ভারসাম্য রক্ষার কঠিন যাত্রায় পোশাক রপ্তানিকারকেরা
পরিবহন ভাড়া, ইউটিলিটি ট্যারিফ আর কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধিতে লাগাতার বেড়েই চলেছে উৎপাদন খরচ। কিন্তু, সে তুলনায় প্রস্তুতকৃত পণ্যের দাম বাড়ছে অনেক ধীর গতিতে। এ বাস্তবতায় ভারসাম্য রক্ষার এক কঠিন বাস্তবতার পথে রয়েছে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিকারকেরা। দীর্ঘমেয়াদে প্রতিকূল এ সময়ের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করে টিকে থাকার ব্যাপারেও অনিশ্চিত তারা।
শিল্পটির নেতৃবৃন্দ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেছেন, দেশের অনেক তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক ব্রেক ইভেন পয়েন্টে (মোট উৎপাদন খরচ ও মূল্য যখন সমান) থাকতেই হিমশিম খাচ্ছেন।
উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে দেশের আরএমজি শিল্পে স্থানীয় মূল্য সংযোজন সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। ব্যবসায়ীরা বলেছেন, কোভিড মহামারি শেষ হলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে শুধু এই আশায় তারা এই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।
সংকটের কালোমেঘ ঘনিয়ে আসার বিষয়ে অর্থনীতিবিদরাও সতর্ক করছেন। তাদের মতে, কিছু ইউরোপীয় দেশ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গত ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতির কবলে পড়েছে, এই পরিস্থিতি বৈশ্বিক অর্থনীতির পাশাপাশি বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি প্রবৃদ্ধিতেও বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।
২০১৯ সালের শেষদিকে চীনের উহান নগরে প্রথম হানা দেয় কোভিড-১৯ মহামারির প্রাদুর্ভাব। এরপর বর্তমানেই দেশটির সবচেয়ে সবচেয়ে খারাপ প্রাদুর্ভাবে পড়েছে চীনের বৃহত্তম শহর এবং আর্থিক পাওয়ার হাউস সাংহাই। গত সপ্তাহে শহরটির কর্তৃপক্ষ দুই-পর্যায়ের লকডাউন শুরু করেছে, যা ইতিমধ্যে কাঁচামাল সরবরাহের শৃঙ্খলকে প্রভাবিত করতে শুরু করেছে।
চীন বাংলাদেশের পোশাক খাতের কাঁচামালের চাহিদার ৮০% থেকে ৯০% পূরণ করে। কিন্তু, সাংহাইয়ে লকডাউনের কারণে কাঁচামাল, নথিপত্র এবং নমুনার চালান - আকাশ ও সমুদ্র উভয় পথেই - বাংলাদেশে পৌঁছাতে স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় চারগুণ বেশি সময় লাগছে বলে শিল্পের অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে।
অন্যদিকে, বিদেশি ক্রেতাদের কাছে সময়মতো রপ্তানি পণ্যের ডেলিভারি নিশ্চিত করতে আকাশপথে পণ্য সরবরাহ করা ছাড়া কোন বিকল্প নেই পোশাক প্রস্তুতকারকদের কাছে, যা তাদের ব্যবসার খরচ বাড়িয়ে আখেরে ক্ষতি করছে।
কাজের অর্ডার প্রচুর, দাম খুব একটা বাড়ছে না:
পোশাক রপ্তানিকারকরা যে অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে রয়েছে তার দিকে ইঙ্গিত করে, মোহাম্মদী গ্রুপের পরিচালক নাভিদুল হক টিবিএসকে বলেন, "আমরা পোশাক রপ্তানিকারকরা এক ম্যারাথন দৌড়ে আছি। আমরা আরও রপ্তানির মাধ্যমে ব্যবসা বাড়াচ্ছি, কিন্তু দিনশেষে শিল্পের চাকা ঘুরিয়ে কিছুই (লাভ) অর্জন করতে পারছি না।
