জ্যাক মা’র অ্যান্ট গ্রুপকে পুঁজিবাজারে আসার সুযোগ দেবে চীন
অ্যান্ট গ্রুপের পুঁজিবাজার নিবন্ধনের সুযোগ এখনও রয়েছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর। দেশটির ধনকুবের ব্যবসায়ী জ্যাক মা পরিচালিত অ্যান্ট গেল বছরের নভেম্বরেই বাজার নিবন্ধনের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু, চীনা নিয়ামক সংস্থা এরপর মূল কোম্পানি আলিবাবাকে সংস্কারের ঘোষণা দিলে, সেই প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে পড়ে।
সবকিছু ঘটে জ্যাক মা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক নীতি নিয়ে সমালোচনায় সরব হওয়ার পর। বেশ কিছুদিন তাকে জনসম্মুখে এমনকি টেলিভিশনেও দেখা যায়নি। ফলে তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কিনা- তা নিয়েও উদ্বেগ বাড়ে।
এই অবস্থায় গেল গত সপ্তাহে এক ভিডিও বার্তার মাধ্যমে বহাল তবিয়তে থাকার কথা জানান জ্যাক মা। কর্তৃপক্ষের সমালোচনার পর এটাই ছিল তার প্রথম আবির্ভাব। এসময় তিনি ভার্চুয়াল একটি দাতব্য অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে একদল শিক্ষাকর্মীর সঙ্গে আলোচনা করেন।
তারপরই গত মঙ্গলবার (২৬ জানুয়ারি) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের (পিবিওসি) গভর্নর ঈ-গ্যাং ইঙ্গিত দেন যে, সঠিক সময়ে অ্যান্ট গ্রুপের পুঁজিবাজার নিবন্ধনের সিদ্ধান্তটি পুনঃপর্যালোচনা করা হবে।
অ্যান্ট গ্রুপ ইতোপূর্বে ৩৪.৪ বিলিয়ন ডলারের শেয়ার পুঁজিবাজারে বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছিল। যা নিয়ামক সংস্থার আকস্মিক সিদ্ধান্তে আটকে যায় । পরিকল্পনামাফিক হংকং ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জে আসতে পারলে; এটাই হতো বাণিজ্যিক সংস্থার রেকর্ড বাজার নিবন্ধন।
এনিয়ে গত মঙ্গলবার ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ভার্চুয়াল বৈঠকে যুক্ত হয়ে ঈ-গ্যাং বলেন, "আইন নির্দেশিত পথে চললে, সকলেই তার ভালো ফল পাবে।"
জটিল ইস্যু:
তবে অ্যান্টগ্রুপের বাজারে আসা বন্ধ করার পূর্ব সিদ্ধান্তকে একটি 'জটিল বিষয়' বলেও উল্লেখ করেন পিপলস ব্যাংক অব চায়না- পিবিওসি'র প্রধান।
চীনের শীর্ষ আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠান হচ্ছে অ্যান্ট গ্রুপ। প্রতি মাসে আলি-পে সেবার মাধ্যমে প্রায় ৭৩ কোটি মানুষ তাদের ডিজিটাল লেনদেন পরিষেবা ব্যবহার করে। এছাড়া, কোম্পানিটির আছে নিজস্ব ঋণ ব্যবসা। তারা ব্যাংকের মাধ্যমে নিজ গ্রাহকদের সহজে ঋণ পাওয়ার সুযোগ করে দেয় আর বিনিময়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছ থেকে নির্দিষ্ট ফি আদায় করে থাকে।
গেল বছরের অক্টোবরে এক অর্থনৈতিক- প্রযুক্তি সম্মেলনে পিবিওসি নিয়ন্ত্রিত ব্যাংকিং খাতকে বন্ধকীর দোকানের সঙ্গে তুলনা করে নিন্দা করেছিলেন জ্যাক মা। আর্থিক খাতে পর্যাপ্ত সংস্কার না থাকার বিষয়েও তিনি মুখ খোলেন।
এই অবস্থায় তার ব্যবসায়িক সাম্রাজ্যের উপর কঠোর পদক্ষেপগুলোকে দেশটির শাসকগোষ্ঠী সমাজতন্ত্রী দলের প্রতিশোধমূলক কর্মকাণ্ড বলেই অনেকে মনে করছেন।
তবে বাস্তবতা হলো; অর্থনৈতিক ব্যবস্থার স্থিতিশীলতার স্বার্থেই আর্থিকখাতে প্রযুক্তির ব্যবহার এবং তার সম্ভাব্য নেতিবাচক দিক নিয়ে উদ্বিগ্ন দেশটির কর্তৃপক্ষ। দীর্ঘদিন ধরেই আর্থিক প্রযুক্তিখাতের সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া ছিল সরকারের সুদূরপ্রসারী লক্ষ্যের অংশ।
ঈ-গ্যাং জানান, "প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো চীনের আর্থিক ব্যবসায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তাদের কল্যাণেই ক্ষুদ্র ঋণগ্রহীতারা বাড়তি সুবিধা পাচ্ছেন। কিন্তু, একইসঙ্গে, সার্বিক ব্যবস্থায় তারা কিছু ঝুঁকিও তৈরি করেছে, যা নিয়ন্ত্রণ ও সংস্কার করা দরকার।"
ধনী তালিকায় পরিবর্তন:
অ্যান্ট গ্রুপ নিয়ামক সংস্থার তোপের মুখে যখন পড়ে, ঠিক তখনই কোম্পানিটির প্রতিদ্বন্দ্বী টেনসেটের বাজারমূল্য বাড়ে হংকং স্টক এক্সচেঞ্জে।
চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে টেনসেটের সার্বিক মূল্যায়ন দাঁড়ায় প্রায় এক ট্রিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। ফলে চীনের দ্বিতীয় বৃহৎ ধনীতে পরিণত হয়েছেন এর প্রতিষ্ঠাতা পোনি মা।
টেনসেটের আছে খুবই লাভজনক অনলাইন গেমিং ব্যবসা। সঙ্গে তারা আর্থিক সেবা প্রদানেও অ্যান্টের প্রতিযোগী।
কিন্তু, পুঁজিবাজার স্ফীতির সুবাদেই জ্যাক মা এবং আলিবাবার ই-কমার্স ব্যবসার প্রতিযোগী পিনডুয়োডুয়োর সহ-প্রতিষ্ঠাতা কলিন হুয়াংকে টপকে পোনি মা এখন দ্বিতীয় সেরা ধনী।
- সূত্র: বিবিসি