নতুন ঠিকানায় স্থানান্তর আবুধাবির বাংলাদেশ দূতাবাস
দূতাবাসের সেবার প্রয়োজনে সংযুক্ত আরব আমিরাতে থাকা বাংলাদেশী প্রবাসীরা আগামী ১৭ জানুয়ারি থেকে যেতে পারবেন রাজধানীর আল সাদাহ এলাকায় দূতাবাসের নতুন ঠিকানায় ।
সংযুক্ত আরব আমিরাতে নিযুক্ত বাংলাদেশী রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আবু জাফর বলেন, নতুন দূতাবাস চত্বরে অন্তত ২০০ জন লোক বসতে পারবে। আল কারামাহ-এর বর্তমান দূতাবাসে শুধুমাত্র ৫০ জন লোকের আরামদায়কভাবে বসবার ব্যবস্থা রয়েছে। এই নতুন বছরে আমরা আমাদের দূতাবাস আবু ধাবির কূটনৈতিক এলাকা হিসেবে পরিচিত স্থানে সরিয়ে নিয়েছি, যাতে আমাদের দেশবাসীর প্রয়োজনে আরো ভালোভাবে সাড়া দিতে পারি। আর যদি কোভিড-১৯ পরিস্থিতি অনুকূলে থাকে তাহলে আশা করি গত বছর থেকে স্থগিত হয়ে থাকা বেশ কিছু কমিউনিটি অনুষ্ঠান দূতাবাসের নতুন অবস্থানে আয়োজন করা হবে।
নতুন দূতাবাসটি মন্টিনিগ্রোর দূতাবাসের অদূরে আল জাওয়াওয়ালাহ স্ট্রিটের ভিলা নং ৪৬ এবং ৪৮ এ অবস্থিত ।
নতুন সেবা সমূহ
আবু জাফর বলেন, বর্তমানে সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রায় ৭৫০,০০০ বাংলাদেশী প্রবাসী বাস করছে। এ বছর তাদের জন্য দূতাবাসে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সেবা প্রদানের পরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্যে প্রধান হচ্ছে প্রত্যেক বাংলাদেশীর জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি কার্ড) আবেদন ও ইস্যু করা। ২০১৯ সালে এই পরিকল্পনা ঘোষণা করা হয়, কিন্তু কোভিড-১৯ মহামারী এর বাস্তবায়ন পিছিয়ে দেয়।
এনাইডি কার্ডে বায়োমেট্রিক ডেটা থাকে যা মাইক্রোচিপের সাথে যংযুক্ত । বাংলাদেশে বিপুল পরিমাণ লেনদেনের জন্য এগুলো অপরিহার্য, যার মধ্যে রয়েছে ফোন সিমের জন্য আবেদন করা বা ব্যাংক একাউন্ট খোলা। কর্মকর্তারা এর আগে জানিয়েছেন যে এনআইডির ফলে প্রবাসীরা সুযোগ পাবে বিদেশী থেকে নির্বাচনে ভোট দেবার ।
ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট
আমরা আশা করছি নতুন ইলেকট্রনিক পাসপোর্টের জন্য বায়োমেট্রিক রেজিস্ট্রেশন শুরু করার । বর্তমানে বাংলাদেশী প্রবাসীদের কাছে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) আছে। যখন সেগুলোর মেয়াদ শেষ হবে, আমরা সেগুলোর পরিবর্তে ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট দিয়ে তা প্রতিস্থাপন করব। যার জন্য ইমিগ্রেশন কাউন্টারে পাসপোর্ট পড়ার জন্য কোন মানবিক হস্তক্ষেপের প্রয়োজন হবে না।
ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট ইতোমধ্যে ঢাকায় ইস্যু করা হচ্ছে এবং আবু জাফর আশা করছেন যে ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে দূতাবাস তাদের জন্য নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু করতে পারবে। রাষ্ট্রদূত পরিষ্কার করে বলেন, "প্রাপ্তবয়স্করা ইলেকট্রনিক পাসপোর্টের জন্য ১০ বছরের মেয়াদ পাবেন এবং ১৮ বছরের কম বয়সী ব্যক্তিরা পাঁচ বছরের মেয়াদসহ পাসপোর্ট পাবেন।"
কমিউনিটির অনুষ্ঠান
বাংলাদেশের জাতির পিতা ববঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে নতুন দূতাবাসে কমিউনিটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। এই অনুষ্ঠানগুলো মূলত ২০২০ সালের জন্য পরিকল্পনা করা হয়েছিল ১৯২০ সালে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনের সাথে মিল রেখে।
আবু জাফর বলেন, "আমরা গত বছর অনেক অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে পারিনি, তাই সম্ভব হলে ২০২১ সালে সেগুলো বাস্তবায়ন করার পরিকল্পনা রয়েছে।"
প্রবাসীদের অবদান
বাংলাদেশী প্রবাসী সম্প্রদায় সম্পর্কে বলতে গিয়ে আবু জাফর বলেন, অনেকে স্বেচ্ছায় সংযুক্ত আরব আমিরাতের কোভিড-১৯ টিকার ট্রায়ালে অংশগ্রহণ করেছে। এদিকে দেশটি টিকা অভিযান শুরু করার পর থেকে ইতোমধ্যে উল্লেখযোগ্য হারে টিকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
"আমরা আশা করি সংযুক্ত আরব আমিরাতকে কোভিড-১৯ থেকে পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ায় সাহায্য করার। আমরা লক্ষ্য করেছি যে সংযুক্ত আরব আমিরাতের নেতৃত্ব দেশ এবং তার বাসিন্দাদের সুরক্ষিত রাখার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছ। আমি মন খুলে প্রশংসা করছি যেভাবে এই টিকা এখন নাগরিক এবং প্রবাসীদের সমানভাবে বিতরণ করা হচ্ছে। বাংলাদেশী কমিউনিটি টিকা গ্রহণ করে এবং কোভিড-১৯ এর সমস্ত সতর্কতা অনুসরণ করে আরব আমিরাতকে করোনা থেকে পুনরুদ্ধার করতে তাদের কাজ চালিয়ে যতে চায়।"
শীর্ষ এই কূটনীতিকের মতে, কোভিড-১৯ মহামারীর সময় মোট ৬০,০০০ প্রবাসী বাংলাদেশে ফিরে গেছে। তিনি বলেন, "আমরা আশা করি অর্থনীতি স্বাভাবিক হয়ে গেলে তারা সন্তোষজনক কর্মসংস্থানের মাধ্যমে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ফিরে আসবে পারবে।"
রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশী প্রবাসীদের সংযুক্ত আরব আমিরাতে অবদান আইন কানুন মান্য করে দেশটির জন্য কাজ করে যেতে আহ্বান জানিয়েছেন।