নেতানিয়াহুকে উৎখাতের কুশীলব কারা
একদল ইসরায়েলি উগ্র জাতীয়তাবাদী নেতা থেকে শুরু করে আরব নীতিনির্ধারকগণ, সবাই এক ছাদের তলায় জড়ো হয়েছেন ইসরায়েলে একটি জোট সরকার গঠনের লক্ষ্যে। বিরোধী দলীয় নেতা ইয়ার লাপিদের মতে, এই পদক্ষেপের মাধ্যমেই নেতানিয়াহুর এক যুগের শাসনের অবসান ঘটতে চলেছে।
ইয়ার লাপিদ
টেলিভিশনের জনপ্রিয় পুরনো মুখ ও সংবাদ উপস্থাপক এবং মধ্যবিত্ত-অসাম্প্রদায়িক ইসরায়েলিদের কাছে জনপ্রিয় নেতা ইয়ার লাপিদ সম্প্রতি বিরোধী দলীর প্রধানের স্থান অধিকার করেছেন। বুধবার পর্যন্ত বেঁধে দেয়া সময়সীমার মধ্যেই একটি জোট সরকার গঠন করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে লাপিদকে।
লাপিদের 'ইয়েশ আতিদ' পার্টি জনগণের কাছে জীবনযাত্রার ব্যয় কমানোর এবং ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোর ক্ষমতা হ্রাস করবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
৫৭ বছর বয়সী এই নেতা নিজেকে একজন মধ্যমপন্থী এবং দ্বি-রাষ্ট্র তত্ত্বে বিশ্বাসী- মানুষ হিসেবে দাবী করেন। তবে, লাপিদ জানিয়েছেন তিনি নিরাপত্তার ব্যাপারে একজন তীক্ষ্ণদৃষ্টি সম্পন্ন ব্যক্তি এবং কিছু বিষয় রয়েছে যা ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে আলোচনার সময় তিনি কোনো ছাড় দিবেন না। এর মধ্যে রয়েছে জেরুজালেমের উপর কর্তৃত্ব বজায় রাখা, যা এই সংকটের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু।
টাইমস অফ ইসরায়েলের সঙ্গে সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে লাপিদ বলেন, 'ফিলিস্তিনিরা নিজ রাষ্ট্র তৈরি করার চাইতে আমাদের ধ্বংস করার দিকে বেশি মনোযোগী। আর এই অবস্থা যতদিন পর্যন্ত চলবে, ততদিন পর্যন্ত কোনো দ্বি-রাষ্ট্র হবে না'।
নাফতালি বেনেট
সাবেক উগ্রপন্থী নেতা, নাফতালি বেনেট একসময় নেতানিয়াহুর সিনিয়র সহযোগী ও উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন এবং তার সরকারের শিক্ষা ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়েও দায়িত্ব পালন করেছেন।
বেনেট পশ্চিম তীরের বেশিরভাগ অঞ্চল নিজেদের অধিকারে নেয়ার পক্ষে এবং আদর্শগত দিক থেকে নেতানিয়াহুর সঙ্গেই তার মিল বেশি। তিনি নেতানিয়াহুর লিকুদ পার্টির সদস্য হিসেবেও ছিলেন। কিন্তু বর্তমানে ৪৯ বছর বয়সী এই নেতার নেতানিয়াহুর সঙ্গে মতবিরোধ হওয়ায় তিনি লাপিদের সঙ্গেই হাত মিলিয়েছেন।
চুক্তি অনুযায়ী প্রথম দুই বছর মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হবেন বেনেট এবং শেষ দুই বছরের জন্য প্রধানমন্ত্রী হবেন লাপিদ। সরকার গঠনের জন্য সংসদে বেনেটের ৭ টি আসনই লাপিদের প্রয়োজন, আর সে কারণেই বেনেট পাবেন শাসনক্ষমতা।
ইসরায়েলের ধর্মীয় অধিকার বজায় রাখতে বদ্ধপরিকর নেতা বেনেট পশ্চিম তীরে প্রধান ইহুদি আবাসন আন্দোলন 'ইয়েশা'র সাবেক নেতা। তিনিই ইহুদিদের আবাসন প্রক্রিয়ার বিস্তার ঘটান এবং ফিলিস্তিনি ভূখন্ড ক্রমশ নিজেদের দখলে নেন। নিজের রাজনৈতিক অবস্থান জোরদার করার জন্য ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাবও তিনি নাকচ করে দেন।
২০১৮ সালে তিনি বলেন, 'আমি আরবদের আর এক ইঞ্চি জায়গাও দিবো না। আমরা তাদের বেশি জায়গা দিলেই সারা বিশ্ব আমাদের ভালোবাসবে, এই ধারণা আমাদের মাথা থেকে দূর করতে হবে।'
সান ফ্রান্সিসকোর অভিবাসী মা-বাবার সন্তান বেনেট ইতিমধ্যেই একটি অ্যান্টি-ফ্রড সফটওয়্যার কোম্পানিকে আমেরিকান সিকিউরিটি ফার্মের কাছে বিক্রি করে দিয়ে হাই-টেক মিলিওনিয়ার বনে গেছেন। তবে সমকামীদের অধিকার এবং রাষ্ট্র ও ধর্মের মধ্যকার সম্পর্কের মতো কিছু বিষয়ে সাবেক এই নেতা তার অন্য চরমপন্থী সহকর্মীর চাইতে কম রক্ষণশীল।
আভিগডোর লিবারম্যান
সোভিয়েত নেতা আভিগডোর লিবারম্যান 'ইসরায়েল বিতিনু' দলের নেতা। তার দলটি রাশিয়া এবং পূর্ব ইউরোপের অভিবাসী ইসরায়েলিদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়।
উগ্র জাতীয়তাবাদী নেতা লিবারম্যান একবার বলেন যে, দেশের মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশ আরব সংখ্যালঘুদের মধ্যে যারা 'বিশ্বাসঘাতক' , তাদের শিরশ্ছেদ করা উচিৎ।
২০১৮ সালে নেতানিয়াহু গাজার সামরিক বাহিনীর সাথে যুদ্ধবিরতি দেয়ার পর একে 'সন্ত্রাসের কাছে আত্মসমর্পণ করা হয়েছে' বলে অভিহিত করেন লিবারম্যান এবং সরকারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ান।
এক বছর বাদে জোটের অতি গোঁড়া রাজনীতিবিদদের সঙ্গে মতবিরোধের জেরে তিনি নেতানিয়াহু সরকারের সঙ্গে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানান। এই জোটের ফলেই রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় এবং পুনরায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
মনসুর আব্বাস
সংসদে ৬১টি আসন নিয়ে সংখ্যাগুরু অবস্থান নিশ্চিত করতে হলে বিরোধী দলের হয়তো আরো একটি ছোট্ট ইসলামী দলের থেকে সাহায্য নিতেই হবে। আর সেই দলটি হলো 'ইউনাইটেড আরব লিস্ট', যার হিব্রু নাম ''রা'আম''।
দলটির ৪৬ বছর বয়সী নেতা মনসুর আব্বাস রক্ষণশীল রাজনীতিবিদ হলেও তিনি বাস্তববাদী মানুষ। ইসরায়েলের আরব সংখ্যালঘুদের জানমালের নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিত করতে চান বলেই আব্বাস সরকার গঠনে যোগ দেয়ার চিন্তাটা বাতিল করেন নি।
বেনি গান্টজ
সাবেক ইসরায়েলি সেনা প্রধান বেনি গান্টজ নেতানিয়াহুকে টক্কর দিতে বিরোধীদলীয় প্রধান হয়ে তিনটি নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছেন। তবে গতবছর নেতানিয়াহুর সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগি করতে সম্মত হওয়ায়, তার 'ব্লু অ্যান্ড হোয়াইট পার্টি' যথেষ্ট সমর্থন হারিয়েছে।
- সূত্র- দ্য গার্ডিয়ান