ব্রিটেনে শুরু হওয়া টিকা পরবর্তী কিছু প্রশ্ন...
সর্বশেষ পরীক্ষাতেও সফলভাবে উত্তীর্ণ মার্কিন কোম্পানি ফাইজার ইঙ্কের টিকাদান কর্মসূচি শুরু করেছে ব্রিটেন। বিশ্বে এই প্রথম সুষ্ঠুভাবে ট্রায়াল চালানো একটি টিকা প্রদাণ শুরু হলো। ব্রিটিশ ওষুধ প্রশাসন বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী নিয়ামক সংস্থা। ভ্যাকসিনের মান, কার্যকারিতা আর উৎপাদন বিধিমালা বিস্তারিত বিশ্লেষণ করেই জরুরি প্রয়োগের অনুমোদন দেওয়ার কথা জানিয়েছে সংস্থাটি।
কোনো প্রতিষেধকের ব্যাপারে তাদের নেওয়া সিদ্ধান্ত পৃথিবীর অন্যান্য দেশের কর্তৃপক্ষকেও প্রভাবিত করবে। তাই দেশটির টিকা অনুমোদন ও তার সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে।
তবে ফাইজার ইঙ্ক যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি হলেও এখনও সেখানে জরুরি প্রয়োগের অনুমোদন পায়নি। তার আগেই যুক্তরাজ্য কেন অনুমোদন দিল তা নিয়েও প্রশ্ন জাগে।
গত সপ্তাহেই সবার আগে যখন ব্রিটেন ফাইজার টিকার অনুমোদন দেয় তখন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ সংক্রামক ব্যাধি বিশেষজ্ঞ ডা. অ্যান্থনি ফাউচি বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র যতোটা সতর্কতার সঙ্গে ভ্যাকসিনের তথ্য পর্যালোচনা করছে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ ততোটা সতর্কতা দেখাননি।
তার এই বক্তব্যকে কেন্দ্র করেই কিছুটা উদ্বেগ দেখা দেয়। অবশ্য, তার পরের দিনই নিজের পূর্বের বক্তব্য থেকে সরে এসে ফাউচি বলেন, 'আমার দৃঢ় বিশ্বাস বৈজ্ঞানিক এবং নিয়ামক সংস্থা'র দৃষ্টিকোণ থেকে যুক্তরাজ্য টিকা অনুমোদনে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে।'
প্রথমে কারা টিকাটি পাবেন?
প্রথম ডোজ গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছেন সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা জনসমষ্টি; ডাক্তার, নার্স, ৮০ বছরের বেশি বয়োবৃদ্ধ এবং নার্সিং হোমের কর্মীরা। ফাইজারের টিকা প্রথম গ্রহণ করেন ব্রিটেনের ৯০ বছর বয়সী এক নারী, মার্গারেট কিন্যান।
টিকাগ্রহণের পর কখন স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফেরা যাবে?
সমাজের সকল ব্যক্তির দেহে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে উঠলেই কেবলমাত্র স্বাভাবিক জীবনযাত্রা সচল হওয়া সম্ভব। কোনো দেশে অনুমোদন মেলা মাত্রই প্রথমে সীমিত সংখ্যক কিছু ব্যক্তিকে তা দেওয়া সম্ভব হবে। অন্তত প্রথম কয়েক মাসে জনসংখ্যার নির্দিষ্ট কয়েক শতাংশ টিকা পাবেন। তারপর সরবরাহ বাড়লে অন্যদেরও এর আওতায় আনা যাবে।
একবার বিপুল সংখ্যক মানুষকে টিকার আওতায় আনা গেলেই, আক্রমণ করার শিকার সহজে খুঁজে পাবে না ভাইরাস। এর ফলে ২০২১ সালের শরৎকাল নাগাদ পৃথিবীজুড়ে জন-জীবন স্বাভাবিক ধারায় ফিরতে পারবে এমনটাই আশা করা হচ্ছে।
টিকাগ্রহণের পরও কী মাস্ক পরতে হবে?
