প্রবাসী কর্মী কমালে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে কুয়েতি পার্লামেন্ট
পারস্য উপসাগরীয় আরব রাষ্ট্রসমূহে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের বিপুল সংখ্যক প্রবাসী কর্মী রয়েছেন জীবিকার তাগিদে। কিন্তু, জীবাশ্ম জ্বালানি তেলের দরপতন এবং কোভিড-১৯ জনিত মন্দায়; স্থানীয় কর্মসংস্থান ধরে রাখার উদ্যোগে প্রবাসী কর্মীদের নিজে দেশে ফিরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেয়- এ অঞ্চলের নানা সরকার।
পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী বাংলাদেশি কাজ করেন সৌদি আরবে (প্রায় ১২ লাখ)। এরপরই বৃহত্তম শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কুয়েত। সাম্প্রতিক সময়ে, কুয়েতের সরকারি কিছু অসাধু কর্মকর্তার সঙ্গে যোগসাজশে দেশটিতে অবৈধভাবে আদম এবং মুদ্রা পাচারের অভিযোগ ওঠে বাংলাদেশি এক সাংসদ- কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় কুয়েতে অবস্থানকালেই গত ৬ জুন তাকে গ্রেফতার করে দেশটির পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ- সিআইডি।
পাপুলের গ্রেপ্তারের পরই তার মাধ্যমে অবৈধভাবে যাওয়া বাংলাদেশি কর্মীদের ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে তৎপর হয়ে ওঠে দেশটির প্রশাসন। স্থানীয় অধিবাসীর তুলনায় প্রবাসীদের সংখ্যা বিপুলহারে কমিয়ে নেওয়ার দাবি- যখন দেশটির রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে, ঠিক তখনই পাপুলকাণ্ডে হতাশার সাগরে ভাসতে থাকেন দেশের রেমিটেন্স যোদ্ধারা।
এ অবস্থায় সম্প্রতি কিছুটা আশার আলো জাগিয়েছে, কুয়েতি পার্লামেন্ট তথা জাতীয় পরিষদের মানবসম্পদ বিষয়ক স্থায়ী কমিটির একটি প্রতিবেদন। প্রবাসী কর্মীর সংখ্যা পতন কুয়েতি অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে, বলেই সতর্ক করা হয় সেখানে।
কমিটির দেওয়া অনুসন্ধানী রিপোর্টের বরাত দিয়ে গত রোববার স্থানীয় দৈনিক কুয়েত টাইমস জানায়, এই হ্রাস বাজারের ক্রয়শক্তি হ্রাস করবে। পাশাপাশি আবাসন এবং বেসরকারি শিক্ষার বাজারগুলিকেও প্রভাবিত করবে। এছাড়া, দেশটির বেসরকারি খাতের অন্যান্য উদ্যোগও প্রবাসী শ্রমিকের উপর নির্ভরশীল। তাই বিদেশি কর্মী হ্রাস অর্থনৈতিক বিকাশকেও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
কুয়েতি সংসদীয় কমিটি বিদেশি শ্রমিক হ্রাসের জন্য সেদেশের এমপি'দের প্রস্তাবিত বেশ কিছু খসরা পরিকল্পনা পর্যালোচনা করে এসব কথা জানিয়েছে।
প্রবাসী কর্মী নিয়ন্ত্রণে দেশটির সাংসদরা; প্রতিটি দেশের প্রবাসী সম্প্রদায়ের জন্য নির্দিষ্ট সংখ্যা বেঁধে দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন। তবে দেশটির কর্তৃপক্ষ এমন কোনো কোটা বেঁধে দেওয়ার ঘোষণা এখনও দেয়নি।
কুয়েত সরকারের প্রস্তাবিত পরিকল্পনাটি- সরকারি খাতে কাজ করা প্রায় এক লাখ ৬০ হাজার বিদেশির পরিবর্তে স্থানীয় নাগরিক নিয়োগ দেওয়ার কথা বলেছে। যদিও, এটি বাস্তবায়ন শুরু করার কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা ঘোষণা করা হয়নি।
তবে প্রস্তাবনায় তিন লাখ ৭০ হাজার বিদেশি কর্মী- যারা দেশটির ভাবমুর্তি বা অর্থনীতিকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করেছেন; বিশেষ করে, যারা অবৈধভাবে দেশটিতে গিয়েছেন- তাদের অবলম্বে ফেরত পাঠানোর দাবিও উঠেছে।
এ অবস্থায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কূটনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধি করা একান্তই জরুরি। কুয়েতি পার্লামেন্টের মানব সম্পদ বিষয়ক কমিটির প্রতিবেদনকে কাজে লাগিয়ে দেশটিতে বৈধভাবে দক্ষ এবং প্রশিক্ষিত শ্রমিক রপ্তানির লক্ষ্যে- এখন থেকেই উদ্যমী হওয়া প্রয়োজন সরকারের।
- সূত্র: আরব নিউজ অবলম্বনে