ঝুঁকিতে আছে ভারতের মহামারি-কবলিত অর্থনীতির পুনরুদ্ধার: রয়টার্স জরিপ
সম্প্রতি ভারতের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার নিয়ে জরিপ চালিয়েছিল সংবাদ সংস্থা রয়টার্স। সেই জরিপের ফল অনুসারে, মহামারির ধাক্কা থেকে দেশটির অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার বেশ ঝুঁকিতে রয়েছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ভারতের মুদ্রাস্ফীতির হার বাড়বে কিংবা অপরিবর্তিত থাকবে, কিন্তু কমবে না।
জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ায় বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ দেশ ভারতে দ্রব্যমূল্যের চাপও বেড়ে গেছে। কিন্তু রিজার্ভ ব্যাংক অভ ইন্ডিয়া (আরবিআই) আগামী অর্থবছরের (এপ্রিল-জুল ২০২২) আগে সুদের হার বাড়াবে না।
অন্যদিকে অনেক ব্যাংকই সুদের হার বাড়িয়ে দিয়েছে। এর ফলে প্রতিদ্বন্দ্বীদের চেয়ে খানিকটা পিছিয়েই পড়েছে আরবিআই।
অর্থনীতিবিদ কুনাল কুন্ডু বলেন, অত্যন্ত কার্যকর মুদ্রানীতির কারণে অর্থনীতিকে পতনের হাত থেকে বাঁচিয়ে রাখলেও, এই নীতি বেশিদিন অর্থনীতিকে সমর্থন দিয়ে যেতে পারবে না।
বিশেষজ্ঞদের পূর্বাভাস অনুসারে, ২০২১ সালের তৃতীয় ও চতুর্থ এবং ২০২২ সালের প্রথম প্রান্তিকে এশিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হবে যথাক্রমে ৭ দশমিক ৮ শতাংশ, ৬ শতাংশ এবং ৫ দশমিক ৮ শতাংশ। ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে ৪ অক্টোবর পর্যন্ত চালানো জরিপে এ তথ্য উঠে আসে। জুলাইয়ের এক জরিপে ২০২১ সালের তৃতীয় ও ২০২২ সালের প্রথম প্রান্তিকে এরচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল।
চলতি অর্থবছরে ভারতের মোট দেশজ উৎপাদন, অর্থাৎ জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৯ দশমিক ২ শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। আগামী অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হবে ৯ দশমিক ৭ শতাংশ। শেষ দুই প্রান্তিকে যথাক্রমে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ ও ৬ দশমিক ৪ শতাংশ এবং ২০২২/২৩-এর প্রথম প্রান্তিকে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
জুলাইয়ের একটি জরিপেও প্রায় একই পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল।
৩৪ জন অর্থনীতিবিদের কাছে প্রশ্ন ভারতের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের ঝুঁকি নিয়ে প্রশ্ন করেছিল রয়টার্স। তাদের মধ্যে ২৩ জন, অর্থাৎ দুই-তৃতীয়াংশই বলেছেন যে দেশটির অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার হতে বেশ বিলম্ব হবে এবং অর্থনীতির অবস্থা সামান্য খারাপের দিকে যাবে। আটজন বলেছেন, ভারতের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার বেশ দ্রুত হবে এবং অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে। বাকি তিনজন বলেছেন, দুর্বল পুনরুদ্ধার হবে এবং অর্থনীতির অবস্থাও আরও খারাপ হবে।
কুনাল কুন্ডু বলেন, মুদ্রাস্ফীতি যদি চড়া থাকে, তবে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার স্থবির হয়ে যেতে পারে।
জরিপে বিশেষজ্ঞরা পূর্বাভাস দিয়েছেন যে মুদ্রাস্ফীতি আরবিআইয়ের টার্গেট ৪ শতাংশের চেয়ে বেশি থাকবে।
আরবিআই বলছে, শক্তিশালী পুনরুদ্ধারের জন্য সব পক্ষ থেকেই নীতিগত সহায়তা পাওয়া জরুরি।
সম্প্রতি ভারতে কয়লা সংকট প্রকট আকার ধারণ করায় বড় ধাক্কা লেগেছে দেশটির অর্থনীতিতে। ভারতে বর্তমানে বিদ্যুতের চাহিদা অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি। বিদ্যুৎ উৎপাদনে দেশটি কয়লার ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। ভারতে উৎপাদিত বিদ্যুতের ৭০ শতাংশই আসে কয়লা থেকে।
জ্বালানি পণ্য কয়লার মজুদ তলানিতে ঠেকেছে ভারতের। ভয়াবহ ধস নেমেছে আমদানিতে। ফলে সরবরাহ নিশ্চিত করতে হিমশিম খাচ্ছে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো।
করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ আঘাত হানার পর ভারতের শিল্প খাতে বিদ্যুতের চাহিদা আকাশচুম্বী হয়েছে। এ কারণে কয়লার চাহিদা হু হু করে বেড়ে যায়। কিন্তু চাহিদার বিপরীতে বাড়েনি সরবরাহ।
সহসাই এই সংকট না কাটলে বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে ভারতের অর্থনীতি। এর ফলে ধীর হয়ে যাবে দেশটির অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের গতিও।