কোভিড সংক্রমণের ভয়ে এভারেস্ট চূড়াতেও বিভাজন রেখা তৈরি করছে চীন
পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বত মাউন্ট এভারেস্ট- চীন ও নেপাল এ দুই দেশের সীমানায় অবস্থিত। পর্বতটিতে আরোহনের জন্য নেপালের দিকে রয়েছে একটি পথ, আবার চীন নিয়ন্ত্রিত তিব্বত থেকেও ওঠা যায়। সম্প্রতি নেপালে কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ মারাত্মক রূপ নিচ্ছে, শোনা যাচ্ছে দেশটির নানা স্থানে অভিযাত্রীদের উদ্ধারের কথাও, যাদের অনেকেই পরবর্তীতে কোভিড পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন। এই অবস্থায় এভারেস্টের চূড়ার নিজেদের অংশে 'বিভাজন রেখা' স্থাপন করবে চীন।
আজ রোববার (৯ মে) রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যম জানায়, নেপাল ও তিব্বতের দিক থেকে আরোহনকারীরা যেন পরস্পরের সঙ্গে মেলামেশা না করতে পারেন- সেজন্যই এ ব্যবস্থা।
এদিকে গত এপ্রিল থেকেই নেপালি অংশে এভারেস্টের বেজ ক্যাম্প করোনা সংক্রমণের কবলে পড়ে। কিন্তু, পর্যটন নির্ভর নেপাল সরকার রাজস্বের অভাবে এখনও বসন্ত মৌসুমের জন্য দেওয়া অভিযানের পারমিট বাতিল করেনি। মৌসুমি বৃষ্টিপাতের আগে এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত এই অনুমতি কার্যকর।
চীন সরকারের পরিকল্পনা সত্ত্বেও এভারেস্ট শৃঙ্গের মতো ক্ষুদ্র, বিপজ্জনক এবং প্রতিকূল আবহাওয়া বেষ্টিত স্থানে কীভাবে বিভাজন রেখা আরোপ করা হবে- সে সম্পর্কে পরিষ্কার করে জানানো হয়নি। শৃঙ্গের স্থানটি একটি ডাইনিং টেবিলের সমান।
রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা শিনহুয়া তিব্বতের স্পোর্টস ব্যুরোর প্রধানের বরাত দিয়ে বলছে, তিব্বতের শেরপারা শৃঙ্গে উঠে বিভাজন রেখা স্থাপন করবেন, ফলে চূড়ায় ওঠা দুই অংশের আরোহীদের মধ্যে যোগাযোগও বন্ধ হবে।
ইতোমধ্যেই তিব্বতি অংশ দিয়ে এভারেস্টে ওঠার পথে রয়েছেন ২১ জন চীনা নাগরিক। অনেক কষ্টে নিজ দেশে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনার পর তাই পর্বতারোহীদের মাধ্যমে তা পুনরায় ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি নিতে চাইছে না চীন।
চীনা নাগরিকরা চূড়ায় ওঠার আগেই তিব্বতি (পর্বতারোহী গাইড) শেরপারা তাদের আগে পৌঁছে বিভাজন রেখা স্থাপন করবে বলে জানিয়েছে শিনহুয়া। কিন্ত, সেই বিভাজন রেখা কেমন হবে, সে সম্পর্কেও কিছু বলা হয়নি।
তাছাড়া, তিব্বতি শেরপারা এই সীমানা তদারকি করবে কিনা বা 'ডেথ জোন' খ্যাত চূড়ায় অবস্থান করে বিভাজন রেখা হিসেবে ব্যবহৃত রশি ধরে থাকবে কিনা- সেটাও জানানো হয়নি। ইতঃপূর্বে অনেক অভিযাত্রী চূড়ায় অক্সিজেনের অভাবে মারা গেছেন, তাই শেরপাদের সেখানে দীর্ঘসময় অবস্থান করাটাও ঝুঁকিপূর্ণ।
৮,৮৪৮ মিটার উচ্চতার এভারেস্ট শৃঙ্গ খানিকটা বরফের চাদরে মোড়াই থাকে সারা বছর, সেখানে আছে শুধু গাইডসহ আধা ডজনের মানুষ একসঙ্গে দাঁড়ানোর মতো জায়গা।
গেল বছর করোনা মহামারি আঘাত হানার পর তিব্বতের দিক দিয়ে বিদেশি কোনো অভিযাত্রী দলকে আরোহনের অনুমতি দেয়নি চীন। এজন্য সংক্রমণের হুমকিকেই প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
পাশাপাশি তিব্বতে এভারেস্টের বেজ ক্যাম্প অঞ্চলেও পর্যটন নিষিদ্ধ।
গত ৮ মে নাগাদ চীনের মূল ভূখণ্ডে ১২টি নতুন সংক্রমণ রেকর্ড করা হয়। এদের প্রায় সকলেই ছিলেন বিদেশ থেকে আসা ভ্রমণকারী। তার আগের দিন সাতজন শনাক্ত হয়েছিল।
অন্যদিকে, নেপালে গত শুক্রবার নাগাদ ৯,০২৩ জন পজিটিভ শনাক্ত হন, যা দেশটির সর্বোচ্চ দৈনিক সংক্রমণের রেকর্ড।
- সূত্র: শিনহুয়া