এই করোনার সময়েও অর্থনীতিতে উজ্জ্বল ভিয়েতনাম
একের পর এক বিস্ময় সৃষ্টি করছে ভিয়েতনাম। অর্থনীতিকেও অনেকটাই সুরক্ষিত রেখেছে মহামারির প্রভাব থেকে। ফলে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধির পথেই থাকছে দেশটির অর্থনীতি।
সাম্প্রতিক পূর্বাভাস সংশোধনীতে ভিয়েতনাম সম্পর্কে এমন কথাই জানিয়েছে ওয়াশিংটন ভিত্তিক দাতাগোষ্ঠী আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল- আইএমএফ।
চলতি বছর ভিয়েতনামের অর্থনীতি ২.৪% বাড়বে। জনস্বাস্থ্যে সুরক্ষায় নেওয়া কার্যকর পদক্ষেপ এবং অর্থনীতিকে পতনের হাত থেকে রক্ষা করাকে- আইএমএফ দেশটির সফলতা বলে প্রশংসা করেছে।
পুরো বিশ্বের মধ্যেই ভিয়েতনামের মহামারি নিয়ন্ত্রণের সাফল্য ছিল অগ্রগণ্য। ভাইরাসের প্রথম প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়া চীনের সঙ্গে সীমান্ত থাকা সত্ত্বেও দেশটিতে এপর্যন্ত মাত্র ১২৮৮ জন সংক্রমিত হয়েছেন। আর মারা গেছেন ৩৫ জন।
একারণে, ২০২১ সালে দেশটির অর্থনৈতিক বিকাশ আরও গতিশীল হওয়ার আভাস দেয় আইএমএফ। সংস্থাটির মতে, 'স্থানীয় এবং রপ্তানি বাজারগুলোয় অর্থনীতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসায়' সাড়ে ৬ শতাংশের উচ্চ-প্রবৃদ্ধি হবে ভিয়েতনামের।
ধনী দেশগুলোর মতো ভিয়েতনামের স্বাস্থ্যখাতের উন্নত অবকাঠামো নেই, তারপরও দেশটি ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়া মাত্র তা প্রতিবার নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। দ্রুত টেস্টিং কিট তৈরির পাশাপাশি সংক্রমণ ঝুঁকি বেশি এমন অঞ্চলে সঠিক ফলাফলের জন্য বৃদ্ধি করা হয় পিসিআর টেস্টের সংখ্যা। কৌশলগত এমন পদক্ষেপ-ই হয়ে ওঠে ভিয়েতনামে জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থায় মহামারির বিরুদ্ধে রক্ষাকবচ।
তারপরও অবশ্য- দেশটির প্রবৃদ্ধি চলতি বছর গতি হারায়। বিশেষ করে, পর্যটন খাতে আসে বড় ধরনের আঘাত। তবুও, মহামারির কারণে এখাতে সবচেয়ে বাজে যে অবস্থা তৈরি হতে পারতো- তা এড়ানো গেছে।
ঘরে থেকে কাজ করা হয়েছে ভিয়েতনামের আশীর্বাদ:
ভিয়েতনামভিত্তিক বিনিয়োগ কোম্পানি ভিনাক্যাপিটালের প্রধান অর্থনীতিবিদ মাইকেল কোকালারি'র মতে একাধিক কারণে মহামারির শক্ত আঘাত থেকে দেশটির অর্থনীতি রক্ষা পেয়েছে।
এর মধ্যে অন্যতম হলো; বিশ্বব্যাপী ঘরে থেকে দপ্তরের কাজ করা কর্মীর সংখ্যা বিপুল হারে বেড়ে যাওয়া।
তিনি বিবিসি'কে বলেন, ''কেউ হয়তো ঘরে থেকে কাজ করার জন্য নতুন ল্যাপটপ কিনেছেন, কেউ কিনেছেন নতুন চেয়ার ও টেবিলের মতো আসবাবপত্র। আর এসব পণ্যের একটা বড় অংশ ভিয়েতনামেই তৈরি হয়।''
একারণে মহামারির মধ্যেও বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্রে চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে ভিয়েতনামের রপ্তানি ২৩ % বৃদ্ধি পায়, ২০১৯ সালের একই সময়ের তুলনায়। শুধু ইলেকট্রিনিক্স জাতীয় পণ্যেরই রপ্তানি বাড়ে ২৬ শতাংশ।
বাণিজ্যযুদ্ধের প্রকৃত জয়ী:
কয়েক দশক ধরে অর্থনীতি ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত থাকার পর যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয় বাণিজ্যযুদ্ধের জেরে। এই বিচ্ছেদ উভয় দেশের কারো জন্যেই খুব একটা ইতিবাচক হয়নি। কিন্তু, প্রকৃত লাভবান হয়েছে ভিয়েতনাম।
বাণিজ্যযুদ্ধের ছায়ায় ভিয়েতনামে অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের উৎপাদন কেন্দ্র সরিয়ে আনে। চীনা পণ্যে যুক্তরাষ্ট্র আরোপিত বাড়তি শুল্ক এড়াতেই এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ে। ফলে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতেও যোগ হয় নতুন গতি।
অ্যাপল ও স্যামসাংয়ের মতো অনেক খ্যাতনামা বহুজাতিক কোম্পানিও চীন ছেড়ে ভিয়েতনাম থেকে কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করেছে।
অ্যাপল এখন ভিয়েতনামে তার সর্বাধুনিক এয়ারপড স্টুডিও এয়ারফোন উৎপাদনের পরিকল্পনা করছে। কোকালারি জানান, মহামারিও অনেক কোম্পানিকে ভিয়েতনামে উৎপাদন ব্যবস্থা সরিয়ে আনতে তৎপর করেছে। সরবরাহ চক্রে বৈচিত্র্য আনতেই তারা দ্রুত সেদেশে কারখানা স্থাপন করে।
''মহামারি প্রথম হানা দেয় চীনে। সবাই ভেবেছিল একটি দেশের এমন অবস্থা বৈশ্বিক সরবরাহ চক্রে প্রভাব পড়বে না। কিন্তু, তা ছিল ভুল। সবাই দেখলো বিশ্বের প্রধান সরবরাহ চক্র একটাই, সেটা হচ্ছে চীন। তাই সেখানে মহামারি যখন চলছিল তখন নিরবিচ্ছিন্ন উৎপাদন করা সম্ভব হয়নি। এঘটনা অনেক প্রতিষ্ঠানের চীন নির্ভর মানসিকতার কেন্দ্রে আঘাত করে। বিষয়টির গুরুত্ব বুঝতে পেরেই তারা ভিয়েতনামে কারখানা সরিয়ে আনে।''
- সূত্র: বিবিসি