করোনাভাইরাস নিয়ে স্বচ্ছ তদন্তের দাবি ১০০ দেশের
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এক সময় চীনা রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং'কে একজন 'নিঃসঙ্গ লড়াকু যোদ্ধা' বলে অভিহিত করেছিলেন। কথাটি পুতিন সে সময় মজা করেই বলেছিলেন। কিন্তু সাম্প্রতিক বাস্তবতায় এই উক্তি আরও বাস্তবে পরিণত হওয়ার দিকেই এগিয়ে চলেছে।
কারণ আজ থেকে শুরু হওয়া বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সম্মেলনে, কোভিড-১৯ সংক্রমণের বিস্তার নিয়ে এবার স্বতন্ত্র একটি আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবি উঠতে চলেছে। প্রায় ১০০টি দেশ এই দাবিতে সমর্থন জানিয়েছে। সম্প্রতি এসব দেশের কাতারে যোগ দিয়েছে আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনীতিতে চীনের ঘনিষ্ঠ মিত্র রাশিয়াও।
অস্ট্রেলিয়ার তৎপরতায় প্রথম এই দাবি সংক্রান্ত একটি খসরা প্রস্তাব তৈরি করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। চীন করোনাভাইরাসের মহামারি পরিস্থিতি প্রাথমিকভাবে কিভাবে সামলেছে তা তদন্ত করে দেখার উদ্দ্যেশ্যেই অস্ট্রেলিয়া ইইউ'তে প্রস্তাব তৈরির কূটনৈতিক তদ্বির শুরু করে।
এর ফলে দারুণ ক্ষুদ্ধ হয় বেজিং। ক্যানবেরার 'সম্পূর্ণ কাণ্ডজ্ঞানহীন' এই পদক্ষেপ চলমান মহামারি মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বিঘ্নিত হবে। এবং এটা বিশ্ববাসীর (ভাইরাস নির্মুলে) একক লক্ষ্যপূরণের বিরুদ্ধে এক ষড়যন্ত্র, বলে তীব্র নিন্দা জানায় চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। খবর সিএনএনের।
তবে চীনের নিন্দার পরেও ইইউ প্রস্তাব থেমে থাকেনি। আজ সোমবার থেকে জেনেভায় শুরু হওয়া এই সম্মেলনে- বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ১৯৪টি দেশের প্রতিনিধিরা ভার্চুয়াল কনফারেন্সের মাধ্যমে অংশ নেবেন। সম্মেলন চলার কথা আগামী ২২ মে পর্যন্ত। তবে আজই ইইউ সমর্থিত স্বতন্ত্র ও নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক তদন্তের প্রস্তাব উপস্থাপন করা হতে পারে সেখানে।
প্রস্তাবটিতে অবশ্য চীন বা কোনো দেশকে এককভাবে দায়ি করা হয়নি। কিন্তু কোভিড-১৯ সংক্রমণ মোকাবিলায় পুরো বিশ্বের সম্মিলিত স্বাস্থ্যগত পদক্ষেপ নিয়ে তদন্তের আহ্বান জানানো হয়েছে।
এতে অবশ্য বেজিংয়ের নির্ভার হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। মূলত, পশ্চিমা দুনিয়ার বাইরে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সমর্থন আদায়ের জন্যেই আলোচিত প্রস্তাবের ভাষা কিছুটা শিথিল করা হয়। রাশিয়ার মতো চীনের ঐতিহ্যবাহী ঘনিষ্ঠ মিত্রদের সমর্থন পেতে, যা ছিল অপরিহার্য।
চীন সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় বিপদ হলো; একটি স্বতন্ত্র তদন্তের আওতায় করোনা মহামারির প্রাথমিক সময়ে তাদের অনেক লুকোচুরির সংবাদ এর ফলে প্রকাশ হয়ে যেতে পারে। যা একইসঙ্গে, হবে আন্তর্জাতিকভাবে লজ্জা ও অসম্মানের।
ইইউ প্রস্তাবের উদ্যোক্তা- অস্ট্রেলিয়ার সরকারি সূত্রের বরাত দিয়ে দেশটির গণমাধ্যম এবিসি জানায়, প্রস্তাবে যে ভাষা বর্তমানে আছে তা একটি নিশ্চিত এবং স্বচ্ছ তদন্ত নিশ্চিত করার পক্ষে যথেষ্ট শক্তিশালী।
এদিকে বেজিং ইতোপূর্বে বলেছিল যে, শুধুমাত্র বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যদি কোন স্বতন্ত্র তদন্তের উদ্যোগ নেয়, তবে চীন সরকার তাকে সমর্থন করবে।
এর মাঝে অবশ্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) চীনের পক্ষপাতিত্ব করেছে এমন অভিযোগ তোলে যুক্তরাষ্ট্র। হু'র শীর্ষ কর্মকর্তারা অবশ্য বরাবরই এমন অভিযোগ অমূলক বলে দাবি করেছেন।
গত সপ্তাহে যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত লিউ জিয়াওমিং বলেন, 'আমরা উন্মুক্ত এবং স্বচ্ছ অবস্থান নিয়েছি। আমাদের লুকানোর বা ভয় পাওয়ার মতো কিছু নেই। আমরা একটি আন্তর্জাতিক ও স্বাধীন তদন্তের প্রক্রিয়াকে স্বাগত জানাতেও প্রস্তুত। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে স্বপ্রণোদিত হয়ে এই উদ্যোগ নিতে হবে। কোনো প্রকার চাপিয়ে দেওয়া তদন্ত মানতে আমরা বাধ্য নই।'
তবে ইইউ প্রস্তাবের পক্ষে সমর্থন দেওয়া দেশের সংখ্যা যেভাবে বাড়ছে, তাতে পরিস্থিতি চীনের জন্য নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। ইতোমধ্যেই বেজিং এই প্রস্তাব গ্রহণ করতে পারে, এমন কিছু ইঙ্গিতও পাওয়া গেছে।