অনিচ্ছাকৃতভাবে ভ্যাট না দিলে জরিমানা হবে না
ধরুন "এ" নামক একটি কোম্পানি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) জমা দেয়া রিটার্নের সঙ্গে মূল্য সংযোজন করযোগ্য সব পণ্যের হিসাব মিলিয়ে বছরে শত কোটি টাকার বেশি ভ্যাট পরিশোধ করে। তাই কোম্পানিটিকে নিয়মিত করদাতা হিসেবে ধরা হয়।
কয়েক বছর পর বিশেষ অডিটে কোম্পানিটির উৎপাদনে ব্যবহৃত থার্মোসেটিং প্লাস্টিক কাঁচামাল: ইপিপিইউ-তে (EP PU) উপকরণ কর না দেয়ার অভিযোগ তুলে এনবিআর। এতে কোম্পানিটির বিরুদ্ধে সর্বশেষ পাঁচ বছরে ২০ কোটি টাকার ভ্যাট এবং এর বিপরীতে ২০০ শতাংশ জরিমানা ৪০ কোটি টাকাসহ মোট ৬০ কোটি টাকার দাবিনামাও জারি করেন ভ্যাট কর্মকর্তারা। কিন্তু কোম্পানির কর্মকর্তারা জানতেনই না যে ইপিপিইউতে উপকরণ কর দিতে হবে।
উপকরণ কর সম্পর্কে জানা থাকলে বছরে যেখানে অতিরিক্ত ৪ কোটি টাকার ভ্যাট দিতে হতো। সেখানে ৫ বছর পর জরিমানসহ কোম্পানিটিকে ঠিক ১৫ গুণ বেশি টাকা গুণতে হয়, যা কোম্পানির জন্য বিশাল বোঝা। এ ধরনের বিপাকে পড়ে আদালতে ঘুরতে হয় অনেক কোম্পানিকে।
২০২২-২৩ অর্থবছর থেকে কোম্পানির অজ্ঞাতসারে এমন ভুলবশত কর না দেয়ার ঘটনায় জরিমানা করার বিধান থেকে সরে আসছে এনবিআর। আগামী অর্থবছর ভুলবশত কর না দেয়া, আইনের ভুল ব্যাখ্যার কারণে কর না দেয়া এবং ভুল করে রেয়াত নিলে তার বিপরীতে জরিমানা না করতে ভ্যাট কমিশনারেটগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে সংস্থাটি। ৯ জুন প্রস্তাবিত বাজেটের অর্থবিলের ব্যাখ্যায় এমনটি জানিয়েছে সংস্থাটি।
এছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠান সাময়িকভাবে বন্ধ থাকার পর পুনরায় চালু হলে মধ্যবর্তী সময়ের জন্য জরিমানা না করা এবং ভুল করে কর পরিশোধ করলে তা রিফান্ড দেয়ার কথা বলেছে সংস্থাটি।
এনবিআরের ভ্যাট নীতির সাথে সংশ্লিষ্ট একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, নির্ধারিত কিছু খাত ছাড়া কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে তার পণ্য উৎপাদনে বা সেবায় ব্যবহৃত কাঁচামাল, মোড়ক সামগ্রী, সেবা, জ্বালানি হিসাবে ব্যবহৃত যে কোন পদার্থ, যন্ত্রপাতি এবং যন্ত্রাংশে উপকরণ কর দিতে হয়।
"এসব উপকরণ কেনার ওপর ভ্যাট না দিলে তাতে জরিমানা ও সুদ আদায় করার বিধাণ রয়েছে। তবে অনিচ্ছাকৃতভাবে কেউ না দিলে তার স্পষ্ট ব্যাখ্যা ছিল না। ভ্যাট আইন সহজতর করার লক্ষ্যে আগামী অর্থবছর থেকে এ ক্ষেত্রে ছাড় দেয়া হয়েছে।"
কর কমিশনারদের কাছে পাঠানো নির্দেশনায় এনবিআর বলেছে, কোনো ব্যক্তি ভুলবশত বা ভুল ব্যাখ্যার কারণে কর পরিশোধ না করলে বা কর অনাদায়ী থাকলে বা কর রেয়াত নিলে এবং ওই কর পরবর্তীতে সুদসহ পরিশোধ করলে উক্ত ক্ষেত্রে ভ্যাট দাতার ওপর জরিমানা করা যাবে না।
জরিমানার ক্ষেত্রে আরেকটি বড় পরিবর্তন এনেছে এনবিআর। যেমন কোনো প্রতিষ্ঠান সাময়িকভাবে বন্ধ হলো এবং পরবর্তীতে চালুও হলো- কিন্তু মধ্যবর্তী সময়ে আর রিটার্ন দিল না, এমনকী কোনো ট্যাক্স কমপ্লায়েন্স পরিপালন করলো না। তবুও সে প্রতিষ্ঠানের মধ্যবর্তী সময়ের জন্য কোনো জরিমানা করবেন না ভ্যাট কর্মকর্তারা।
যদিও নিয়মিত অডিটে সাধারণত পাঁচ বছরের আর্থিক প্রতিবেদন প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে, পাঁচ বছরের টার্নওভার হিসাবে গণ্য করে এবং ভ্যাট আরোপ করা হয়। নতুন নিয়মে পাঁচ বছরের মধ্যবর্তী সময়ে কারো উৎপাদন বন্ধ থাকলে তা মূল্যায়ন (কর নিরূপণ) থেকে বাদ যাবে।
এছাড়া কোনো অনিবন্ধিত ব্যক্তি ভুলবশত এনবিআরের অফিসে ভ্যাট পরিশোধ করলে, তার সেই ভ্যাট রিফান্ড পাওয়ার সুযোগ নেই বর্তমান আইনে। আসন্ন নয়া অর্থবছরে এ ধরণের করদাতাকেও ছাড় দিচ্ছে এনবিআর।
চার্টার্ড অ্যাকাউটেন্টস- স্নেহাশীষ মাহমুদ অ্যান্ড কোং- এর অংশীদার স্নেহাশীষ বড়ুয়া বলেন, "এ ধরণের জরিমানা থেকে রেহাই দেয়ায় কোম্পানিগুলোর আইন পরিপালনের হার বাড়বে। ব্যবসা অনেক সহজ হবে। আদালতে মামলা জট কমবে। ভ্যাট ফাঁকিও কমবে।"