বিল ও মেলিন্ডা গেটসের সম্পদ ও জনহিতকর যত কাজ
দীর্ঘ ২৭ বছরের দাম্পত্য জীবনের ইতি টানার ঘোষণা দিয়েছেন বিল গেটস ও মেলিন্ডা গেটস। বিচ্ছেদের ফলে তাদের সম্পত্তির ভাগের বিষয়টি জটিল আকার ধারণ করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এক নজরে দেখা যাক এ দম্পতির মোট সম্পদ এবং জনহিতকর কার্যক্রমের দিকে-
বিল গেটস
ফোর্বস সাময়িকীর হিসেবে, বিল গেটস এ মুহূর্তে বিশ্বের চতুর্থ ধনী এবং তার সম্পদের পরিমাণ প্রায় ১৩০ বিলিয়ন ডলারের বেশি। তিনি মাইক্রোসফট কর্পোরেশনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ না করেই ১৯৭৫ সালে শৈশবের বন্ধু পল অ্যালেনের সাথে মাইক্রোসফটের সহ-প্রতিষ্ঠা করেন বিল গেটস; যা পরবর্তীতে বিশ্বের বৃহত্তম ব্যক্তিগত কম্পিউটার সফটওয়্যার সংস্থা হয়ে ওঠে।
১৯৮৬ সালে মাইক্রোসফটের প্রথম পাবলিক অফারিংয়ে গেটস ৪৯% স্বত্ব লাভ করেন যা তাকে মুহূর্তের মধ্যে মিলিওনিয়ারে পরিণত করে।
মাইক্রোসফটের প্রবল প্রবৃদ্ধির ফলে শীঘ্রই তিনি বিশ্বের সবচাইতে ধনী ব্যক্তির খেতাব অর্জন করেন। তবে বিভিন্ন দাতব্য কাজে ব্যক্তিগত সম্পদের অর্থ অনুদানের ফলে তিনি সে খেতাব হারিয়েছেন। পাশাপাশি অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও ফুলেফেঁপে উঠতে থাকে এবং গেটসের প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির সাথে প্রতিযোগীতায় সামিল হয়।
তবে এখনো বিল গেটস যুক্তরাষ্ট্রে বেসরকারিভাবে সবচেয়ে বেশি কৃষিজমির মালিক। ২ লাখ ৪২ হাজার একর কৃষিজমির মালিক তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের ১৮টি অঙ্গরাজ্যে বিল গেটস ও মেলিন্ডা গেটসের মালিকানায় রয়েছে এসব কৃষিজমি। এর মধ্যে লুইজিয়ানায় ৬৯ হাজার ৭১ একর, আরকানসাসে ৪৭ হাজার ৯২৭ একর ও নেব্রাস্কায় ২০ হাজার ৫৮৮ একর কৃষিজমি রয়েছে।
আমেরিকান বিজনেস ম্যাগাজিন ফোর্বসের বিলিয়নিয়ার তালিকায় এ মুহূর্তে বিশ্বের সেরা ধনীর আসনে অধিষ্ঠিত আছেন অ্যামাজন ডটকমের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস। তার পরেই রয়েছেন যথাক্রমে টেসলা ইনকর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্ক এবং লুই ভিটনের প্রধান বার্নার্ড আর্নল্ট ও তার পরিবার। ফোর্বস সাময়িকীর হিসেবে, বিল গেটস এ মুহূর্তে বিশ্বের চতুর্থ ধনী।
গেটস ফাউন্ডেশন
২০০০ সালে ওয়াশিংটনের সিয়াটলে বিল এবং মেলিন্ডা গেটস দম্পতি প্রতিষ্ঠিত করেন দাতব্য প্রতিষ্ঠান বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন। এটি বিশ্বের বৃহত্তম দাতব্য সংস্থাগুলোর মধ্যে একটি যার লক্ষ্য স্বাস্থ্যসেবা বৃদ্ধি ও চরম দারিদ্র্য হ্রাস, শিক্ষার বিস্তার এবং জলবায়ু পরিবর্তন।
১৯৯৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পিছিয়ে পড়া ও সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করার জন্য উইলিয়াম এইচ ফাউন্ডেশন (দ্য বিল এন্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের আগের নাম) ১,৫২৫ কোটি ডলারের বৃত্তি দেয়, যা শিক্ষাখাতে আমেরিকার ইতিহাসে এখন পর্যন্ত সর্বাধিক অনুদান। এ অনুদান আমেরিকায় উচ্চশিক্ষায় পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে। এর মাধ্যমে প্রতি বছর ১,০০০ হাজারের অধিক শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষায় সহায়তা লাভ করে।
স্নাতক সম্পন্ন করা শিক্ষার্থীদের জন্য ২০০০ সালে বিল গেটস 'গেটস কেমব্রিজ' বৃত্তি চালু করেন। 'গেটস কেমব্রিজ' বৃত্তি বর্তমান পৃথিবীতে আর্থিক অনুদানের দিক দিয়ে সর্ববৃহৎ ও সেরা শিক্ষাবৃত্তি।
এশিয়া-আফ্রিকার অনুন্নত দেশসমূহে প্রতিবছর বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে বিল এন্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন। প্রতিষ্ঠানটি টেকসই শিক্ষা ব্যবস্থা, অনুন্নত দেশগুলোতে স্বাস্থ্য খাতে অনুদান, কৃষি খাতের আধুনিকায়ন, প্রাণঘাতী ব্যাধির ভ্যাকসিন আবিষ্কারে বিনিয়োগ ও অনুন্নত দেশগুলোতে অর্থনৈতিক সাহায্য দিয়ে থাকে।
করোনাভাইরাস মহামারীকালীন সময়েও ভ্যাকসিন তৈরীর উদ্যোগ, শনাক্তকরণ এবং গবেষণার জন্য গেটস ফাউন্ডেশন প্রায় ১.৭৫ বিলিয়ন ডলার অনুদান প্রদান করেছে।
তাছাড়া এ প্রতিষ্ঠান ২০১৯ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সারা বিশ্বের বিভিন্ন কর্মসূচীতে ৫ বিলিয়ন ডলার খরচ করেছে।
ফাউন্ডেশনের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, ১৯৯৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বিল এবং মেলিন্ডা গেটস এ ফাউন্ডেশনের জন্য ৩৬ বিলিয়ন ডলার প্রদান করেছেন। এছাড়া এই ফাউন্ডেশনের আরেকজন দাতা ধনকুবের ওয়ারেন বাফেট। তথ্য মতে, মার্কিন ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারী বাফেট ২০০৬ সাল থেকে গেটস ফাউন্ডেশনে তার অংশীদারিত্ব থেকে ৯ বিলিয়ন ডলারের বেশি অনুদান দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, গেটস দম্পতি ও বিনিয়োগকারী ওয়ারেন বাফেট 'দ্য গিভিং প্লেজ' নামক একটি উদ্যোগের সঙ্গে জড়িত যার লক্ষ্য হল-ধনীদের সম্পত্তির সিংহভাগ দাতব্য কাজে ব্যয় করা।
সম্পদের বন্টন
বিল গেটস ও মেলিন্ডা গেটস উভয়ই আশ্বস্ত করেছেন, ফাউন্ডেশনের ওপর এই বিচ্ছেদের কোনো প্রভাব পড়বে না। তারা বিবৃতিতে বলেন, "ফাউন্ডেশনের জন্য আমরা একসাথে কাজ করে যাবো। কিন্তু জীবনের পরবর্তী ধাপে আমরা একত্রে এগিয়ে যেতে পারবো বলে আমরা আর বিশ্বাস করি না।"
বিচ্ছেদের পর তাদের আর্থিক বিবরণ এবং সম্পদের বন্টন কীভাবে হবে তা এখনো অস্পষ্ট। যুক্তরাষ্ট্রের কিং কাউন্টি সুপিরিয়র কোর্টে দায়েরকৃত একটি বিচ্ছেদের চুক্তি অনুসারে, তারা সম্পদের যৌথ বিভাজন চাইছেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তথাকথিত 'কম্যুনিটি প্রপার্টি' আইন সহ কয়েকটি আইন অনুসারে, বিবাহের সময় অর্জিত বেশিরভাগ সম্পত্তি যৌথভাবে স্বামী/ স্ত্রীর অন্তর্গত এবং বিবাহবিচ্ছেদে সমানভাবে বিভক্ত।
তবে স্বামী-স্ত্রী চাইলে কোন সম্পদের পৃথক মালিকানা দাবি করতে পারেন। উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রেও একই আইন বর্তায়।
উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক সময়ে পৃথিবীর শীর্ষ ধনী দম্পতির বিচ্ছেদের দ্বিতীয় ঘটনা এটি। ২০১৯ সালে বিশ্বখ্যাত ই-কমার্স অ্যামাজনের প্রধান নির্বাহী জেফ বেজোসের সাথে দীর্ঘ ২৫ বছরের দাম্পত্য জীবনের অবসান ঘটান তার স্ত্রী ম্যাকেঞ্জি স্কট। ধনকুবেরের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদে স্কট বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের তালিকায় স্থান করে নেন। ফোর্বসের তথ্যানুযায়ী, ডিভোর্সের পর বেজোসের কাছ থেকে অ্যামাজনের এক-চতুর্থাংশ শেয়ারসহ স্কটের মোট সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫৩ বিলিয়ন ডলার।
- রয়টার্স ও অন্যান্য সূত্র অবলম্বনে