অবশেষে মুক্তি পেলেন হুয়াওয়ে কর্মকর্তা মেং
প্রতারণার অভিযোগে কানাডায় আটক চীনা প্রযুক্তি নির্বাহী সম্প্রতি প্রসিকিউটরদের সঙ্গে এক চুক্তির পর নিজ দেশের উদ্দেশ্যে কানাডা ছেড়েছেন। দীর্ঘ তিন বছরের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পর ভাগ্য ফিরেছে মেং ওয়াংঝুর।
২০১৮ সালে ডিসেম্বরে, যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধে হুয়াওয়ের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা মেং ওয়াংঝুকে জালিয়াতির অভিযোগে কঠোর নজরদারিতে রেখেছিল কানাডার পুলিশ। এই তিন বছর কানাডার ভ্যাঙ্কুভারে নিজের বাড়িতে গৃহবন্দী ছিলেন তিনি।
মেং-এর বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আনা অভিযোগ ও মামলার ফলে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রায় তলানীতে গিয়ে ঠেকে।
এতদিন পর কূটনৈতিক ঝামেলা মিটিয়ে মুক্ত হয়ে মেং গণমাধ্যমকে নিজের অনুভূতির কথা ব্যক্ত করেছেন।
তিনি বলেন, "আমার জীবন সম্পূর্ণ এলোমেলো হয়ে গেছে। এটি আমার জন্য খুব কঠিন একটি সময় ছিল।"
সারা বিশ্বের মানুষের কাছ থেকে পাওয়া শুভেচ্ছা ও ভালোবাসার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি আরও বলেন, "প্রতিটি আঁধারের পরেই আছে আলো।"
এর কিছুক্ষণ পরেই তিনি চীনের শেনজেন শহরের উদ্দেশ্যে চায়না এয়ারের একটি ফ্লাইটে যাত্রা শুরু করেন। মার্কিন ও চীনা কূটনীতিকদের মধ্যে এক সমাঝোতামূলক আলোচনার মাধ্যমে মুক্তি পেয়েছেন মেং।
যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেওয়া নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করে, স্কাইকম নামের এক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ইরানের টেলিকম কোম্পানির সঙ্গে ব্যবসা করছে হুয়াওয়ে।
অভিযোগ আছে, স্কাইকম নামক সেই কোম্পানির সঙ্গে হুয়াওয়ের সম্পর্কের ব্যাপারে এইচএসবিসি ব্যাংককে বিভ্রান্তমূলক তথ্যও দিয়েছিলেন মেং। মূলত এই অভিযোগের প্রেক্ষিতেই তাকে এতদিন কঠোর নজরদারিতে রেখেছিল কানাডার পুলিশ।
শুক্রবার মার্কিন বিচার বিভাগ (ডিওজে) জানিয়েছে, ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেং এর বিরুদ্ধে এই মামলাকে স্থগিত করা হয়েছে। এবং যদি তিনি আদালতের শর্ত মেনে চলেন, তবে মামলাটি ধীরে ধীরে প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে।
শুক্রবার, কানাডিয়ান প্রসিকিউটররা ভ্যাঙ্কুভারের একটি আদালতকে বলেছেন, তারা মেং-এর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণের প্রচেষ্টা প্রত্যাহার করছে এবং তাকে নজরদারি বা আটক অবস্থা থেকে মুক্তি দেওয়া উচিত।
আদালতে হাজির হওয়ার আগে, মেংকে চীনা কনস্যুলার কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভবনে প্রবেশ করতে দেখা যায়। এরপরই বিচারক তাকে মুক্তির নির্দেশ দেন।
তবে চুক্তির অংশ হিসেবে, মেং একটি 'সত্য বিবৃতি' তে স্বীকার করেছেন; তিনি জেনেশুনে এইচএসবিসি ব্যাংককে মিথ্যা তথ্য দিয়েছিলেন।
ডিওজে বলেছে, "একটি বৈশ্বিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে প্রতারিত করার পরিকল্পনায় মেং তার প্রধান ভূমিকার কথা স্বীকার করেছেন"।
এছাড়া, ডিওজে আরও জানিয়েছে, হুয়াওয়ের বিরুদ্ধে বিচারের প্রস্তুতি অব্যাহত রাখা হবে।
চীনা ধনকুবের রেন ঝেংফেই ১৯৮৭ সালে বিশ্বের বৃহত্তম টেলিকম সরঞ্জাম প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ে প্রতিষ্ঠা করেন। আর মেং হলেন রেন ঝেংফেইয়েরই বড় মেয়ে, যিনি কোম্পানির অর্থনৈতিক প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
১৯৮৩ সাল পর্যন্ত টানা নয় বছর চীনা সেনাবাহিনীতে দায়িত্ব পালন করার পর চীনা কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন রেন ঝেংফেই; সদস্যপদও লাভ করেন।
ঝেংফেইয়ের কোম্পানি হুয়াওয়ের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ রয়েছে, চীনা কর্তৃপক্ষ গুপ্তচরবৃত্তির জন্য এই প্রতিষ্ঠানের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে থাকে। তবে, এমন অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছে প্রতিষ্ঠানটি।
২০১৯ সালে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হুয়াওয়ের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে প্রতিষ্ঠানটিকে কালো তালিকাভুক্ত করেছিল।
হুয়াওয়ের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখনো তার অভিযোগ অব্যাহত রেখেছে এবং কোম্পানিটি এখনও বাণিজ্যিভাবে মার্কিন কালো তালিকার অন্তর্ভুক্ত।
চীনা প্রযুক্তি খাতের বিশ্লেষক রুই মা বিবিসিকে বলেন, অনেক চীনা কোম্পানি আশাবাদী যে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মেং-এর এই সমঝোতা চুক্তির ফলে চীনা-মার্কিন সম্পর্ক আর অবনতির দিকে যাবে না; তব এক্ষেত্রে কোনো কিছুই নিশ্চিতভাবে বলা যায়না, বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
- সূত্র- বিবিসি