পরিস্থিতির আরও ব্যাখ্যা করে তিনি জানান, কার্যাদেশ নেওয়ার সময় তারা বর্তমান উৎপাদন খরচ হিসাব করে পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করেন। কিন্তু, এরপর অর্ডার নিশ্চিতকরণের পর কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি বা অন্যান্য কারণে উৎপাদন খরচ বেড়ে গেলেও পণ্যের দাম বাড়াতে পারেন না।
"বায়ার কোনও অর্ডার নিশ্চিত করার পর কাঁচামাল যদি আরো দামি হয়ে যায়, তাহলে আমাদের হাতে দাম নিয়ে আলোচনার সুযোগ থাকে না। প্রস্তুতকারকদের সেই ক্ষতি মেনে নিতে হয়," বলেছেন বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের-ও (বিজিএমইএ) একজন পরিচালক নাভিদুল হক।
নাভিদকে প্রতিধ্বনিত করে, টিএডি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশিকুর রহমান বলেন, পরবর্তী মৌসুমের জন্য উৎপাদনের সর্বোচ্চ সময় হওয়ায় পোশাক রপ্তানিকারকরা এখন ক্রেতাদের কাছ থেকে অর্ডারের একটি ভালো প্রবাহ পাচ্ছেন। যদিও বাড়তি উৎপাদন খরচের সাথে সামঞ্জস্য রেখে মূল্য দিচ্ছেন না ক্রেতারা।
যেসব পোশাক প্রস্তুতকারক ফ্রেইট অন বোর্ড (এফওবি) ব্যবস্থার ভিত্তিতে কার্যাদেশ সম্পন্ন করেন- তারা কাঁচামালের দাম বৃদ্ধির কারণে চাপের মধ্যে রয়েছেন। অন্যদিকে যারা কস্ট অব মেকিং (সিএম) ব্যবস্থার ভিত্তিতে কাজ করেন, তারা পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধির কারণে চাপের মধ্যে রয়েছেন- যোগ করেন তিনি।
স্টারলিং গ্রুপের চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আরএমজি প্রস্তুতকারকদের লোকসান হলেও উৎপাদন চালিয়ে যাওয়া উচিত, কারণ কারখানা বন্ধ থাকলে তাদের আরও আর্থিক ক্ষতি হয়।
দেশের পোশাক শিল্প ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজার থেকে কার্যাদেশের ভালো প্রবাহ উপভোগ করছিল, তবে সাম্প্রতিক রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে সেই ছন্দ ভেঙেছে। কারণ ইইউ এর অনেক ক্রেতারই এই দুটি দেশে ব্যবসা রয়েছে- তিনি যোগ করেন।
বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর আরো বলেছেন, মার্কিন বাজার ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু সেখানকার ক্রেতারা কাঁচামালের দাম ও অন্যান্য খরচের সাথে সামঞ্জস্য রেখে পণ্যের দাম বাড়াতে রাজি হচ্ছে না।
রেকর্ড নিম্ন-অবস্থানে মূল্য সংযোজন:
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, আরএমজি খাতে মূল্য সংযোজন চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর মেয়াদে ৫৫.৮০ শতাংশে নেমে এসেছে, যা আগের অর্থবছরের প্রথমার্ধে ছিল ৬৩.৩৭ শতাংশ।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ) এর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম টিবিএসকে বলেছেন, মূল্য সংযোজন অনুপাত সম্ভবত এই বছরের জানুয়ারি-মার্চ মেয়াদে আরও বেশি হ্রাস পাবে, কারণ এই সময়ের মধ্যে কাঁচামালের দাম আরও বেড়েছে।
ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, "যেমন ধরুন আগে আমরা এক ডজন টি-শার্ট তৈরির মজুরি হিসাবে ৩ ডলার পেতাম– তখন কাপড়, অ্যাক্সেসরিজ এবং অন্যান্য কাজের মোট খরচ দেওয়া হতো আরো ১২ ডলার। কাঁচামালের সাম্প্রতিক দাম বৃদ্ধির কারণে, এসব খরচ মিলে ১৫ ডলার ছাড়িয়ে গেলেও, ক্রেতারা আমাদের একই খরচ দিচ্ছে।"
এনভয় টেক্সটাইল লিমিটেডের চেয়ারম্যান কুতুবউদ্দিন আহমেদও মূল্য সংযোজন হারের পতনের জন্য বিশ্ববাজারে কাঁচামালের দাম বৃদ্ধিকে দায়ী করেছেন।
"দীর্ঘদিন ধরেই তুলা ও সুতার দাম বাড়ছে।(জাহাজে) পরিবহন খরচও বেড়েছে প্রায় পাঁচ গুণ। কিন্তু পণ্যের দাম এখনও সামঞ্জস্য করা হয়নি।"
"অনেক উদ্যোক্তা ব্রেক-ইভেন (সমান-সমান) খরচে তাদের কারখানা চালাচ্ছেন, আবার কেউ কেউ ব্রেক-ইভেনেও ধরে রাখতে পারছেন না। তবে মহামারি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পুনরুদ্ধারের আশায় তারা তাদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে," তিনি যোগ করেন।
বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি কুতুবউদ্দিন আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের জন্য ক্রমবর্ধমান মালবহনের ভাড়া একটি বড় চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে বলেছেন, উদ্যোক্তাদের বৈশ্বিক শিপিং (জাহাজে পরিবহন শিল্প) পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা উচিত।
শাশা ডেনিম মিলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামস মাহমুদ বলেন, "ক্রেতারা মৌসুমের শুরুতে পণ্যের দাম নির্ধারণ করেন, এর মাধ্যমে তারা নিজেদের বিপণীগুলো জুড়ে ইনভেন্টরি প্ল্যান সেট করেন। ঠিক একারণেই উৎপাদন খরচ যখন বাড়ছিল বায়াররাও তখন পণ্যের দাম বাড়াতে পারেনি। ফলে তাদের পণ্য সরবরাহকারী প্রস্তুতকারকদের এই বাড়তি খরচকে তাদের মুনাফা সীমার (প্রফিট মার্জিনের) বাইরে রাখতে হয়েছিল।"
এছাড়াও, সে সময় ব্যাংক ঋণ পরিশোধের ওপর স্থগিতাদেশ শিথিল করা হয়, যা রপ্তানিকারকদের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে। তিনি আরো জানান, কাঁচামালের দাম গড়ে প্রায় ৭০ শতাংশ বৃদ্ধির কারণে বড় কোম্পানিগুলো ব্যাংকের কাছে একক ঋণগ্রহীতার সীমা অতিক্রম করার সমস্যার সম্মুখীন হতেও শুরু করে।
একটি উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন তিনি। 'আগে যদি ৫ লাখ ইয়ার্ড ফ্যাব্রিক তৈরি করতে ১০ লাখ ডলার খরচ হতো, এখন ওই একই অর্ডার প্রস্তুত করতে আমাদের ১৭ লাখ ডলার লেগে যায়। কাজেই স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, মূল্য সংযোজন কমছে। কারণ বায়াররা মধ্য-মৌসুমে দাম সমন্বয় করতে পারেনি।'
'এসব ফ্যাক্টর বিবেচনায় নিয়ে পূর্বাভাস দেওয়া যায়, এই বছরের ডেটাতে আমরা আগের তুলনায় কম মূল্য সংযোজন দেখব। কেননা ইনপুটের খরচ আমাদের কম্পিটিটিভনেসকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।'
তবে এই পোশাক রপ্তানিকারক আশা প্রকাশ করেন, আসন্ন জাতীয় বাজেটে এই শিল্পের জন্য সরকার নীতি সহায়তার ঘোষণা দেবে। যা এ শিল্পের উত্তরণকে সহজ এবং সামনের বছরগুলোতে প্রতিযোগিতা-সক্ষম থাকতে সাহায্য করবে।
