আফগান নারীদের জোর করে বিয়ে করছে তালেবানরা, হত্যা করছে নিরস্ত্র বেসামরিক নাগরিকদের
দুই দশক পর ফের আফগানিস্তানের দখল নিচ্ছে তালেবান গোষ্ঠী। তাদের ভয়ে সীমান্ত পেরিয়ে পালাচ্ছে বহু আফগান, অনেকে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটছে রাজধানী কাবুলের দিকে।
এ পরিস্থিতিতে সাধারণ আফগান ও সরকারি কর্মকর্তাদের আশ্বস্ত করে তালেবান নেতারা বলছেন, কারও কোনো ভয় নেই, তালেবান কারও ওপর অত্যাচার চালাবে না। কিন্তু কাবুলে পালিয়ে আসা এবং তালেবান-নিয়ন্ত্রিত এলাকায় আটকা পড়া আফগানরা জানাচ্ছেন, তারা নিজ চোখে দেখেছেন নিরীহ নিরস্ত্র বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা করছে তালেবানরা।
এছাড়াও তালেবান নেতারা তাদের দখলকৃত এলাকার অবিবাহিত নারীদেরকে তালেবান সদস্যদের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন স্থানীয় নেতাদের।
কাবুলের মার্কিন দূতাবাস জানিয়েছে, আত্মসমর্পণ করা আফগান সেনাদের তালেবানরা হত্যা করছে বলে খবর পাওয়া গেছে। অবশ্য তালেবানের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এছাড়াও তালেবানের সদস্যদের সঙ্গে আফগান নারীদের জোর করে বিয়ে দেওয়ার অভিযোগও মিথ্যে বলে দাবি করেন তিনি।
কাবুলে পালিয়ে আসা আফগানদের মধ্যে ছিলেন আহত ওয়াজির নাজারি নামে এক নারী। তিনি দেশটির সংখ্যালঘু হাজারা সম্প্রদায়ের সদস্য। নাজারির বাবা আব্দুল রেজাক রেজাই জানান, জুলাইয়ের শুরুর দিকে তার মেয়ের মাথায় গুলি করে এক তালেবান সদস্য।
রেজাই বলেন, তাদের গ্রাম মালিস্তানের ঘরে ঘরে গিয়ে মানুষকে গুলি করে মেরেছে তালেবানরা। মালিস্তান হাজারা অধ্যুষিত গ্রাম। হাজারা সম্প্রদায় শিয়া মুসলিম। সুন্নি তালেবানরা হাজারাদের ঘৃণা করে। ১৯৯০-এর দশকে তালেবানরা আফগানিস্তানের শাসনক্ষমতার দখল নিতে চেষ্টা করলে হাজারা সম্প্রদায় তাদের বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। যদিও সেই প্রতিরোধ সফল হয়নি। ক্ষমতায় আসার পর তালেবানরা নির্বিচারে হাজারাদের হত্যা করেছে।
রেজাই বলেন, 'আমার মেয়েকে এই অবস্থায় বাঁচিয়ে রাখার চেয়ে ও তখন মরে গেলেই ভালো হতো।'
মালিস্তানে হামলার পরপরই পাশের গ্রাম পায়ি জুলগায় যায় তালেবানরা। গ্রামটির নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা তখন তালেবান নেতার সঙ্গে দেখা করতে যান। ওই তালেবান নেতা তাদের আশ্বস্ত করেন যে শিয়া অধ্যুষিত গ্রামটিতে তালেবানরা কোনো গোলমাল করবে না। কিন্তু কয়েকদিন পর সরকারি বাহিনী জেলায় পাল্টা আক্রমণ করলে তালেবানরা বেসামরিক হাজারাদের হত্যা করতে আরম্ভ করে।
এরপর মালিস্তানের প্রায় ২ হাজার ২০০ হাজারা কাবুলে পালিয়ে আসে।
আফগানিস্তান ইন্ডিপেন্ডেন্ট হিউম্যান রাইটস কমিশন জানিয়েছে, মালিস্তানে অন্তত ২৭ জন বেসামরিক নাগরিক তালেবানদের হাতে প্রাণ হারিয়েছেন। গুরুতর আহত হয়েছে ২০ জন।
তবে তালেবানের মুখপাত্র মুজাহিদ দাবি করেছেন, মালিস্তানে কোনো বেসামরিকের ওপর কোনো ধরনের নিপীড়ন চালানো হয়নি।
স্থানীয় জনগণ জানিয়েছে, নিমরোজে সরকারি বাহিনীকে হারানোর পর বন্দি করা এক ডজন সৈন্যকে হত্যা করেছে তালেবানরা। এক বন্দির চোখ উপড়ে নেওয়া হয়, আরেকজনের কান কেটে নেওয়া হয়।
জানা গেছে, দখলকৃত নতুন এলাকাগুলোতে নারীদের চলাচলের ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে তালেবান। নারীদেরকে পুরুষ আত্মীয় ছাড়া একাকী বাইরে বের হতে দেওয়া হচ্ছে না। আর বাইরে বের হওয়ার সময় নারীদের বোরখা পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
বাদাখশান থেকে পালিয়ে আসা এক লোক জানিয়েছেন, তার গ্রামে মেয়েদেরকে পুরুষ সঙ্গী ছাড়া বাইরে বের হতে দেওয়া হচ্ছে না। পুরুষদের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে পড়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যে পরিবারে একাধিক পুরুষ আছে, সে পরিবার থেকে বাধ্যতামূলকভাবে একজন পুরুষকে তালেবানে যোগ দিতে হচ্ছে।
জুনের শেষ দিকে তাখার প্রদেশের রুস্তাক জেলার দখল নেওয়ার পর এক স্থানীয় প্রভাবশালী তালেবান সদস্য এক শুক্রবারে এলাকার সব পরিবারকে মসজিদে ডাকেন। সেখানে তিনি বলেন, ১৫ বছরের বেশি এবং ৪০ বছরের কম বয়সি অবিবাহিত ও বিধবা নারীদেরকে তালেবানের সদস্যদের সঙ্গে বিয়ে দিতে হবে।
সেখানকার এক ব্যক্তি দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে ফোনে জানান, তার ১৫ বছর বয়সি মেয়েকে তালেবানের হাতে তুলে দিতে আদেশ দেওয়া হয়েছে। ওই আদেশ পাওয়া পর তিনি ওই এলাকা থেকে পালিয়ে যান।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রকাশ্যে এভাবে তাদের সদস্যদের জন্য নারী চাওয়া থেকেই বোঝা যায়, তালেবান এখন আগের চেয়েও অনেক বেশি উগ্রবাদীতে পরিণত হয়েছে।
- সূত্র: দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল