মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাড়ছে ভর্তুকি
গ্যাস, বিদ্যুৎ ও সারের দাম না বাড়িয়ে ভর্তুকি বরাদ্দ আরও বাড়ানোর মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে রাখতে আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রণয়ন করছে সরকার।
এছাড়া, অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ বাড়িয়ে অধিক কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরীকরণও ২০২২-২৩ অর্থবছরের অন্যতম লক্ষ্য।
নতুন অর্থবছরে ভর্তুকি ও প্রণোদনা খাতে ৭২ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে, যা চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের তুলনায় ৫৪ শতাংশ ও সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ২৪ শতাংশ বেশি। এলএনজি, বিদ্যুৎ ও কৃষি খাতে ভর্তুকির পরিমাণ ৪৬ হাজার ৩০০ কোটি টাকায় দাঁড়াবে বলে জানিয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
এই মুহূর্তে ভর্তুকি প্রত্যাহার করা হলে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে ৯ শতাংশে উন্নীত হওয়ার আশঙ্কা করছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
এছাড়া, শ্রীলঙ্কাসহ পাকিস্তান ও নেপালের অর্থনৈতিক সংকট মাথায় রেখে নতুন অর্থবছরে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন ঘটিয়ে রপ্তানি প্রতিযোগিতা আরও বাড়ানো এবং আমদানি নিরুৎসাহিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
বৈদেশিক মুদ্রার সন্তোষজনক রিজার্ভ ধরে রাখতে প্রবাসীদের বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাতে আকৃষ্ট করতে বিদ্যমান ২.৫ শতাংশ প্রণোদনার বাইরে নতুন সুবিধা দেওয়া হতে পারে।
কর্মসংস্থান ও মূল্যস্ফীতি, শিল্প ও কৃষিখাতের উৎপাদন বিবেচনায় নিয়ে এসব খাতে বাড়তি ভর্তুকির চাহিদা মেটাতে প্রয়োজনে অন্যান্য খাতে বরাদ্দে কাটছাঁট করা হবে।
একইসঙ্গে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় বরাদ্দ ৫ শতাংশ বাড়িয়ে ১.১৩ লাখ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হবে। পাশাপাশি নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য বিনামূল্যে বা স্বল্পমূল্যে খাদ্য বিতরণে বরাদ্দ বাড়ানো হবে। এজন্য খাদ্য সহায়তা খাতেও বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে।
আগামী অর্থবছরে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতা বাড়ানো হবে। ১৯ লাখ টন খাদ্য মজুদ আছে, যা থেকে বিতরণ বাড়ানো হবে। এর মূল লক্ষ্য হবে বাজার নিয়ন্ত্রণ। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যপণ্যের মূল্য বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে কৃষি খাতে ভর্তুকির পরিমাণ বাড়িয়ে ১৫ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হচ্ছে।
মূলত অধিক খাদ্য উৎপাদনের লক্ষ্যে কৃষি যান্ত্রিকীকরণসহ সেচ ও বীজে প্রণোদনা, কৃষি পুনর্বাসন, সারে এই ভর্তুকি দেওয়া হবে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ এক ধাক্বায় ৪৩.৩৫ শতাংশ বাড়িয়ে ১৬ হাজার ২০১ কোটি টাকা থেকে ২৩ হাজার ২২৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।
রোববার অনুষ্ঠিত রাজস্ব, মুদ্রা ও আর্থিক নীতি এবং মুদ্রা বিনিময় হার সংক্রান্ত কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল-এর সভায় আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতির হার ৫.৫ শতাংশ প্রাক্কলনের প্রস্তাব করা হয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও সাবেক অর্থসচিব ড. ফজলে কবির বলেছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যশস্যের দাম বাড়ছে। এ অবস্থায় মূল্যস্ফীতির হার ৫.৬ শতাংশ প্রাক্কলন করা যৌক্তিক হবে।
ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ৬.১৭ শতাংশ। সংশোধিত বাজেটে এ হার ৫.৮ শতাংশে উন্নীত করার প্রস্তাব দেয়া হচ্ছে। রোজার পর মূল্যস্ফীতির হার নেমে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন অর্থসচিব।
কোভিডকালে চাকরি হারানো কিংবা নতুন করে দারিদ্র্যসীমার নিয়ে নেমে যাওয়া মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও আয়সীমা বাড়াতে নতুন অর্থবছরে বিনিয়োগ বাড়ানোর উপর গুরুত্ব দেওয়া হবে।
