বিশ্বব্যাপী জলবায়ু প্রযুক্তির স্টার্টআপে রেকর্ড ৩২ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ
জলবায়ু প্রযুক্তিভিত্তিক নতুন উদ্যোগগুলো চলতি বছরে এ পর্যন্ত ৩ হাজার ২০০ কোটি ডলারের তহবিল সংগ্রহ করেছে। গত অক্টোবরের শেষ দিকে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয় পুঁজি সংগ্রহে নতুন এ রেকর্ডের তথ্য।
নতুন উদ্যোগে পুঁজি লগ্নিকে বলা হয় 'ভেঞ্চার ক্যাপিটাল'। চলতি বছর শেষ হওয়ার আগেই তা ২০২০ সালের পুরো সময়জুড়ে হওয়া বিনিয়োগকে ছাড়িয়েছে। ভেঞ্চার ক্যাপিটাল বিশ্লেষক সংস্থা ডিলরুম এবং প্রমোশনাল এজেন্সি লন্ডন অ্যান্ড পার্টনার্স এর যৌথ প্রতিবেদনে এসব দিক উঠে এসেছে।
জলবায়ু পরিবর্তন রোধ, ক্ষতি প্রশমন ও অভিযোজন সক্ষমতা তৈরিতে নতুন কৌশল ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনে কাজ করছে এ ধরনের টেক স্টার্টআপ। ২০১৬ সালের পর থেকে প্রযুক্তির এ বিকাশমান খাতে বিনিয়োগ বেড়েছে চারগুণ। ২০১৬ সালে এ খাতে বিনিয়োগ হয় মাত্র ৬৬০ কোটি ডলার। জলবায়ু নিয়ে আন্তর্জাতিক সচেতনতা বৃদ্ধির সাথে সাথে এমন প্রযুক্তির চাহিদা বাড়ায় নতুন গতি পাচ্ছে বিনিয়োগ প্রবাহ।
বিশ্বের বড় বড় বিনিয়োগকারী সংস্থার প্রধানরাও জলবায়ু প্রযুক্তিকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা নতুন উদ্যোগকে সমর্থন দানের প্রতি গুরুত্ব দিচ্ছেন। বিনিয়োগ ব্যবসার জায়ান্ট ব্ল্যাকরক-এর প্রধান নির্বাহী ল্যারি ফিঙ্ক জানান, পরবর্তী লাখ কোটি ডলার মূল্যায়নের কোম্পানি জলবায়ু প্রযুক্তি খাতেরই হতে পারে। গত মাসে শীর্ষ বিলিয়নিয়ার বিল গেটসও বলেন, এ খাতে ৮-১০টি টেসলার মতো বড় কোম্পানি তৈরি হওয়ার ধারণা করছেন তিনি।
২০১৬ থেকে ২০২১ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জলবায়ু প্রযুক্তির নব-উদ্যোগগুলোই সবচেয়ে বেশি তহবিল সংগ্রহ করেছে। এরপরই ছিল চীন, সুইডেন ও যুক্তরাজ্যের প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানিগুলো।
তবে পরিবেশ রক্ষায় জোরদার আন্দোলন থাকা ইউরোপেই এ খাতে সবচেয়ে দ্রুত অর্থায়নের ঘটনা ঘটছে বলে জানিয়েছে প্রতিবেদনটি। প্রধানত যেসব কোম্পানি গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ ও বিরূপ জলবায়ুর প্রভাব কমানোর প্রযুক্তি তৈরিতে কাজ করছে তাদের তথ্য এ বিশ্লেষণী প্রতিবেদনে যুক্ত হয়।
ইউরোপে এ খাতে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল নিবেশ ২০১৬ সালে ছিল ১১০ কোটি ডলার, যা এখন সাতগুণ বেড়ে ৮০০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে।
যুক্তরাষ্ট্রে ক্লাইমেট টেক কোম্পানিগুলোর হাব ক্যালিফোর্নিয়ার সান ফ্রান্সিসকো বে এরিয়ার বাইরে এখন যুক্তরাজ্যের লন্ডনই হলো এ ধরনের স্টার্টআপের দ্বিতীয় বৃহত্তম হাব।
২০১৫ সালে প্যারিস জলবায়ু চুক্তির পর থেকে এ পর্যন্ত ৪১৬টি জলবায়ু প্রযুক্তির স্টার্টআপ তৈরি হওয়ার কথাও প্রতিবেদনটিতে জানানো হয়।
লন্ডনে অবস্থিত ক্লাইমেট টেক স্টার্টআপগুলোর মোট বাজারমূল্য এখন দুই হাজার ৮০০ কোটি ডলার।
গুগল সার্চের প্রতিযোগী একটি কোম্পানি ইকোশিয়া। তারা সার্চ ইঞ্জিনে প্রাপ্ত বিজ্ঞাপনের অর্থ ব্যয় করে বৃক্ষরোপণে। গত মঙ্গলবার কোম্পানিটি ৩৫ কোটি ইউরোর একটি নতুন ভেঞ্চার ক্যাপিটাল তহবিল গঠনের ঘোষণা দেয়। এ তহবিল থেকে ইউরোপজুড়ে গড়ে ওঠা জলবায়ু প্রযুক্তির নতুন উদ্যোগে বিনিয়োগ সমর্থন দেওয়া হবে।
ইকোশিয়ার সিইও ক্রিশ্চিয়ান ক্রোল মার্কিন গণমাধ্যম সিএনবিসিকে বলেন, "জলবায়ু পরিবর্তনের সমাধান করাই আমাদের লক্ষ্য। ইকোশিয়া দীর্ঘদিন ধরেই সে লক্ষ্য বাস্তবায়নে বৃক্ষরোপণ চালিয়ে যাচ্ছে।"
এ পর্যন্ত কোম্পানিটি ১৩ কোটি ৬০ লাখ গাছ লাগিয়েছে বলেও জানান ক্রোল।
এ ব্যাপারে লন্ডন অ্যান্ড পার্টনার্সের লরা সিট্রন এক বিবৃতিতে বলেছেন, "জলবায়ু পরিবর্তন বিরোধী যুদ্ধে প্রযুক্তিখাত নতুন উদ্ভাবন ও সমাধানের মাধ্যমে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে। মৌলিক দিকগুলোতে তাদের বিশাল অবদান রাখার সুযোগ রয়েছে।"
বিশ্লেষণী প্রতিবেদনের তথ্য আগামীর সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেয় বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
- সূত্র: সিএনবিসি