করোনা ভাইরাসে জনশূন্য বেইজিং
ভাইরাস প্রতিরোধে বাড়তি সতর্কতার কোনো কমতি নেই চীন সরকারের। উহান থেকে বহুদূরে অবস্থিত শহরগুলোতেও জারি করা হয়েছে চলাচলে কঠোর নিষেধাজ্ঞা ও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে জনসমাগমের অনেক জায়গা। দেশটির রাজধানী বেইজিংও এর আওতায় পড়েছে। শূন্য পার্ক, প্রায় খালি ট্রেনের কামরা এবং বাস, এর সঙ্গে আতঙ্ক মিলেমিশে চীনা নাগরিকদের সামাজিক মেলবন্ধনের সুতো ছিঁড়ছে। খবর নিউইয়র্ক টাইমসের।
স্বাভাবিক অবস্থায় অ্যাপল স্টোরগুলো হয়ে ওঠে বেইজিংয়ের অন্যতম ব্যস্ত জায়গা। ক্রেতাদের চাপে দম ফেলার সুযোগ পান না সেখানকার কর্মীরা। কিন্তু সেই চিত্র অনেকটাই বদলে গেছে। খোলা থাকলেও সেখানে যেসব ক্রেতা আসছেন, তাদের অ্যাপল ওয়াচ বা এয়ারপড পরে ট্রায়াল দেওয়ার সুযোগ দিচ্ছেন না কর্মীরা। ভাইরাস রোধেই এমন সতর্কতা।
অবশ্য সকলেই যে নতুন পণ্য কিনতে এসেছেন, এমন নয়। অনেকেই এসেছেন বাধ্য হয়ে। যেমন এক নারী এসেছেন তার ল্যাপটপ ঠিক করাতে। অন্যরা অবশ্য জনসমাগমের ভেতর কিছুক্ষণ থাকার উদ্দেশ্যেই জড়ো হয়েছেন। একমাত্র অ্যাপল স্টোরগুলোই নাগরিক সমাবেশের কেন্দ্র হিসেবে এখনও সচল আছে।
২ কোটি ৩০ লাখ অধিবাসীর শহরে এখন জাদুঘর, সিনেমা হল, মন্দির, নাপিতের দোকান, ক্যারোকে বার সবখানেই সরকারি নির্দেশে তালা ঝুলছে। তাই একান্ত প্রয়োজন ছাড়া খুব বেশি মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। ফলাফল মধ্য চীন থেকে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আগে যে শহরের রাস্তাগুলোতে প্রতি মুহূর্তে হাজার হাজার মানুষের চলাচল ছিল, সেগুলো এখন ফাঁকা প্রান্তরে রূপ নিয়েছে।
চীনের প্রাচীন ঐতিহ্যের অংশ বেজিংয়ে অবস্থিত চীন সম্রাটের প্রাসাদ ও এর আশেপাশের এলাকা। পুরোনো বেইজিংয়ের এই এলাকা নিষিদ্ধ শহর বা ফরবিডেন সিটি নামেই পরিচিত। প্রাচীনকালে সম্রাট ও তার পারিষদরা সেখানে থাকতেন বলে সাধারণ জনতার চলাচল ছিল নিয়ন্ত্রিত। এখন সেই দায়িত্ব পালন করছে করোনা ভাইরাস। এটিকে প্রতিরোধের চেষ্টা থেকেই পরবর্তী ঘোষণার আগ পর্যন্ত সম্রাটের প্রাসাদ এবং মহাপ্রাচীর এলাকায় পর্যটন বন্ধ রাখার কথা জানিয়েছে চীনা কতৃপক্ষ।
উহানের মতো চলাচলের ওপর শক্ত নিষেধাজ্ঞার ভেতর না থাকলেও ২৪ জানুয়ারি বেইজিংয়ে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় সর্বোচ্চ জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়। এই ঘোষণা মহানগরটির সকল শ্রেণি ও পেশার মানুষের দৈনন্দিন সামাজিক জীবনে যে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে, তা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।
সব দোকানের কাঁচের দেয়ালে লাগানো হয়েছে সরকারের দেওয়া বিশেষ স্টিকার। সেখানে সব ধরনের সতর্কতা মেনে চলার আহবান জানানো হয়েছে নাগরিকদের প্রতি। অনুরোধ করা হচ্ছে জনসমাগমের কেন্দ্রগুলো এড়িয়ে চলতেও। আর স্বাভাবিকভাবেই জনমানসে সতর্কতার প্রেক্ষিতে আতঙ্কের মাত্রা এখন অনেক বেশি।