করোনা ভ্যাকসিন নেওয়ার ‘কোনো মানে নেই,’ বললেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট
করোনা ভ্যাকসিন নেওয়ার 'কোনো মানে নেই' উল্লেখ করে ভ্যাকসিন নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারো (৬৬)।
এর আগে করোনা মহামারিকে 'লিটল ফ্লু' বলে উপহাস করেছিলেন তিনি। অথচ করোনায় আক্রান্ত হয়ে তার দেশে এ পর্যন্ত ৬ লাখেরও বেশি মানুষ মারা গেছে।
মঙ্গলবার বলসোনারো একটি রেডিও স্টেশনকে বলেন, "আমি ভ্যাকসিন না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।" তার মতে, একবার সংক্রমিত হওয়ার কারণে এমনিতেই তার অ্যান্টিবডির মাত্রা এখন "আকাশচুম্বী।"
গত বছরের জুলাইয়ে করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি।
বলসোনারো আরও বলেন, "আমি নতুন গবেষণাগুলো দেখেছি। আমি কেন ভ্যাকসিন নেব?" এর আগে, ভ্যাকসিন কেনার বিষয়টিকে 'উন্মাদনা' বলে উল্লেখ করলেও বলসোনারো জানান, তিনি ভ্যাকসিন-বিরোধী নন।
ব্রাজিলে কোভিড আক্রান্তদের মৃত্যুর সংখ্যা ৬ লাখের বেশি হওয়ার মাত্র কয়েক দিনের মাথায় এই বক্তব্য আসায় তার প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছে অনেকেই। বলসোনারোর বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান ক্ষুধা, দারিদ্র্য এবং মুদ্রাস্ফীতির মতো সমস্যা থেকে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টার অভিযোগও আনে তারা।
দ্য কোশ্চেন অব সাইন্স ইন্সটিটিউট নামক একটি সুশীল সমাজ গোষ্ঠীর প্রধান নাটালিয়া প্যাস্টার্নাক বলেন, "এটি একটি মূর্খ ও স্বার্থপর সিদ্ধান্ত। ভ্যাকসিন নেওয়া মানে কেবল নিজেকে রক্ষা করা নয়, এর মানে আপনার আশেপাশের লোকদের সুরক্ষিত রাখা।"
প্যাস্টার্নাক বলেন, উচ্চ অ্যান্টিবডির মাত্রা নিয়ে বলসোনারোর দাবিটি ভুল। "রক্তে অ্যান্টিবডির মাত্রার মাধ্যমে কেউ সুরক্ষিত কিনা তা বোঝার উপায় নেই। ভাইরাসের সংস্পর্শে আসা অনুযায়ী অ্যান্টিবডির মাত্রা ওঠা-নামা করতে পারে… অর্থাৎ, রক্তে অ্যান্টিবডির মাত্রা ক্রমাগত পরিমাপ করলেই আপনি সুরক্ষিত কিনা তা বোঝা যাবে না।"
কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিদর্শক প্যাস্টার্নাক আরও যোগ করেন, "আপনি আদতেই সুরক্ষিত কিনা তা বোঝা সম্ভব দেহের মেমোরি সেলের মাধ্যমে। কিন্তু একটি সাধারণ অ্যান্টিবডি পরীক্ষার মাধ্যমে তা পরিমাপ করা যায় না।"
যুক্তরাজ্যের একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় আবার বলা হয়, পূর্ববর্তী সংক্রমণ একজন ব্যক্তিকে কোভিড থেকে দীর্ঘমেয়াদী সুরক্ষা দিতে পারে না।
এদিকে চলতি সপ্তাহে ব্রাজিলে সংক্রমণের হার ০.৬ শতাংশে নেমে এসেছে। গত বছরের এপ্রিলের পর এটিই দেশটিতে সংক্রমণের সর্বনিম্ন হার। এনএইচএস-অনুপ্রাণিত জনস্বাস্থ্য পরিষেবার গণটিকা অভিযানের ফলে এটি সম্ভব হয়েছে, বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
এখন পর্যন্ত দেশটির ১৫৪ মিলিয়ন, অর্থাৎ ৭২ শতাংশেরও বেশি মানুষ ভ্যাকসিনের কমপক্ষে একটি ডোজ পেয়েছে। এছাড়া ভ্যাকসিনের ডোজ সম্পন্ন করেছে ৪৭ শতাংশ মানুষ। সব মিলিয়ে দেশটিতে ২৫৩ মিলিয়নেরও বেশি ডোজ দেওয়া হয়েছে।
প্যাস্টার্নাক বলেন, "বলসোনারো যা করছেন তা ভবিষ্যতে ভ্যাকসিন-বিরোধী মনোভাবের সৃষ্টি করতে পারে। এটি আমাদের হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়। আগামী ১০ বছরের মধ্যে এর প্রভাব কী হতে পারে তা আমাদের ভাবতে হবে।"
- সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান