নাজিব রাজাকের কারাদণ্ড: মুক্ত গণমাধ্যমের আরেকটি জয়
নাজিব রাজাক। মালয়েশিয়ার এক সময়ের প্রবল দাপুটে প্রধানমন্ত্রী। মঙ্গলবার চলমান দুর্নীতির সাতটি অভিযোগের সব কটিতেই তাকে দোষী সাব্যস্ত করে রায় দিয়েছেন কুয়ালালামপুর হাইকোর্ট। তাকে ১২ বছরের কারাবাস এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের দায়ে ২১ কোটি রিঙ্গিত ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দেওয়া হয়।
নাজিবের এই মহাপতনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছেন এক সাংবাদিক। তিনি ক্লেয়ার রিকেসল ব্রাউন। একসময় বিবিসিতে কাজ করতেন। আমাদের সময়ের সবচেয়ে বড়, প্রায় সাড়ে ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থ কেলেংকারির খবর তিনিই সেন্ট্রাল লন্ডনে নিজের পুঁচকে রান্নাঘরে বসে, নিজের নিউজ সাইটে ফাঁস করেছিলেন।
সেটি ২০১৫ সালের কথা। নাজিব তখন রাষ্ট্র ক্ষমতায়। ইবসেনের বিখ্যাত নাটক 'অ্যান এনিমি অব দ্য পিপলে'র ভঙ্গিমায়ই ক্লেয়ারকে 'দেশের শত্রু' বলে তখন অভিহিত করেছিল মালয়েশিয়ার সরকার।
তার বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছিল ইন্টারপোল। নকল ডকুমেন্ট প্রচার এবং 'সংসদীয় গণতন্ত্রের জন্য হানিকর' কর্মকাণ্ডে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ তোলা হয়েছিল। যে অপরাধের শাস্তি ২৫ বছরের কারাবাস।
এর চার বছর পর, দুর্নীতির অভিযোগে নাজিব গ্রেপ্তার হলে, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আর্থিক কেলংকারি প্রকাশ করে দেওয়ার কৃতিত্বে ওই নারীকে সবাই বাহবা দেন। তিনি পরিণত হন সত্যের একজন চ্যাম্পিয়ন হিসেবে।
ক্লেয়ারের লড়াই
২০১৫ সালে, তখনো তার একেবারেই স্বল্প পরিচিত ওয়েবসাইটটিতে তিনিই প্রথম প্রকাশ করেছিলেন, সরকারি অর্থায়নে 'ওয়ানএমডিবি' নামে প্রতিষ্ঠিত এক উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে কী করে নাজিব, তার ছেলে ও অন্যান্য দোসর যোগসাজশ করে মালয়েশিয় লোকজনকে ঠকাচ্ছেন।
বাস্তবে টাকাগুলো আসলে তারা নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করেছেন, নিজেদের অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করেছেন, হলিউডি সিনেমায় লগ্নি করেছেন, ক্লুদ মনের পেইন্টিং কিনেছেন, এবং এমন জায়গায় ডিনার সেরেছেন- যেখানে মাথাপ্রতি খরচ পড়েছে ৫০০ ডলারেরও বেশি।
ক্লেয়ারের এই উদ্ঘাটন তার জীবন বিপন্ন করে তুলেছিল। যে দেশকে নিজের জন্মভূমি ভাবতেন, কেননা ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলে তার বাবা কলোনিয়াল পুলিশ অফিসার হিসেবে সেখানেই কাজ করতেন- সেই মালয়েশিয়ার পুলিশ তার পিছু নিয়েছিল।
যেন সিঙ্গাপুরে না আসেন, সেই পরামর্শ তাকে দিয়েছিলেন কাছের লোকজন। নিজের চলাফেরা একদম গুটিয়ে ফেলেছিলেন তিনি। এমনকি লন্ডনের পার্কে পায়চারি করার সময়ও পুলিশের নজরদারি ছিল তার ওপর।
ক্লেয়ার তবু ঘাবড়ে যাননি। দুনিয়াকে দেখিয়েছেন, মুক্ত ও স্বাধীন গণমাধ্যমের দাম কতটা অমূল্য। দুনিয়াকে তিনি আরও একবার দেখিয়ে দিয়েছেন, দুর্নীতি ফাঁস করা এবং জনগণের টাকা আত্মসাৎ হওয়া থেকে রক্ষার ক্ষেত্রে গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তি হিসেবে গণমাধ্যম কত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
তার ঘটনা একইসঙ্গে দেখিয়ে দিয়েছে, একজন সাংবাদিকের কাজ কতটা নিরাপত্তাহীন হতে পারে, এবং এই পেশার প্রতি একজন সাংবাদিকের কতটা আত্মনিবেদন থাকলে তিনি সবার আগে দুনিয়াকে কোনো খবর দিতে পারেন।
ক্ষমতার দাপট
এই কেলেংকারি দামাচাপা দিতে মরিয়া হয়ে ওঠেন নাজিব। যেকোনো দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারের মতোই, 'রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত' নাজিব-বিরোধী প্রচারণার ষড়যন্ত্র বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন শুরুতে।
ক্লেয়ারকে অভিহিত করা হয়েছিল 'অপেশাদারের' মতো নাজিবের বিরোধী পক্ষের হয়ে কাজ করা ব্যক্তি হিসেবে।
ফান্ডটি নিয়ে যারাই আওয়াজ তুলেছেন, সেই সমস্ত উর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করেছেন নাজিব; তার ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী ও তৎকালীন অ্যাটর্নি জেনারেল এই অভিযোগের প্রতি আগ্রহ দেখানোয় দায়িত্ব থেকে কাটা পড়েছেন।
পাঁচ বছর আগে যখন এ কেলেংকারি ফাঁস হয়, তখন তদন্তের দাবি নস্যাৎ করে দিয়েছেন তিনি। এই ঘটনা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করায় একটি পত্রিকার লাইসেন্স বাতিল এবং সমালোচকদের আটক করে তার সরকার।
কিন্তু ক্লেয়ার, যেমনটা তিনি নিজেই বলেছেন- 'স্রেফ অনুসরণ করে গেছেন কাহিনিটা।'
সাংবাদিক ও সংবাদের ঘ্রাণ
কী করে সোর্সগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে হয়, কী করে একজন সাংবাদিক খাবারের টেবিলে বসেও খবরের ঘ্রাণ পান- তিনি যেমনটা পেয়েছিলেন এক অচেনা লোকের কাছ থেকে, এবং কী করে একজন সত্যিকারের সাংবাদিক সেটির শেষ দেখে ছাড়েন- ক্লেয়ারের কাজ আমাদের এসব সম্পর্কেও যথেষ্ট শিক্ষা দেয়।
ডিনারে তিনি এক অতুলনীয় দুর্নীতি সম্পর্কে স্রেফ একটা গুঞ্জন শুনেছিলেন। এরপর কৌতূহল থেকে তিনি এমন কাউকে খুঁজে বের করার চেষ্টা চালালেন, যার কাছ থেকে ভালো তথ্য পাওয়া যাবে। খুঁজে পেলেন এক সোর্স, যে তাকে এমন এক কোম্পানির কিছু ডকুমেন্টের কপি দেখালেন, যে কোম্পানির মাধ্যমে ওয়ানএমডিবি ফান্ডের টাকা পাচার হয়েছিল।
তার মানে কোম্পানিটির কোনো অসন্তুষ্ট কর্মকর্তার কাছে সব ডকুমেন্ট ছিল এবং তিনি ২ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে সেগুলো বিক্রি করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু অত টাকা দেওয়ার সামর্থ ছিল না ক্লেয়ারের।
তবে ধৈর্য নিয়ে খোঁজ চালিয়ে গেলেন তিনি। একসময় পেলেন এক প্রকাশককে, যিনি ওই ডকুমেন্টগুলোর জন্য স্বেচ্ছায় টাকা দিতে রাজি। এভাবে সেই 'বোমশেল' হাতে পেলেন ক্লেয়ার; আর অবশেষে প্রকাশ করে দিলেন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অর্থ কেলেংকারির খবর।
সমাজের 'ওয়াচডগ' হিসেবে কাজ করার কথা যে গণমাধ্যমের, যেটির স্বাধীনতার জন্য স্বয়ং সমাজেরই লড়া উচিত কেন- ক্লেয়ারের ঘটনা সেটিও দেখিয়ে দিয়েছে।
সাংবাদিকতার দায়
ক্লেয়ারের মতো মানুষ যদিও বিরল, তবু বিশ্ব গণমাধ্যমে একেবারে অচেনা নয়। সাংবাদিকতার ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, সময়ে সময়ে কত সাহসী, বুদ্ধিমান ও সত্যান্বেষী সাংবাদিক এমন সব রাজনৈতিক ও আর্থিক অপকর্ম প্রকাশ করে দিয়েছেন, অন্যথায় এর ফল খুবই মারাত্মক হতে পারত।
একটা উদাহরণ টানা যাক। সাদ্দাম হোসেনের কাছে গণধ্বংসাত্মক অস্ত্রভাণ্ডার রয়েছে- এমন মিথ্যে দাবির পক্ষে টনি ব্লেয়ারের বিখ্যাত '৪৫-মিনিট টু ডুম' দলিলগুচ্ছ, যেগুলো আসলে সত্য নয়, তা প্রথমবারের মতো প্রকাশ করে দেন বিবিসির সাংবাদিক অ্যান্ড্রু গিলিগ্যান।
'বিবিসি টুনাইট' অনুষ্ঠানে প্রচারিত তার প্রতিবেদন জানিয়েছে, স্রেফ তেলের দখল নেওয়ার জন্যই ব্লেয়ার ও জর্জ ডব্লিউ বুশ একসঙ্গে ওই ষড়যন্ত্র করেছিলেন।
ওই প্রতিবেদন বিবিসির ওপর মারাত্মক চাপ তৈরি করে এবং এর প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিক গিলিগ্যান ও বিবিসি চেয়ারম্যান পদত্যাগ করলেও প্রতিবেদনটি প্রত্যাহার করেননি।
ব্লেয়ার ও তার লোকেরা বিবিসির ওপর ভীষণ রুষ্ট হন এবং এমনকি ওই সাংবাদিককে জাতীয় সংসদেও তলব করা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রমাণিত হয়- বিবিসিই সত্য, এবং ব্লেয়ার বাধ্য হন পিছু হটতে। নিজের দলের ভেতরই সমর্থন হারিয়ে পদত্যাগে বাধ্য হন তিনি।
তাছাড়া, ইরান-কন্ট্রা স্ক্যান্ডালের কাহিনি ফাঁস করে দিয়েছিলেন একেবারেই অখ্যাত এক লেবানিজ সাংবাদিক।
ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময় নিজেদের নিষেধাজ্ঞাকেই বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে যুক্তরাষ্ট্র গোপনে ইরানের কাছে অস্ত্র বিক্রি করেছিল, এবং লাতিন আমেরিকান দেশ নিকারাগুয়ার সমাজতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায় লড়াইরত কন্ট্রা বিদ্রোহীদের কাছে সেই টাকা পৌঁছে দিয়েছিল।
ইরান-ইরাক যুদ্ধ নামে পরিচিত ফার্স্ট গালফ ওয়ারে আমেরিকার ইন্ধনের গোমর ফাঁস করে দিয়েছিলেন লেবানিজ ওই সাংবাদিক। তাতে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের দ্বিমুখী বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পেয়ে যায়।
তাছাড়া, আমরা বিখ্যাত ওয়াটারগেট স্ক্যান্ডালও স্মরণে আনতে পারি, যেটি ফাঁস করে দিয়েছিলেন ওয়াশিংটন পোস্টের দুই প্রতিবেদক- বব উডওয়ার্ড ও কার্ল বার্নস্টেইন। প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের নির্বাচনী প্রচারণাকারীরা কীভাবে ডেমোক্রেট অফিসে সিঁদ কেটেছিলেন ডকুমেন্ট চুরি করার জন্য এবং অফিসে আড়ি পাতার জন্য করেছিলেন ওয়্যারটেপ- সেটি প্রকাশ করে দেন ওই দুই সাংবাদিক।
খুবই শক্ত হাতে ওই ঘটনা সামাল দেওয়ার চেষ্টা চালিয়েছিলেন নিক্সন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি পদত্যাগে বাধ্য হন। আর ওই উদঘাটন আমেরিকার রাজনীতিকে চিরতরে বদলে দেয়।
আর সম্প্রতি আমরা 'দ্য প্যারাডাইস পেপারস' ও 'পানামা পেপারস' ফাঁস হওয়ার ঘটনা শুনেছি।
বিশ্বজুড়ে ৯৬ মিডিয়া পার্টনারের এক বিশেষ তদন্ত- 'দ্য প্যারাডাইস পেপারস' দুটি অফশোর সার্ভিস প্রোভাইডার এবং ১০ ট্যাক্স হেভেনের কোম্পানি রেজিস্ট্রি থেকে ১৩ দশমিক ৪ মিলিয়িন ফাইল 'লিক' বা ফাঁস করে, প্রকাশ্য দিবালোকে জানিয়ে দিয়েছিল- উচ্চহারের কর থেকে নিজেদের টাকা রক্ষা করতে রাজনীতিক, মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি, তারকা ও উচ্চ উপার্জনশীল ব্যক্তিমানুষেরা কী রকম জটিল কাঠামো তৈরি করে রেখেছে।