উৎপাদন খরচ আরও বাড়তে পারে:
ম্যাকসন গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, তুলার সূচক আবার সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। এতে সুতার দাম আরও বাড়তে পারে।
ব্লুমবার্গের তথ্যানুসারে, চলতি বছরের ৩১ মার্চ আইসিই তুলা সূচক পাউন্ডপ্রতি ১৪১.৮০ সেন্টে পৌঁছেছে, যা এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ।
খোকন বলেন, সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর প্রস্তাবিত গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি বাস্তবায়ন করা হলে- দেশে বিদ্যুতের দাম বাড়তে পারে, যা কাঁচামালের দামও বাড়িয়ে দেবে।
নতুন হুমকি ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি:
রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (র্যাপিড) বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক টিবিএসকে বলেন, গোটা বিশ্ব মূল্যস্ফীতি-প্রবণতায় রয়েছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে পোশাকের বৈশ্বিক চাহিদায়।
কাঁচামালের দাম বাড়ানো সত্ত্বেও টিকে থাকতে পারে বড় পরিসরে উৎপাদনক্ষম প্রতিষ্ঠানগুলো। কিন্তু ছোট কোম্পানিগুলোর টিকে থাকা কঠিন হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, কোনো নির্দিষ্ট সরকারের নীতি সহায়তা, বিশ্বব্যাপী পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির মতো বৈশ্বিক সমস্যা মোকাবিলায় যথেষ্ট হবে না।
সাংহাই লকডাউনে নতুন ধাক্কা:
বিকেএমইএ-র মোহাম্মদ হাতেম জানিয়েছেন, সাংহাই বন্দরে করোনাজনিত লকডাউনের কারণে তিনি ভাড়া বিমানে করে কাপড় আমদানিতে বাধ্য হয়েছেন। তারপরও কাগজপত্রের অভাবে আমদানিকৃত পণ্য খালাস করতে অসুবিধায় পড়ছেন।
'সাংহাইয়ে কঠোর লকডাউন দেওয়ায় শিপিংয়ের কাগজপত্র এখনও ওই শহরেই আটকে রয়েছে। এছাড়া আকাশপথে পণ্য আমদানি করলে আমার উৎপাদন খরচ আরও বাড়বে।'
সমুদ্রপথে পরিবহন সেবা বিঘ্নিত হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, সাংহাই থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য পৌঁছাতে সাধারণত দ্রুতগতির জাহাজ ১২ দিন এবং ধীরগতির জাহাজ ২০-২৫ দিন সময় নেয়। কিন্তু লকডাউনের কারণে এসব জাহাজের পৌঁছতে আরও বেশি সময় লাগবে।
'কঠিন পরিস্থিতিতে কীভাবে টিকে থাকতে হয় আমরা জানি'
বিকেএমইএর সহসভাপতি ফজলে শামীম এহসান অবশ্য বলেন, যেকোনো প্রতিকূল পরিস্থিতিতে কীভাবে টিকে থাকতে হয়, পোশাক উদ্যোক্তারা তা শিখেছেন।
'মাল্টি-ফাইবার অ্যারেঞ্জমেন্ট (এমএফএ) কোটা প্রত্যাহারের পরও আমরা টিকে থাকতে পেরেছি। সবসময় আমরা মুনাফা না করে যেকোনো প্রতিকূল পরিস্থিতিতে টিকে থাকার ওপর গুরুত্ব দিই। আর এটিই আমাদের ক্রেতাদের আস্থা ধরে রাখতে সাহায্য করে,' বলেন তিনি।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যানুসারে, ২০২২ অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারিতে তৈরি পোশাকের চালান আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৩০ শতাংশ বেড়ে ২৭.৪৯ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।