ফাইজার-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ২ ডোজ ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে অধিক কার্যকর: গবেষণা
ফাইজার ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার দুই ডোজ ভ্যাকসিন করোনাভাইরাসের ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে উচ্চ মাত্রায় কার্যকর, সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণার ফলাফলে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
কেন্ট নামে পরিচিত যুক্তরাজ্যে চিহ্নিত ভাইরাসের ধরনটির বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন দুটি যে মাত্রায় কার্যকর, ফাইজার ও অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিনের দুটি ডোজ ভ্যাকসিন দেওয়া হলে তা ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের উপসর্গযুক্ত সংক্রমণের ক্ষেত্রেও একই মাত্রার প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সক্ষম।
তবে প্রথম ডোজ ভ্যাকসিন দেওয়ার তিন সপ্তাহ পর দুটি ভ্যাকসিনই ভারতীয় ভ্যাকসিনের বিরুদ্ধে ৩৩ শতাংশ কার্যকর। অন্যদিকে, কেন্ট ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে প্রথম ডোজ দেওয়ার তিন সপ্তাহ পর কার্যকারিতার হার ৫০ শতাংশ।
গবেষণাটি পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ড জানিয়েছে, ভ্যাকসিন দুটি গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া এবং মৃত্যু ঠেকাতে আরও অধিক কার্যকর।
ব্রিটিশ স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক জানিয়েছেন, গবেষণাটির ফলাফল অনুযায়ী ভ্যাকসিনের দুটি ডোজই গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরূত্বপূর্ণ।
ফাইজারের ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার দুই সপ্তাহ পর তা ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে ৮৮ শতাংশ সুরক্ষা দিতে সক্ষম, তবে কেন্ট ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে একইম সময়সীমায় ৯৩ শতাংশ সুরক্ষা দেয়।
অন্যদিকে, দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যে অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন ৬০ শতাংশ কার্যকর হয়, কেন্ট ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে একই সময়ে তা ৬৬ শতাংশ কার্যকর।
পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ড জানিয়েছে, ফাইজারের ভ্যাকসিনের পরে অ্যাস্ট্রাজেনেকার দ্বিতীয় ডোজ ভ্যাকসিন সরবরাহ করার কারণে ভ্যাকসিন দুটির কার্যকারিতার হারের এই পার্থক্য দেখা যেতে পারে।
অন্যান্য গবেষণার তথ্যে দেখা গেছে, অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ কার্যকারিতা পেতে তুলনামূলক বেশি সময় লাগে।
৫ এপ্রিল থেকে ১৬ মে পর্যন্ত ১২,৬৭৫ টি জিনোম সিকুয়েন্স সংগ্রহ করে তার ওপর ভিত্তি করে গবেষণাটি করা হয়েছে। এই নমুনায় ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ছিল ১০৫৪টি।
প্রতিনিয়তই ভাইরাসের মিউটেশন হওয়ায় ভাইরাসের বিরুদ্ধে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতার হারেও ভিন্নতা দেখা যাওয়ার আশঙ্কা ছিল প্রথম থেকেই।
একারণেই, ভারতীয় ও কেন্ট ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধেও ফাইজার ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনের উচ্চ কার্যকারিতার হার বেশ স্বস্তিদায়ক।
ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন অবশ্যই তুলনামূলক কম সুরক্ষা দিচ্ছে, কিন্তু তার মানে এই নয় যে একেবারেই সুরক্ষা দিচ্ছে না কিংবা ভ্যাকসিন গ্রহণের কোনো সুফল পাওয়া যাবে না।
যে সময় থেকে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ বিপজ্জনক মাত্রায় ছড়িয়ে পড়া শুরু হয়, সে সময়ের বিভিন্ন বয়সী আক্রান্তদের তথ্য ব্যবহার করা গবেষণাটিতে।
গবেষণাটির প্রধান গবেষক ডা. জেইমি লোপেজ বার্নাল জানিয়েছেন, ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ দেওয়ার পরবর্তী সময়ের তুলনায় দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার পর উচ্চ মাত্রার কার্যকারিতার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
ইংল্যান্ডে এখন পর্যন্ত ৫ কোটির বেশি ডোজ ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। ৩ কোটির বেশি মানুষ প্রথম ডোজ ভ্যাকসিন নিয়েছেন, দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ১ কোটি ৮০ লাখের বেশি মানুষ।
পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ডের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ভ্যাকসিন দেওয়ার কারণেই ১৩ হাজার মৃত্যু ও ৩৯ হাজারের বেশি মানুষের গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ঠেকানো গেছে।
- সূত্র: বিবিসি