এজন্য ২০২২-২৩ অর্থবছরে জিডিপির ৩১.৫ শতাংশ হারে বিনিয়োগ প্রত্যাশা করছে অর্থ মন্ত্রণালয়। একইসঙ্গে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি শেষে এ হার প্রায় ১১ শতাংশ।
অর্থ মন্ত্রণালয় মনে করছে, কোভিডের কারণে গত দুই অর্থবছরে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়েনি। কোভিড পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় নতুন অর্থবছরে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়বে।
বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির হার বৃদ্ধি এবং শিল্প-পণ্য ও মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি চিত্রে এমনটা আশা করছেন সরকারের নীতি-নির্ধারকরা।
রোববার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব আবদুর রউফ তালুকদার বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে ভর্তুকির এই হিসাব ধরা হয়েছে।
ইউক্রেন যুদ্ধ প্রলম্বিত হওয়া বা অন্য কোনো কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বাড়লে এই ভর্তুকিও যথেষ্ট হবে না।
তিনি বলেন, 'যদি আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেল, সার ও গ্যাসের দাম আরও বাড়ে এবং দেশে দাম সমন্বয় করা না হয়, তাহলে ভর্তুকি আরও বাড়াতে হবে। এজন্য কিছু খাতের বরাদ্দ কাটছাঁট করতে হবে।'
অর্থসচিব জানান, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন ও পেট্রো বাংলা প্রতিদিন প্রায় ৪০-৪৫ কোটি টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে। এ হারে ভর্তুকি চলতে থাকলে বছর শেষে দুই সংস্থার বাড়তি ৬-৭ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকির দরকার হবে।
তিনি বলেন, 'সব খাতে ভর্তুকি কমানো সম্ভব হবে না। গ্যাস ও বিদ্যুৎ আমাদের অগ্রগাধিকার খাত। এসব পণ্যের সঙ্গে কর্মসংস্থানের যেমন সম্পর্ক রয়েছে, মূল্যস্ফীতিরও সম্পর্ক রয়েছে।' এ অবস্থায় বাজেটে ভর্তুকির চাপ কমাতে বিদেশি উৎস থেকে অর্থ সংগ্রহের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়।
অর্থসচিব আরও বলেন, আমদানি ব্যয়ের চার বিলিয়ন ডলারেরও বেশি ব্যয় হয়েছে শিল্প-পণ্য ও যন্ত্রপাতি আমদানিতে। এছাড়া কোভিডকালে সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের শেষ বছর হবে আগামী অর্থবছর। ফলে নতুন অর্থবছরে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়বে।
ইভ্যালি কেলেঙ্কারির পর ই-কমার্স খাতে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে ধস নামলেও খাতটিতে নতুন অর্থবছরে ৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে বলে আশা করছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
৯ পণ্য আমদানিতে বাড়তি ব্যয় ৮ বিলিয়ন ডলার, কমছে রিজার্ভ
আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধির কারণে জ্বালানি তেল, এলএনজি, রাসায়নিক সারসহ ৯টি প্রধান পণ্য আগের অর্থবছরের সমপরিমাণ আমদানিতে এ বছর ৮ বিলিয়ন ডলার অতিরিক্ত ব্যয় করতে হচ্ছে।
রপ্তানির তুলনায় আমদানি ব্যয় বেশি বাড়ার পাশাপাশি চলতি অর্থবছরে রেমিট্যান্স কমে যাওয়া এবং বাজেট সহায়তা ও টিকা সহায়তা কমে যাওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও কমে চলতি অর্থবছর ৪২ বিলিয়ন ডলারে নেমে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা বৈদেশিক ঋণে দেউলিয়া হওয়ার উপক্রম হওয়ায় বাংলাদেশেও বৈদেশিক ঋণ ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে আলোচনা গুরুত্ব পাচ্ছে।
বাংলাদেশের পরিস্থিতি তেমন নয় বলে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় নিশ্চিত করলেও রপ্তানির তুলনায় আমদানিতে ২২ বিলিয়ন ডলারের অতিরিক্ত ব্যয় সরকারকে ভাবিয়ে তুলছে।
কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের সভায় বাংলাদেশের রিজার্ভ কমে যাওয়ার কারণ জানতে চান পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান ও বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
এ সময় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানান, 'রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলারে উঠেছিল, কিন্তু আমরা তা ধরে রাখতে পারিনি। চাহিদা মেটাতে ডলার এখন বাজারে বিক্রি করতে হচ্ছে। আমদানি ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। রিজার্ভ কমার এটাই মূল কারণ।'