অন্যদিকে, জার্মান পত্রিকা 'Süddeutsche Zeitung' প্রাপ্ত প্রচুর পরিমাণের ডকুমেন্টও ফাঁস করেছিল 'পানামা পেপারস', যা কি না তদন্ত তত্ত্বাবধানের জন্য ইন্টারন্যাশনাল কনসোরটিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস'কে (আইসিআইজে) আহ্বান জানানো হয়। এটিও সম্পদ গোপন ও কর ফাঁকি দেওয়ার ক্ষেত্রে ধনী ও ক্ষমতাশালী লোকদের নৈতিক স্খলনের দিকটি প্রকাশ করে দেয়।
কিংবা আমরা দক্ষিণ আফ্রিকার গণমাধ্যমের ফাঁস করে দেওয়া সেই ঘটনাও স্মরণে আনতে পারি, যেটি দেখিয়েছে- এক ভারতীয় গুপ্ত পরিবারের সদস্যদের অবৈধভাবে বড় বড় চুক্তি দেওয়ার মাধ্যমে কীভাবে প্রেসিডেন্ট জেকব জুমা নিজ দেশকে লুণ্ঠন করেছেন।
গুপ্ত পরিবার এতই শক্তিশালী হয়ে ওঠে যে, জুমার মন্ত্রীসভায় কারা সদস্য হবেন- সেই সিদ্ধান্তও তারা দিতেন। গণমাধ্যম এই ঘটনার পিছু নিরন্তর লেগে থাকার কারণে ২০১৮ সালে পদত্যাগ করতে এবং দুর্নীতির ১৬টি মামলার মুখোমুখি হতে বাধ্য হন জুমা।
ক্ষমতাশালীদের খেয়ালখুশি থেকে জনগণের স্বার্থের সুরক্ষা দিতে গণমাধ্যমের এ রকম উজ্জ্বল উদাহরণে সাংবাদিকতার ইতিহাস পূর্ণ হয়ে রয়েছে।
ভিয়েতনামে মাই লাই গণহত্যা নিয়ে সেমোর হার্সের উদঘাটনটিও আমরা স্মরণ করতে পারি, যেটি ভিয়েতনাম যুদ্ধের ব্যাপারে আমেরিকান জনগণের আবেগ পাল্টে দিয়েছিল।
নাগরিকদের ওপর ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সির নজরদারি ফাঁস, এবং ওয়াশিংটন পোস্টে ছাপা হওয়া প্রতিবেদনের কারণে ইউএস সিনেটর জো ম্যাককার্থির কমিউনিস্ট উইচ-হান্টের পরিসমাপ্তির কথাও আমরা স্মরণে আনতে পারি।
অথবা এ প্রসঙ্গে সাম্প্রতিক আরেকটি উদাহরণ টানা যাক: নিউইয়র্ক টাইমসের ফাঁস করে দেওয়া সংবাদের জেরে হলিউডের মিডিয়া মুগল হার্ভে উইন্সটেইন এখন কারাভোগ করছেন।
এ রকম অসংখ্য ঘটনাই সাক্ষ্য দেয়, অপকর্ম ঠেকিয়ে ও ক্ষমতাহীনদের সুবিচার এনে দিয়ে গণতন্ত্র রক্ষায় গণমাধ্যমের ভূমিকা কতটা গুরুত্ববহ।
মালয়েশিয়ার ভৌতিক রূপ
নাজিবের নোংরা কাহিনিটিও মুক্ত গণমাধ্যমের অনুপস্থিতিতে দুর্নীতির ঝেঁকে বসার প্রতিফলন ছিল।
১৯৮১ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত একনায়কতন্ত্র চালানো মাহাথির মোহাম্মদ সেদেশের গণমাধ্যমকে তার সরকারের কঠোর নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রেখেছিলেন; টুঁটি চেপে রেখেছিলেন মুক্ত সাংবাদিকতার।
তার উত্তরাধিকারী হিসেবে নাজিব সেই নিয়ন্ত্রণ আরও শক্ত করেছেন নতুন আইন প্রয়োগের মাধ্যমে, এবং 'মিথ্যে সংবাদ' প্রকাশের অভিযোগ তুলে সাংবাদিকদের দিয়েছেন কঠিন শাস্তি, যেমন অভিযোগ তিনি ওয়ানএমডিবি প্রসঙ্গে ক্লেয়ারের বিরুদ্ধেও করেছিলেন, যেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে বিমুখ হয় গণমাধ্যম। আর গণমাধ্যমের জাগরণের অবর্তমানেই ওয়ানএমডিবি কেলেংকারির পুরোটা সংঘটিত হয়েছে- কেউ খেয়ালও রাখেনি, প্রতিবেদনও ছাপেনি।
গণতন্ত্র রক্ষায় গণমাধ্যম এ রকম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বলেই যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা পিতা থমাস জেফারসন বলেছেন, 'পত্রিকাবিহীন সরকার নাকি সরকারবিহীন পত্রিকা- কোনটা আমাদের দরকার, এমন সিদ্ধান্ত নিতে বললে আমি এক মুহূর্তও ইতস্তত না করে শেষেরটিই বেছে নেব।'
নাজিব রাজাকের শাস্তি স্বাধীন গণমাধ্যমের বিজয়ের আরেকটি দারুণ উদাহরণ হয়ে ওঠল।
- সূত্র: বিবিসি, নিউইয়র্ক টাইমস ও আরও কিছু গণমাধ্যম