদানির পরিমাণ কিছুটা কমাতে হবে।
কোভিড পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক অবস্থায় আসার পর থেকে ব্যবসায়ী ও শিল্প উদ্যেক্তারা তাদের ব্যবসায়ীক কার্যক্রম পুরোদমে শুরু করেছে। বিশেষ করে মূলধনী যন্ত্রপাতি, নিত্য প্রয়োজনীয় ভোজ্যতেল, গম, চিনি ও মেডিসিন সরঞ্জামাদি আমদানির পরিমাণ অনেক বেশি ছিল।
এছাড়া বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল, খাদ্যপণ্যসহ অন্য সব পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় এলসি খুলতে বেশি পণ্যের চেয়ে বেশি টাকা খরচ করতে হয়েছে বলে জানিয়েছে ব্যবসায়ীরা।
বিশ্ব বাজারের তেলের দাম পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাইয়ে জ্বালানি তেলের দাম ছিল ব্যারেল প্রতি ৪২ মার্কিন ডলার। চলতি অর্থবছরের শুরুতে অর্থাৎ জুলাইয়ে তা বেড়ে হয়েছে ব্যারেল প্রতি ৭৯ ডলার।
গত জুলাই থেকে তেলের দাম বেড়েই চলছে। ফেব্রুয়ারি মাসের শেষে তেলের দাম বেড়েছে ১১১ ডলারের বেশি। এমনটা দেখা গেছে অধিকাংশ আমদানি পণ্যের ক্ষেত্রে।
এছাড়া চলতি অর্থবছরের একই সময়ে গম আমদানি করা হয়েছে ১.৩৩ বিলিয়ন ডলার। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে ৪২.৬৮ শতাংশ।
চলতি বছরের সাত মাসে জ্বালানি তেল আমদানি করতে হয়েছে ২.৩১ বিলিয়ন ডলারের। আগের অর্থবছরের একই সময় জ্বালানি তেল আমদানি করতে ব্যয় হয়েছে ১.০৯ বিলিয়ন ডলার যা প্রায় ১১১.৬০ শতাংশ।
আমদানির প্রবৃদ্ধির পরিমাণ এক মাসে কিছুটা কমলেও রপ্তানির প্রবৃদ্ধি তুলনামূলক অনেক কম। যার কারণে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ছয় মাসে বাণিজ্য ঘাটতি হয়েছে ১৫.৬২ বিলিয়ন ডলার। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৬.৮৭ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ প্রায় আড়াই গুন বেড়েছে বাণিজ্য ঘাটতি।
পিআরআই এর নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "রপ্তানির চেয়ে আমদানির পরিমাণ বেশি হওয়ার বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ছে। তবে এ ঘাটতি থেকে উত্তরণে উৎপাদনের পরিমাণ বাড়তে হবে। একই সঙ্গে আমদানির পরিমাণ কমাতে হবে।"
তিনি আরও বলেন, "আমাদের রেমিট্যান্স কমেছে, যার কারণে কারেন্ট একাউন্টে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এই চাপটা আগামিতে আরও বাড়বে। রাশিয়ার যুদ্ধের ফলে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। একারণেই আমদানি ও বিনিময় মূল্য আরও বাড়বে। তেল, গ্যাসে অধিক মূল্য পরিশোধ করতে হচ্ছে তবে রপ্তানি আরও কমেও যেতে পারে। এতে আমাদের ডলারের দাম বাড়বে। সরকারের জন্য সামষ্টিক অর্থনীতিকে স্বাভাবিক রাখা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।"
"আমাদের সামর্থ্যের বাইরে ব্যয় বন্ধ করতে হবে। আমাদের আমদানির পরিমাণটা কমাতে হবে। তা না হলে ঘাটতি আরও বাড়বে।"
বেসরকারি একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বলেন, "কোভিডের কারণে দীর্ঘদিন অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল এরই কারণে প্রায় দুই বছর যাবৎ ব্যবসা বন্ধ ছিল। কোভিড স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরার পর থেকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো পুরোদমে কার্যক্রম শুরু করে। শিল্প কারখানাগুলো উৎপাদনে যাচ্ছে এরই কারণে দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থায় ঋণের পরিমাণ বাড়ছে। একইসঙ্গে আমদানি-রপ্তানিও বাড়ছে।"
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী দেখা যায়, জানুয়ারির শেষে রিজার্ভের পরিমাণ দাড়িয়েছে ৪৪.৯৫ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ এই পাঁচ মাসে ডলার বিক্রি ও বিভিন্ন বিল পরিশোধের ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ কমেছে ৩.১০ বিলিয়ন ডলার।
একইসঙ্গে চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে দেশের রেমিট্যান্স কমছে।
চলতি অর্থবছরের প্রথম আটমাস (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত রেমিট্যান্স এসেছে ১৩.৪৪ বিলিয়ন ডলার। এর আগের অর্থবছরের একই সময়ে তা ছিল ১৬.৬৯ বিলিয়ন ডলার। সে হিসেবে রেমিট্যান্স কমেছে ১৯.৫ শতাংশ।