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. ফজলে কবির বলেন, ২০২০-এর সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রথমবারের মতো ৪৮ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে।
ওই বছর কোভিডজনিত কারণে টিকা সহায়তা ও বাজেট সহায়তা হিসেবে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ৭.৭ বিলিয়ন ডলার সহায়তা পায় বাংলাদেশ, যা রিজার্ভ বাড়াতে ভূমিকা রাখে।
'গত অর্থবছরে রেমিট্যান্স প্রবাহে ঊর্ধ্বগতি ছিল। ওই সময় বাংলাদেশ ব্যাংক বাজার থেকে ৭.৯৩ বিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করে। এ বছর এ ধরনের সহায়তা কমে গেছে। আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে। কিন্তু এ বছর গত বুধবার পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংককে উল্টো ৪.৩৬ বিলিয়ন ডলার বাজারে ছাড়তে হয়েছে,' জানান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর।
চলতি বছরের ৩১ মার্চ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৪৪.১৫ বিলিয়ন ডলার। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর জানান, চলতি অর্থবছর শেষে এটি ৪২ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়াবে। তবে আগামী অর্থবছরে তা বেড়ে ৪৩.৫ বিলিয়ন ডলার হবে বলে আশা করছেন তিনি।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে রিজার্ভ ৫০ বিলিয়ন ডলার পার করে পরের অর্থবছর তা ৬২ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে বলে প্রাক্কলন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
অর্থসচিব আবদুর রউফ তালুকদার বলেন, 'আমাদের ব্যালান্স অভ পেমেন্ট ঋণাত্মক অবস্থায় নেমে গেলেও তাতে দীর্ঘমেয়াদে ঝূঁকির কিছু নেই। তবে আমাদের তা ইতিবাচক ধারায় ফিরিয়ে আনতে হবে, নাহলে রিজার্ভ আরও কমে যাবে।'
অর্থসচিব বলেন, বর্তমানে যে পরিমাণ রিজার্ভ আছে, তা দিয়ে দেশের ৬ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। এ সময় গভর্নর তাকে মনে করিয়ে দেন যে রিজার্ভ থেকে বছরে ৭ বিলিয়ন ডলার এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ডে ব্যয় করতে হবে।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি সভায় জানান, পণ্য রপ্তানিতে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৪৮ শতাংশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে ২৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। রপ্তানি অর্ডার যেভাবে আসছে, তাতে আগামী ৬ মাস একই হারে প্রবৃদ্ধি হবে বলে জানান তিনি।
টাকার মান আরও কমতে পারে
আমদানি নিরুৎসাহিত করার পাশাপাশি রপ্তানিকারকদের সক্ষমতা বাড়াতে ডলারের বিপরীতে টাকার মান আরও কমানো হতে পারে বলে সভায় আলোচনা করেছেন সরকারের নীতিনির্ধারকরা।
এছাড়া প্রবাসীরা যাতে বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহী হন, সেজন্য বিদ্যমান ২.৫ শতাংশ প্রণোদনার বাইরে নতুন কিছু উদ্যোগ নেওয়ার উপর জোর দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
আগামী অর্থবছরে রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্সে উচ্চ প্রবৃদ্ধি হবে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ দ্রুত সমাপ্ত হবে এবং এ বছরের উচ্চ বেজের কারণে আগামী বছর আমদানি খুব বেশি বাড়বে না—এমন অনুমানের উপর ভিত্তি করে বাজেট প্রণয়ন করা হচ্ছে জানিয়ে অর্থ সচিব বলেন, বহিঃখাতের জন্য উচ্চাভিলাষী প্রস্তাবনা করা হচ্ছে। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যস্ফীতি বাড়লে আমদানি নিয়ে করা অনুমান পাল্টে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করেন তিনি।
বৈঠক সূত্র জানা গেছে, অর্থসচিব আবদুর রউফ তালুকদার বলেছেন, প্রতিযোগী দেশগুলো ডলারের বিপরীতে নিজস্ব মুদ্রার অবমূল্যায়ন করছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ও এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে কাজ করছে, যাতে আস্তে আস্তে টাকার অবমূল্যায়ন করে বাংলাদেশের রপ্তানি প্রতিযোগিতা ধরে রাখা সম্ভব হয়।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর জানান, মুদ্রাবাজারে ডলারের চাহিদা বাড়ছে। মার্চে রেমিট্যান্স বেড়েছে, যা এপ্রিলেও অব্যাহত থাকবে। তারপরও ডলারের বিপরীতে টাকার মান কিছুটা সমন্বয় করতে হবে। কারণ, কার্ব মার্কেটে ইতোমধ্যে ডলারের দাম ৯১ টাকায় উঠেছে। আন্তঃব্যাংক লেনদেনে ডলারের দাম এখন ৮৬.২০ টাকা।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন বলেন, কোভিডকালীন সময়ে অবৈধভাবে রেমিট্যান্স পাঠানোর পথ বন্ধ থাকায় প্রবাসীরা বাধ্য হয়ে বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। এখন আন-অফিসিয়াল চ্যানেলগুলো সক্রিয় হচ্ছে, ফলে বৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমছে।
'এখন ২.৫ শতাংশ হারে প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু বৈধ পথে প্রবাসীদের রেমিট্যান্স পাঠাতে আকৃষ্ট করতে আরও কিছু উদ্যোগ নিতে হবে। কার্ব মার্কেট ও আন্তঃব্যাংক লেনদেন হারের এখন যে ব্যবধান, তা শুধু ২.৫ শতাংশ প্রণোদনা দিয়ে কাভার করা সম্ভব নয়,' যোগ করেন তিনি।
উন্নয়ন ব্যয় বেশি বাড়বে না
২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের আকার ৬.৭৮ লক্ষ কোটি টাকা হলেও বেতন-ভাতা, ভর্তুকি ও সরকারের সুদ পরিশোধে ব্যয় বিপুল হারে বেড়ে যাওয়ার কারণে জিডিপির অনুপাতে উন্নয়ন ব্যয় সে হারে বাড়ছে না।
চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের আকার ৫ লাখ ৯৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হচ্ছে। নতুন অর্থবছরের বাজেটের আকার এর চেয়ে ১৪.২১ শতাংশ বাড়ছে।
চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে জিডিপির অনুপাতে এডিপিতে বরাদ্দ ৬.৫ শতাংশ, কিন্তু নতুন বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ৫.৬ শতাংশে নেমে আসছে।
২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে এডিপিতে বরাদ্দ থাকছে ২ লাখ ৪৬ হাজার ২০৭ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে বেতন-ভাতায় ৭৬ হাজার ৪১২ কোটি, সুদ পরিশোধে ৮০ হাজার ২৭৫ কোটি এবং ভর্তুকি ও প্রণোদনায় ৮২ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা ব্যয় হবে। এই তিন খাতে মোট বাজেটের ৩৫.৩২ শতাংশ ব্যয় হবে।
পরিকল্পনা সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী সভায় জানান, সরকারের নীতি অনুযায়ী আগামী অর্থবছরের এডিপিতে কোভিড থেকে উত্তরণ ও গবেষণাধর্মী প্রকল্পে জোর দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। নির্মাণ ও পূর্ত কাজের প্রকল্প নিরুৎসাহিত করার কথা বলা হয়েছে।
অর্থসচিব আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, নতুন অর্থবছরের বাজেটে ২ লাখ ৪৬ হাজার ২০৭ কোটি টাকার এডিপিতে বিদেশি তহবিল থেকে ব্যয় ধরা হয়েছে মাত্র ৯৩ হাজার কোটি টাকা।
এডিপির আকার সাড়ে ৯ শতাংশের বেশি বাড়লেও বিদেশি সহায়তা বাড়ছে মাত্র ৫ শতাংশ। এ অবস্থায় বিদেশি ঋণের ৫০ বিলিয়ন ডলারের পাইপলাইন থেকে বছরে ৪-৫ বিলিয়ন ডলার করে ব্যয় করতে পারলে বাজেটে চাপ কমবে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব ফাতেমা ইয়াসমিন সভায় বলেন, সুদের হার বিবেচনা করলে এখনও বিদেশি ঋণ বেশি সাশ্রয়ী। তিনি বলেন, বিদেশি ঋণের ব্যবহার বাড়লে আরও বেশি প্রকল্প নেয়া যাবে।
আগামী বাজেটে মোট ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এর মধ্যে এনবিআরের কর ব্যবস্থা থেকে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা, নন-এনবিআর কর থেকে ৮ হাজার কোটি টাকা এবং নন-ট্যাক্স রেভিনিউ থেকে ৪৫ হাজার কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।
সরকারের করপোরেশনের উদ্বৃত্ত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা দেয়ার আইন প্রণয়নের পর ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১৬ হাজার ৪৬ কোটি টাকা ও তার পরের অর্থবছরে ১৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা জমা হয়েছে। কিন্তু চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত জমা হয়েছে মাত্র ৩ হাজার ৫০ কোটি টাকা। তবে ফাইভ-জি তরঙ্গ বিক্রি করে নতুন অর্থবছরে ১ বিলিয়ন ডলার পাওয়া যেতে পারে বলে আশা করছে অর্থ মন্ত্রণালয়।