মহামারিতে মাস্ক পরার বিকল্প নেই। তবে চিরকাল এমনটা করে যেতে হবে- এমনটাও নয়। যেমন যুক্তরাষ্ট্রে চলতি মাসেই অনুমোদন পেতে পারে ফাইজার ও মডের্না ইঙ্কের তৈরি দুটি টিকা। এগুলো কোভিড-১৯ আক্রান্ত হওয়া ঠেকাবে।
তবে টিকা পাওয়া ব্যক্তি নিজে আক্রান্ত না হলেও তিনি জীবাণুটি কোনো প্রকার উপসর্গ ছাড়াই বহন করে যিনি টিকা নেননি তার দেহে ছড়িয়ে দেবে কিনা- ট্রায়ালগুলির তথ্য সেদিকটা যাচাই করে দেখেনি।
আসলে দ্রুত প্রতিষেধক তৈরির চাপ থাকার কারণেই এই বিশ্লেষণের অবসর পাননি বিজ্ঞানীরা।
টিকা নিলে কী ব্যথা লাগবে? পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কেমন হতে পারে?
ফাইজার/ বায়োএনটেকের টিকা বাহুতে ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে ব্রিটেনে। এপর্যন্ত কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে যত টিকা আবিষ্কৃত হয়েছে যেমন; মডের্না বা অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা- তার সবগুলোই এভাবে দেওয়ার জন্য তৈরি। তবে অন্য কোনো ওষুধের ইঞ্জেকশন নেওয়ার সঙ্গে টিকা নেওয়ার অনুভূতির তেমন কোনো পার্থক্য নেই।
ট্রায়াল চলাকালে ফাইজার প্রতিষেধকের ইঞ্জেকশন নিয়েছেন দশ সহস্রাধিক ব্যক্তি। তাদের কেউই এর ফলে খুব বেশি ব্যথা পেয়েছেন বা গুরুতর সমস্যায় পড়েছেন বলে অভিযোগ করেননি। তবে কেউ কেউ মাংসপেশিতে মৃদু টান ধরা এবং মৃদু সর্দি-কাশির মতো উপসর্গ অনুভব করেন। তবে এসব প্রভাব একদিনের বেশি স্থায়ী হয়নি।
টিকাটি কী প্রজনন সক্ষমতা বা উর্বরতায় প্রভাব ফেলবে?
এটি নিতান্তই একটি অমূলক তথ্য। ষড়যন্ত্র তাত্ত্বিকদের অহেতুক রটনা। এমনটা না হওয়ার পেছনেই বরং অনেক বেশি নির্ভরযোগ্য তথ্য আছে।
তবে প্রথমে রটনার প্রসঙ্গেই আসা যাক। ইন্টারনেটে এমন কিছু দাবি ভেসে বেড়াচ্ছে যে, করোনাভাইরাস টিকা নাকি নারীর সন্তান ধারণের ক্ষমতা হ্রাস করে।
এই দাবির পেছনে মূল যুক্তি হলো; করোনার সিংহভাগ টিকা সার্স কোভ-২ জীবাণুর কাঁটাসদৃশ আবরণে থাকা প্রোটিনের বিরুদ্ধে শরীরে অ্যান্টিবডি উৎপন্নে সাহায্য করে। এই প্রোটিনের গঠনের সঙ্গে নারীর গর্ভে প্রথম গঠিত ভ্রূণনালীর প্রোটিনে সামান্য কিছু সাদৃশ্য আছে। গর্ভস্থ শিশুকে অক্সিজেন ও অন্যান্য পুষ্টি সরবরাহ করে গর্ভকালীন সময় জরায়ুতে অস্থায়ীভাবে গড়ে ওঠা এই সূক্ষ্মনালী । এটি শিশুর রক্তনালী থেকে বর্জ্যও অপসারণ করে।
কিন্তু তার মানে এই নয় যে, করোনার টিকা নারীর গর্ভনালীকে আক্রমণ করবে। কারণ, সেখানে করোনার আবরণের সঙ্গে মিল থাকা প্রোটিনের মাত্রাও অত্যন্ত কম। ফলে অ্যান্টিবডি ওই স্থানে সক্রিয় হওয়ারই অবকাশ পাবে না।
- সূত্র: দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস