ব্যর্থতার উচ্চ ঝুঁকিতে দরিদ্র দেশে টিকা সরবরাহের পরিকল্পনা
উন্নত ও ধনী দেশগুলো যখন জ্ঞান-বিজ্ঞানে নিজেদের অগ্রগতি ও অর্থনৈতিক সক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে বেশিরভাগ টিকার ডোজ কেনার দৌড়ে নামে, তখনই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে জাতিসংঘের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তাই তুলনামূলক কম আয়ের অনুন্নত দেশগুলো যেন টিকা পায় সেই লক্ষ্যে সংস্থাটি গঠন করে কোভাক্স প্রকল্প। এটিই সাম্যের ভিত্তিতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় কোভিড-১৯ টিকা সরবরাহের উদ্যোগ।
তবে কিছু দেশের জাতীয় স্বার্থের কায়েমি মনোভাবে প্রচেষ্টাটি ব্যর্থ হতে পারে, এমন আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সাফল্যের চাইতে ব্যর্থতার এই ঝুঁকিটাই দিনে দিনে আরো স্পষ্ট হচ্ছে। এমনটা হলে, ২০২৪ সালে টিকা গ্রহণের সুযোগ পাবে না দরিদ্র দেশের শত কোটি জনতা।
কোভাক্স বর্তমানে একাধিক চ্যালেঞ্জের মুখে। সবচেয়ে বড় বাঁধা স্বল্প আয়ের দেশের অবকাঠামো অনুসারে সরবরাহ করা যায় এমন টিকা খুব বেশি অনুমোদন পায়নি। যেসব টিকা অনুমোদন পেয়েছে সেগুলোর বেশিরভাগই আবার উন্নত বিশ্বে তৈরি। এবং ধনী দেশগুলো এসবের বিপুল চালান অগ্রিম কিনে রেখেছে। সেই চালানের চাহিদা মিটিয়ে কোভাক্স তার লক্ষ্যমাত্রা অনুসারে প্রতিষেধকের ডোজ পাবে কিনা- সেটাও নিশ্চিত নয়।
এই সমস্যা সমাধানে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে লাইসেন্স পেয়েছিল ভারতের সেরাম ইন্সটিটিউডের মতো উন্নয়নশীল দেশের বৃহৎ কিছু টিকা উৎপাদক সংস্থা। তবে তারাও এখন জাতীয় স্বার্থের কথাই আগে ভাবছে। অথচ, কোভাক্স জোট সংস্থাটির সরবরাহের উপর অনেকখানি নির্ভরশীল।
ইতোমধ্যেই সেরামের মুখ্য নির্বাহী জানিয়েছেন, টিকা উৎপাদনের পর সবার আগে ভারতের চাহিদা পূরণই অগ্রাধিকার পাবে।
এতো গেল উৎপাদক পর্যায়ের সমস্যা। গবেষণা পর্যায়েও বাঁধা কম নয়। যেমন; অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার যৌথভাবে তৈরি প্রার্থী টিকা অন্যদের তুলনায় অনেক ধীরগতির পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ফলে নিয়ামক সংস্থার অনুমোদন লাভেও আছে দেরির শঙ্কা।
বিশ্বব্যাপী টিকা সরবরাহে নানা দেশের সরকার, ওষুধ কোম্পানি, দাতব্য সংগঠন এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহের জোট গ্যাভি। তারা জাতিসংঘের কোভাক্স পরিকল্পনার অংশীদার। দরিদ্র দেশে টিকা সরবরাহে অনেক আগে থেকেই সংস্থাটি কাজ করছে।
গ্যাভি সম্প্রতি আর্থিক ক্ষতি নিরূপণ বিষয়ক প্রতিবেদনে আলোচিত তথ্যগুলো তুলে ধরে- কোভাক্স পরিকল্পনার ভবিষ্যৎ নিয়ে তীব্র উদ্বেগ প্রকাশ করে।
আর শত শত মানুষের জন্য টিকা কিনতে বিপুল অর্থও একটা বিষয়। কোভাক্সের লক্ষ্য আগামী বছরে দরিদ্র দেশের কমপক্ষে ২০ শতাংশ নাগরিককে টিকার আওতায় আনা। এজন্য তারা ৪৯০ কোটি ডলারের চাহিদার কথা প্রকাশ করে। ইতোমধ্যেই, যে ২১০ কোটি ডলার পাওয়া গেছে তা সহকারেই আলোচিত পরিমাণ পুঁজির প্রয়োজন হবে।
অবশ্য, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) কর্মকর্তারা এই বিশ্লেষণের সঙ্গে একমত নন। তারা জানান, এখনও নির্দিষ্ট কোনো ওষুধ কোম্পানির সঙ্গে পরিকল্পনা মাফিক চুক্তি হয়নি। তাছাড়া, বৃহৎ উৎপাদক নানা দেশের সঙ্গে এখনও বাড়তি ডোজ সরবরাহের আলোচনা চলমান। সব মিলিয়ে অগ্রগতি আসলে খুব শিগগির কোভাক্স পরিকল্পনার রূপরেখা ঘোষণা করা হবে।
এদিকে দরিদ্র দেশের প্রধান আশা-ভরসার কেন্দ্র কোভাক্স। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ২০২১ সাল নাগাদ দরিদ্র ও মধ্য আয়ের দেশে ২শ' কোটি ডোজ দেওয়ার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে এর মাধ্যমে। বাংলাদেশসহ এশিয়া, আফ্রিকা এবং লাতিন আমেরিকার ৯১টি দেশ এই পরিকল্পনার অংশ।
তবে রয়টার্সের কাছে ফাঁস করে দেওয়া কিছু গোপন নথিতে গ্যাভি জানিয়েছে উদ্যোগটি তীব্র অর্থ সঙ্কটে পড়েছে। সঙ্গে চালান পাওয়া এবং জটিল চুক্তি ভিত্তিক ব্যবস্থা নিয়েও দেখা দিচ্ছে অনিশ্চয়তা। ফলে শেষমেষ লক্ষ্য অর্জন করাটাই অসম্ভব হয়ে পড়বে। .
- সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান