করোনার প্রথম বড় ওষুধ রেমডেসিভির বিক্রিতে ভাটা
যুক্তরাষ্ট্রের গিলিয়াড সায়েন্সেস ইনকরপোরেশন উৎপাদিত রেমডেসিভির বিক্রির ব্যাপারে আশংকা প্রকাশ করেছেন বিনিয়োগকারীরা। করোনাভাইরাস চিকিৎসায় প্রথম স্বীকৃত ওষুধ রেমডেসিভির অনুমোদন পাওয়ার পর আশানুরূপ পরিমাণে বিক্রি হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রসহ উত্তর গোলার্ধের কিছু দেশে আসন্ন শীতকালে সংক্রমণের হার বৃদ্ধির আশংকা থাকায় দেশগুলোর সরকার ওষুধটি মজুদ করছে। তবে এক্ষেত্রেও কোভিড-১৯-এর অ্যান্টিবডি চিকিৎসার সঙ্গে ওষুধটির তুলনামূলক পরীক্ষা চালানো হচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, সংস্থাটির পরিচালিত গবেষণায় দেখা গেছে, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের হাসপাতালে অবস্থানের সময় কমানো বা মৃত্যুহার হ্রাসে রেমডেসিভির উল্লেখযোগ্য প্রভাব রাখেনি।
মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ওষুধটির জরুরি অনুমোদন দেওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত গিলিয়াড সায়েন্সেস ইনকরপোরেশনের শেয়ারের দর কমেছে ২২ শতাংশ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওই গবেষণাকে অবান্তর বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ওষুধটির প্রাথমিক চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছিল এবং মহামারির শুরুতে এটির আড়াই লক্ষ কোর্স অনুদান দেওয়া হয় বলে জানানো হয়।
রেফিনিটিভের তথ্যমতে, এ বছর ২.৫ বিলিয়ন কোর্স রেমডেসিভির বিক্রির ভবিষ্যদ্বাণী করেছে ওয়াল স্ট্রিট। তবে যুক্তরাষ্ট্রের হেলথ অ্যান্ড হিউম্যান সার্ভিসেস (এইচএএইচ) জানিয়েছে, ওষুধটির ৫ লক্ষ কোর্সের মাত্র ৩২ শতাংশ কিনেছে হাসপাতালগুলো। জুলাইয়ে ৭৪ মিলিয়ন ডলার মূল্যমানের ৩০ হাজার কোর্স কিনেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এছাড়াও আগামী ছয় মাসের জন্য আরও ৫ লক্ষ কোর্স ওষুধ কেনার চুক্তি করেছে।
গিলিয়াড সারাবিশ্বে ওষুধটির লাইসেন্স বিক্রি করলেও যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ থেকেই সর্বাধিক মুনাফা লাভ করে।
জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ওষুধের দামের জন্য রোগীরা চিকিৎসা পাচ্ছেন না- এমন নয়; বরংযুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাই জটিল।
ইসিজি ম্যানেজমেন্ট কনসালট্যান্টের বিশেষজ্ঞ রিচার্ড ট্রেমবোয়িক জানান, ফেডারেল স্বাস্থ্যনীতির কারণে খরচ সাপেক্ষে রোগীদের হাসপাতালে বেশিদিন না রাখার প্রবণতা তৈরি হয়েছে। ফলে স্বল্প সময়ে কাজ করে রোগীর হাসপাতালে অবস্থানের সময় কমাবে, এমন ওষুধের এই দামও অন্য ব্যবস্থার চেয়ে সাশ্রয়ী।
হাউসটন মেথোডিস্ট হাসপাতালের ফার্মাসিস্ট ক্যাথেরিন পেরেজ বলেন, 'ওষুধটির দাম তেমন বেশি নয়। আমরা আশা করছি হাসপাতালে ভর্তি হয়নি- এমন রোগীরাও শিগগিরই ওষুধটি কিনতে পারবেন। তবে মৃদু উপসর্গের ক্ষেত্রে এর প্রয়োজনীয়তা নেই।'
অবশ্য, ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন আগস্টে রেমডেসিভিরের জরুরি অনুমোদনের মেয়াদ বাড়িয়েছে; সেইসঙ্গে গুরুতর অবস্থা ছাড়াও এটি ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে।
ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতালের সংক্রামক রোগের চিকিৎসক ড. রাজেশ গান্ধী বলেন, 'আমি এটি কোনো বয়স্ক রোগী কিংবা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল- এমন রোগীর ক্ষেত্রে ব্যবহার করব; ৩০ বয়স বয়সী স্বাস্থ্যবান কারও জন্য নয়।'
গিলিয়াড সায়েন্সেস ইনকরপোরেশন ওষুধটি নিয়ে পরবর্তী পর্যায়ের গবেষণা চালাচ্ছে। মৃদু উপসর্গের রোগীদের জন্য নিঃশ্বাসের মাধ্যমে ওষুধটির ব্যবহার কার্যকর কি না, তার পরীক্ষাও চলছে।
- সূত্র: রয়টার্স