ছবিতে তালেবান শাসনের একমাস
সারি সারি ঘনবসতিপূর্ণ বাড়িঘর এবং হিন্দুকুশ পর্বতমালার সুউচ্চ চূঁড়ার উপর ছড়িয়ে থাকা কাবুলের নীল আকাশে একসময় রংবেরংয়ের ঘুড়ি উড়ে বেড়াতো। বাড়ির ছাদে কিংবা পাহাড়ের উপর দাঁড়িয়ে শিশুরা ওড়াতো সেসব ঘুড়ি। তাদের কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে থাকতো পরিবেশ। কিন্তু এক মাস আগে তালেবানরা দেশের রাজধানী দখল করে নেওয়ার পর কাবুলের আকাশ থেকে সেসব ঘুড়ি উধাও হয়ে গেছে। অজানা এক আতঙ্কে নিঃশেষিত হচ্ছে তাদের জীবনের আনন্দও। গত এক মাসে তালেবান শাসনের অধীন কেমন ছিল কাবুল? ফটোসাংবাদিক স্টেফানি গ্লিনস্কির ক্যামেরায় উঠে এসেছে বদলে যাওয়া কাবুলের চিত্র।
চল্লিশ বছরের যুদ্ধবিগ্রহ ইতিমধ্যেই আফগানিস্তানকে ক্ষুধা, দারিদ্র, মৃত্যু ও দুর্দশার কষাঘাতে পঙ্গু করে দিয়েছে। কিন্তু যাদের রুখে দিতে আমেরিকান সৈন্যরা এদেশে এসেছিল, সেই তালেবানরা আবারও ক্ষমতায়। তাই আগে কাবুলের যেসব দেয়াল ছিল বর্ণিল ম্যুরালে সজ্জিত, তা মুছে দিয়ে তালেবানরা লিখেছে নতুন স্লোগান- 'আল্লাহর সহায়তায় এবার আমরা আমেরিকাকে পরাজিত করেছি'।
তালেবান সদস্যদের নিশ্চিন্ত মনে শহরের মধ্যে ঘোরাফেরা করতে দেখা গেছে। তালেবান যোদ্ধারা বন্দুক কাঁধে শহরের চিড়িয়াখানা, পার্কে ঘুরে বেড়িয়েছেন, রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আইসক্রিম খেয়েছেন; গ্রুপ হয়ে দাঁড়িয়ে সেলফিও তুলতে দেখা গেছে তাদের। যোদ্ধাদের কয়েকজন জানিয়েছেন, তারা গ্রাম্য প্রদেশগুলো থেকে কাবুলে এসেছেন 'শহর ঘুরে দেখতে'। কেউ কেউ আবার নিজেদের সন্তানদেরও নিয়ে এসেছেন।
তালেবানরা ক্ষমতায় আসার পর আফগানিস্তানের পতাকার বদলে, তালেবানদের সাদা রঙ এর 'ইসলামী আমিরাত' প্রতীক সম্বলিত পতাকা শহরে স্থান করে নিয়েছে। শিশুরা নগরীর পথে ঘুরে ঘুরে সামান্য পয়সার বিনিময়ে তালেবানদের পতাকা, ব্যানার বিক্রি করছে।
ইতিমধ্যে শহরের বিভিন্ন অংশে নারীরা তালেবান শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে নামেন এবং শিক্ষা ও কাজের অধিকার দাবি করেন। এসময় কিছু আন্দোলন সহিংসতাপূর্ণ হয়ে ওঠে। তালেবান যোদ্ধারা ভিড়ের মধ্যে নারীদের পেটাতে থাকে; কিছু সাংবাদিককেও আটকে রাখা হয় এবং বেত্রাঘাত করা হয়।
কাবুলের বাসিন্দাদের কেউ কেউ নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে বলে দাবি করলেও, অনেকেই অর্থসংকটে পড়ার আশঙ্কা করছেন। শহরের প্রধান একটি মার্কেটে আফগান নারীদের স্বর্ণালঙ্কার বিক্রি করতে দেখা যায়।
কাবুলের উপকন্ঠে বসবাস করেন ৬২ বছর বয়সী, আয়শা নওয়াবি। তালেবান শাসনের শুরুর দিকের কথা বেশ মনে আছে তার। কিন্তু তার বিশ্বাস, এবার আফগান নারীরা মাথা নিচু করে চলবে না। তারা প্রতিবাদ করবে নিজেদের অধিকারের জন্য; সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য লড়াই করবে।
'আমার বিশ্বাস, এবার আফগানিস্তান পিছু হটবে না। আমরা প্রতিবাদ করবোই', নিজের বাড়ির আঙিনায় দাঁড়িয়ে বলেছেন আয়শা।
- সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান