এবারের তালেবান অন্যরকম হতে পারে: ব্রিটিশ সেনাপ্রধান
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত তালেবানকে নতুন সরকার গঠনের সময় ছাড় দেওয়া, এরফলে হয়তো দেখা যাবে পশ্চিমা দুনিয়া কয়েক দশক ধরে যাদের জঙ্গি বলে ধারণা করতো- তারা অনেক যুক্তিনির্ভর ও বাস্তববাদী হয়ে উঠেছে। এমন মন্তব্য করেছেন খোদ ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল স্যার নিক কার্টার।
আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র হিসেবে ছিল যুক্তরাজ্যও। তালেবানের শক্ত ঘাঁটি হেলমান্দ প্রদেশে লড়েছে ব্রিটিশ সেনারা। তারপরও প্রাক্তন শত্রুদের সম্পর্কে এভাবেই মন্তব্য করলেন ব্রিটিশ সমর অধিনায়ক।
এর আগে গত (১৮ আগস্ট) রাতে কাবুলে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে তালেবানের প্রধান মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ জানিয়েছেন, এখন থেকে তালেবানের নেতারা জনসম্মুখেই থাকবেন। ২০ বছর আগে তালেবান যখন প্রথম ক্ষমতা দখল করেছিল, তখন কট্টর গোষ্ঠীটির শীর্ষ নেতারা লোকচক্ষুর আড়ালে সঙ্গোপনে থাকতেন। সেই ধারা ভেঙ্গে ফেলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মুখপাত্র।
স্যার কার্টার জানান, সাবেক প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইয়ের সঙ্গে তাঁর কথাও হয়েছে, কারজাই আজ বুধবার (১৮ আগস্ট) দিনে তালেবান নেতাদের সাথে দেখা করবেন।
তালেবানের সঙ্গে আলোচনা ও সশস্ত্র দলটির সরকার গঠনের বাস্তবতায় স্যার নিক বিবিসি'র কাছে মন্তব্য করেন, "আমাদের ধৈর্যধারণ করতে হবে, মুষড়ে পড়লে চলবে না এবং তারা যাতে নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারে- সেজন্য তালেবানকে নতুন সরকার গঠনের ছাড়টাও আমাদের দিতে হবে।"
তিনি আরও বলেন, "১৯৯০ এর দশকের যে তালেবানকে মানুষ জানতো, যার কথা শুনে ভয়ে শিউরে উঠত- সম্ভবত সেই তালেবান আর এই তালেবান এক নয়।"
"তাদের ছাড় দিলে আমরা হয়তো আরও দেখতে পারব, এই তালেবান অনেক বেশি যুক্তিবাদী। তবে তার সঙ্গে এটাও মনে রাখতে হবে; এটি একক কোনো সংগঠন নয়, বরং তালেবান এমন একটি গোষ্ঠী যার নেতারা সমগ্র আফগানিস্তানের গ্রামীণ এলাকার প্রতিনিধিত্ব করেন। এতে আছেন বিভিন্ন গোত্রের স্থানীয় নেতা, যারা মূল আন্দোলনকে সমর্থন দিচ্ছেন।"
এর মাধ্যমে তালেবানের শীর্ষ নেতৃত্ব যুক্তিপূর্ণ সংলাপ ও আপোষে রাজি হলেও, তৃণমূল পর্যায়ের নেতারা তা নাও শুনতে পারেন বলে ইঙ্গিত দিলেন ব্রিটিশ সেনানায়ক।
কার্টার আরো বলেছেন, 'পশতুনওয়ালি' সংস্কৃতি ও আইনি ব্যবস্থায় বিশ্বাসী তালেবান আসলে গ্রামীণ একটি গোষ্ঠী। শহুরে জীবনযাত্রা ও পশ্চিমা ধ্যানধারণা নিয়ে তাদের আগ্রহ খুব কম।
"তারা আগের মতো দমনপীড়নও করছে না। বর্তমানে তারা যেভাবে কাবুল শাসন করছে, সেদিকে নজর দিলেই কিছুটা আভাস পাওয়া যায় যে তারা যুক্তির সাথে আপোষ করতে শিখছে।"
তবে আফগানিস্তানে যুদ্ধ করেছেন এমন কয়েক জন ব্রিটিশ সেনা কর্মকর্তা তাদের সর্বাধিনায়কের সঙ্গে একমত নন।
একসময় আফগান যুদ্ধে দায়িত্ব পালনকারী ও ন্যাটো জোটের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা মেজর জেনারেল চার্লি হারবার্ট স্কাই নিউজকে বলেন, "তালেবানের মিষ্টি কথায় ভুলে যাওয়া উচিত হবে না। তাঁরা এখন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি চায়। যদিও তাঁরা গায়ের জোরে ক্ষমতা দখল করেছে, তবুও তাঁরা বিশ্ব সম্প্রদায়ের অনুমোদন পাওয়ার চেষ্টা করছে। এজন্য চীন, রাশিয়া থেকে শুরু করে পশ্চিমা দুনিয়ার কাছেও ধর্না দিচ্ছে। এজন্যই তারা নারীকে সম-অধিকার দেওয়ার মতো ছেলেভুলানো আশ্বাস দিচ্ছে।"
তালেবান উদার হয়েছে এমন কোন প্রমাণ নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
"তারা এখন সঠিক সময়ের অপেক্ষা করছে। আমরা (বিদেশী সেনারা) কাবুল ছাড়লেই তারা রক্তের স্রোত বইয়ে দেবে। তখন সেখানে কোন সাংবাদিক বা বিদেশী নাগরিক না থাকায় সে হত্যাকাণ্ডের খবর বহির্বিশ্ব জানতেও পারবে না," আশঙ্কা এ মেজর জেনারেলের।
- সূত্র: রয়টার্স