বড়দিনেও ব্রেক্সিট পরবর্তী চুক্তির আলোচনায় ইইউ প্রতিনিধিরা
পরিবারের সাথে সময় কাটানো, একসাথে টার্কির মাংস খাওয়া বা উপহারের মোড়ক খোলার বদলে যুক্তরাজ্যের সাথে ব্রেক্সিট পরবর্তী চুক্তির পর্যালোচনা করেই বড়দিন কাটাচ্ছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা।
গত বৃহস্পতিবার চূড়ান্ত হওয়া চুক্তি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত জাতিগুলো নিয়ে গঠিত পার্মানেন্ট রিপ্রেজেনটেটিভ কমিটিতে আলোচনা করবেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন পক্ষের প্রধান আলোচক মাইকেল বার্নিয়ার।
বিগত মাসগুলোতে একাধিকবার আলোচনা ও মতবিরোধের পর আসন্ন ৩১ ডিসেম্বরে সময় শেষ হওয়ার কিছুদিন আগেই চূড়ান্ত হলো ব্রেক্সিট পরবর্তী বাণিজ্য চুক্তি।
এখন শুধু ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতা, ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট ও যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে চুক্তি স্বাক্ষর হওয়া বাকি।
আগামী ৩০ ডিসেম্বর এনিয়ে আলোচনায় বসবেন ব্রিটিশ আইনপ্রণেতারা।
ইইউ'র সবগুলো সদস্য দেশের চুক্তি স্বাক্ষরের পর চুক্তির আনুষ্ঠানিক অনুমোদনের ব্যাপারে ভোটগ্রহণ হবে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টে।
৩১ ডিসেম্বরের আগে জরুরি ভিত্তিতে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া গ্রহণের সময় নেই বলে জানিয়েছে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট।
এর পরিবর্তে ইইউ-যুক্তরাজ্যের চুক্তি অস্থায়ী অনুমোদন দিয়ে পরবর্তীতে নতুন বর্ষে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের সদস্যদের মাধ্যমে চুক্তির আনুষ্ঠানিক অনুমোদন দেয়া হবে বলে জানিয়েছে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট।
চুক্তির মূল বিষয়
- শুল্ক ও কোটা মুক্ত বাণিজ্য
- মুক্ত চলাচলের অধিকার থাকছে না। ভিসা ছাড়া যুক্তরাজ্যের নাগরিকদের ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে বসবাস, পড়াশোনা, কাজ করার ও ব্যবসা করার সুযোগ থাকছে না।
- যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর মধ্যে সীমান্তে চেকিং চালু হবে।
- আয়ারল্যান্ড দ্বীপে প্রজাতন্ত্রী আয়ারল্যান্ড ও নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের মধ্যে কোনো কড়াকড়ি সীমান্ত ব্যবস্থা থাকবে না।
- আগামী পাঁচ - সাড়ে পাঁচ বছরের মধ্যে মৎস্যশিকার নীতিতে পরিবর্তন আনতে পারবে যুক্তরাজ্য। আগামী পাঁচ বছর যুক্তরাজ্যের জলসীমায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের শিকার করা মাছের ২৫ শতাংশ পাবে যুক্তরাজ্য।
- পরিবেশ রক্ষায় ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে ও কার্বন প্রাইসিং এর ক্ষেত্রে যৌথ অঙ্গীকার।
- সামাজিক ও শ্রমিক অধিকার রক্ষায় যৌথ অঙ্গীকার।
- শুল্কের স্বচ্ছতার মান বজায় রাখা।
- পরিবহন ক্ষেত্রে যাত্রী ও শ্রমিক অধিকার রক্ষা।
- হরাইজন ইউরোপ সহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের কিছু প্রকল্পে ২০২৭ সাল পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের অংশগ্রহণ থাকবে।
যুক্তরাজ্য সরকারের ওয়েবসাইটে ইতোমধ্যেই চুক্তির সারসংক্ষেপ প্রকাশিত হয়েছে।
চুক্তির ঘোষণার পরই যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন জানান সম্পূর্ণ ইউরোপের জন্যই এ চুক্তি মঙ্গলজনক এবং সংঘাতপূর্ণ সম্পর্কের ক্ষেত্রে স্থিতিশীলতা ও নিশ্চয়তার মাধ্যমে নতুন মাত্রা এনে দেবে এ চুক্তি।
"আমাদের আইন ও ভবিষ্যতের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেয়েছি আমরা। ১ জানুয়ারি থেকেই কাস্টমস ইউনিয়ন ও একক বাজারের অধীনে থাকবে না যুক্তরাজ্য। ব্রিটিশ পার্লামেন্টেই ব্রিটিশ আইন প্রণয়ন হবে। ইউরোপিয়ান কোর্ট অব জাস্টিসের এখতিয়ারও শেষ হবে।" বলেন তিনি।
যুক্তরাজ্য কানাডার মতো ৬৬০ বিলিয়ন পাউন্ড (৮৯৩ বিলিয়ন ডলার) সমমূল্যের বাণিজ্যিক চুক্তি অর্জন করেছে এবং মৎস্য শিকার চুক্তির কথা উল্লেখ করে যুক্তরাজ্য নিজস্ব জলসীমার নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেয়েছে এমন দাবিও করেন বরিস জনসন।
ইউরোপিয়ান কমিশনের আরসুলা ভনডার লিউন জানান, ইইউ ন্যায্য ও ভারসাম্যপূর্ণ বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, তবে আপস-আলোচনায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন এগিয়ে ছিল এমন ইঙ্গিতও দেন তিনি।
"যদি কোনোভাবে ব্রেক্সিট পরবর্তী বাণিজ্য চুক্তি সমস্যার সম্মুখীন হতো তা উভয়পক্ষের জন্যই ক্ষতিকর হতো। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের চেয়ে যুক্তরাজ্যই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতো। একারণেই সুবিধাজনক অবস্থানে থাকার সাপেক্ষে উভয়পক্ষের জন্য মঙ্গলজনক এমন চুক্তিতে পৌঁছাতে পেরেছি।" বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
"তাই আমি সকল ইউরোপিয়ানদের বলতে চাই, ব্রেক্সিটকে পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার সময় এসেছে। আমাদের ভবিষ্যৎ ইউরোপেই লেখা আছে।"
- সূত্র: সিএনএন