ইলিশের উৎপাদন আটকে যাবে ৭ লাখ টনে!
উৎপাদন বৃদ্ধিতে নেওয়া নানা পদক্ষেপের ফলে প্রতি বছরই বাড়ছে ইলিশের উৎপাদন। তবে যত পদক্ষেপই নেওয়া হোক না কেন, বাংলাদেশে ৭ লাখ টনের বেশি ইলিশের উৎপাদন করা যাবে না বলে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই) সম্প্রতি ইলিশ নিয়ে গবেষণা করেছে। এই গবেষণায় দেখা গেছে, ইলিশের প্রজনন ক্ষেত্রগুলোতে মোট বায়োমাসের পরিমাণ ৪ লাখ টন, যা থেকে বছরে পরিপূর্ণ ইলিশ পাওয়া সম্ভব ৭ লাখ টন।
বায়োমাস হলো একটি নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট এলাকায় বা একটি বাস্তুতন্ত্রে জীবন্ত প্রাণীর (লিভিং অর্গানিজমস) পরিমাণ।
বিএফআরআইয়ের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ টিবিএসকে বলেন, 'আমরা স্টাডি করে দেখেছি এখন যে বায়োমাসের পরিমাণ তাতে করে আমরা সর্বোচ্চ ৭ লাখ টন ইলিশ আহরণ করতে পারবো।'
তিনি বলেন, 'একটা মৌসুমে এর বেশি ইলিশ ধরতে গেলে বায়োমাস ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং পরবর্তী সময়ে ইলিশের উৎপাদন কমে যাবে।'
তবে দ্রুত জাটকা ধরা কমিয়ে আনা গেলে কয়েক বছরে বায়োমাসের এই স্টক আরও বাড়ানো সম্ভব হবে। স্টক বাড়ানো গেলে তখন ইলিশ আহরণও বাড়ানো সম্ভব।
বিএফআরআই দুই বছর পরে পুনরায় এই গবেষণাটি পরিচালনা করবে বলে জানা যায়।
গবেষকরা বলছেন, বায়োমাস ক্ষতিগ্রস্ত হয় এরকমভাবে ইলিশ আহরণ করা যাবে না। জোর করে বেশি ইলিশ আহরণ করতে গেলে উল্টো বায়োমাস ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং ইলিশের প্রডাকশন কমতে থাকবে।
তবে বাংলাদেশে এখনো প্রতি বছর গড়ে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ টন ইলিশ আহরণ করা হয়। অর্থাৎ আরও প্রায় দেড় লাখ টন ইলিশ আহরণের সুযোগ রয়েছে। গবেষকদের ধারণা, প্রতিবছর যে হারে ইলিশ আহরণ বাড়ছে তাতে করে আরও প্রায় ৭-১০ বছর লাগবে ৭ লাখ টন ইলিশ আহরণে।
গবেষকরা বলছেন, ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধিতে নানা ধরনের গবেষণা এবং পদক্ষেপ গ্রহণ করছে সরকার। যে কারণে ধারাবাহিকভাবেই বাড়ছে ইলিশ আহরণের পরিমাণ।
মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে ইলিশ আহরণ করা হয়েছে ৫.৬৫ লাখ টন। যা ছিল এ যাবতকালের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ইলিশের উৎপাদন ছিল ৫.৫০ লাখ টন, ২০১৮-১৯ এ ছিল ৫.৩৩ লাখ টন, ২০১৭-১৮ সালে ছিল ৫.১৭ টন, ২০১৬-১৭ সালে ছিল ৪.৯৬ লাখ টন।
অন্যদিকে প্রতি বছরই সরকারের বিভিন্ন অভিযানে বিপুল পরিমাণে জাটকা আটক হয়। সংশ্লিষ্টরা বলছে, যেটুকু আটক হয় তা খুবই সামান্য। এর কয়েকগুণ বেশি জাটকা ধরা হয়। সবশেষ ২০২০-২১ অর্থবছরে জাটকা ধরা পড়েছে ৪৮৪.৪২ মে. টন। যা ২০১৭-১৮ সালে ছিল ২৫০ মে. টন।
মৎস্য অধিদপ্তর ও গবেষকদের তথ্য বলছে, ৩০০ টাকা কেজি হিসেবে ইলিশের বর্তমান বাজার ১৬ হাজার কোটি টাকার বেশি। বাংলাদেশে মাছের যোগানের মধ্যে ১১ শতাংশ আসে ইলিশ থেকে। আকার অনুযায়ী প্রতি কেজি ইলিশ বিক্রি হয় ৩৫০ টাকা থেকে ১৩০০ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া বৈশ্বিক ইলিশের যোগানের মোট ৮৬ শতাংশই আসে বাংলাদেশ থেকে।
ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধিতে সরকারের উদ্যোগ
মৎস্য অধিদপ্তর বলছে, বাংলাদেশের বিভিন্ন নদ-নদী ও উপকূলীয় এলাকায় সারা বছরই জাটকা পাওয়া যায়। জাটকা ধরার প্রধান মৌসুম জানুয়ারী থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত, তবে কোন কোন বছর এটা মে মাস পর্যন্তও বিস্তৃত হয়।
ব্যাপক পরিমাণ জাটকা ধরার ফলে ইলিশ মাছের পুনঃসংযোগ প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। ফলে ইলিশের বাড়তি উৎপাদন পাওয়া যায় না।
সরকার প্রজনন মৌসুম উপলক্ষে ইলিশের অভয়াশ্রম ঘোষণা করেছে। এসব এলাকায় যাতে ইলিশ মাছ নিরাপদে ডিম ছাড়তে পারে। একটা ইলিশ মাছ ২৩-২৪ লাখ ডিম ছাড়ে।
এছাড়া সরকার জাটকা নিধনে প্রতি বছর বিভিন্ন কর্মসূচী বাস্তবায়ন করে থাকে। যারা জাটকা আহরণ করে তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনা হয়, অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন সময় জাটকা ধরার জাল জব্দ করা হয়। এছাড়া প্রতিবছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে ইলিশের আহরণ নিষিদ্ধ করা হয়।
ইলিশ আহরণের মাধ্যমে যেসব মৎসজীবীরা তাদের সংসারের ব্যয় নির্বাহ করে তাদেরকে সরকার ইলিশ ধরা নিষিদ্ধের সময় খাদ্য সহায়তা দিয়ে থাকে।