ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওপর ‘শিগগিরই’ শুল্ক আরোপ, যুক্তরাজ্যের বিষয় সমাধান করা যাবে: ট্রাম্প
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2025/02/04/thumbs_b_c_2ff2a4d02369303526ac52982d547992_1.jpg)
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পণ্যগুলোর ওপর "খুব শিগগিরই" শুল্ক আরোপ করা হতে পারে। খবর বিবিসি'র।
ট্রাম্প বলেছেন, "তারা আমাদের গাড়ি নেয় না, আমাদের কৃষিপণ্য নেয় না, তারা আমাদের প্রায় কিছুই নেয় না আর আমরা তাদের থেকে সব কিছুই নেই। লাখ লাখ গাড়ি, অনেক পরিমাণে খাবার ও কৃষিপণ্য।"
তিনি আরও বলেন, তার ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার কীর স্টারমারের সাথে ভালো সম্পর্ক রয়েছে এবং যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বাণিজ্য বিষয়ক সমস্যাগুলো সমাধান করা সম্ভব হবে।
ইইউ-এর ওপর শুল্ক আরোপের জন্য কোনো সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে কি না, বিবিসি'র এমন প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, "আমি সময়সীমা বলতে চাই না। তবে এটি খুব শিগগিরই হতে পারে।"
এদিকে, ২৭ সদস্যের ইউরোপীয় ইউনিয়ন ট্রাম্পের কানাডা, মেক্সিকো এবং চীন বিরোধী শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়ে বলেছে, যদি তারা এর লক্ষ্যবস্তু হয় তবে তারা "কঠোরভাবে প্রতিক্রিয়া" জানাবে।
চীন বলেছে, তারা "পাল্টা ব্যবস্থা" নিতে পারে।
তবে, সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদারের আশ্বাসে কানাডা ও মেক্সিকোর ওপর শুল্ক স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ট্রাম্প। ৩০ দিনের এই বিরতি ট্রাম্পের সঙ্গে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ও মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লাউডিয়া শেইনবাউমের একাধিক আলোচনার পর ঘোষণা করা হয়।
ব্রিটেনের সঙ্গে বাণিজ্য নিয়ে ট্রাম্প বলেছেন, "যুক্তরাজ্য সঠিক পথে নেই। তবে আমি নিশ্চিত, এটা ঠিক করা সম্ভব হবে।"
তিনি বলেন, "আমাদের (ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সাথে) কয়েকটি বৈঠক হয়েছে। একাশিকবার ফোনে কথা হয়েছে। আমাদের মধ্যে ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠছে।"
শুল্ক হলো এমন এক ধরনের কর যা অন্য দেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর আরোপ করা হয়। এই করগুলো সাধারণত দেশীয় শিল্পকে বিদেশি প্রতিযোগিতা থেকে রক্ষা করার একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
বিদেশি পণ্যের দাম বাড়িয়ে, স্থানীয় পণ্য কিনতে গ্রাহকদের উৎসাহিত করা হয়। ফলে দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি চাঙ্গা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বেশিরভাগ শুল্ক পণ্যের মূল্য অনুযায়ী নির্ধারিত হয় এবং সাধারণত আমদানিকারক দেশ এটি প্রদান করে।
তবে, যেহেতু দেশগুলো শুল্কের পালটা ব্যবস্থা হিসেবে নিজেদের শুল্ক আরোপ করে, তাই দুই দেশেই ব্যবসা ও গ্রাহকরা প্রভাবিত হতে পারে।
ট্রাম্প ইইউ পণ্যগুলোর ওপর শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন, যাতে তার দেশ ইউরোপের সঙ্গে দীর্ঘদিনের বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে পারে। যখন কোনো দেশ তার আমদানি বাড়িয়ে দেয়, কিন্তু রপ্তানি কম হয় তখন বাণিজ্য ঘাটতি ঘটে।
ইউরোস্ট্যাট-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২০টি দেশ আমেরিকায় অনেক বেশি পণ্য রপ্তানি করেছে। সবচেয়ে বড় বাণিজ্য উদ্বৃত্ত ছিল জার্মানির, যার প্রধান কারণ ছিল গাড়ি ও যন্ত্রাংশের রপ্তানি। এরপরই ছিল ইতালি এবং আয়ারল্যান্ড।
ট্রাম্প ইউরোপীয় ইউনিয়নের গাড়ি রপ্তানি নিয়ে বারবার অভিযোগ করেছেন, কারণ যুক্তরাষ্ট্রে আসা গাড়ির সংখ্যা কম, কিন্তু ইউরোপে পাঠানো গাড়ির সংখ্যা অনেক বেশি।
গত সপ্তাহে, ব্রিটিশ ব্যবসা সচিব জনাথন রেইনল্ডস বিবিসি-কে বলেছিলেন যে, যুক্তরাজ্যকে কোনো শুল্কের আওতায় আনা উচিত নয়, কারণ যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তাদের পণ্য বাণিজ্য ঘাটতি নেই।
ট্রাম্পের মন্তব্যের পর ইউরোপীয় প্রধান শেয়ার বাজারগুলোর পতন ঘটেছে।
বিশ্বের কিছু বড় ইউরোপীয় গাড়ি নির্মাতা কোম্পানির শেয়ারও কমেছে। এর মধ্যে মধ্যে ফক্সভাগেন, বিএমডব্লিউ, পোরশে, ভলভো কারস, স্টেলান্টিস এবং ট্রাক নির্মাতা ডেইমলার ট্রাকের শেয়ার ৫ শতাংশ থেকে ৬ শতাংশ কমেছে। ফরাসি গাড়ি যন্ত্রাংশ সরবরাহকারী ভ্যালো-এর শেয়ার ৮ শতাংশ কমেছে।
বিনিয়োগ ব্যাংক স্টিফেল-এর বিশ্লেষকরা একটি নোটে লিখেছেন, "আমরা বিশ্বাস করি, শুল্কের কারণে ফক্সভাগেন-এর রাজস্বের প্রায় ৮ বিলিয়ন ইউরো (৮.১৮ বিলিয়ন ডলার) এবং স্টেলান্টিসের রাজস্বের প্রায় ১৬ বিলিয়ন ইউরো প্রভাবিত হবে।"
যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারও কমে গেছে। তবে মেক্সিকোর ওপর শুল্ক স্থগিতের সংবাদে প্রধান সূচক কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা পণ্যের ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপের সম্ভাবনা বিশ্ব নেতাদের জন্য উদ্বেগের কারণ। এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশে পণ্য বিক্রি করা আরও কঠিন করে তুলবে।
তবে শুল্ক ট্রাম্পের অর্থনৈতিক নীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তিনি এটিকে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান রক্ষা এবং কর রাজস্ব বাড়ানোর একটি উপায় হিসেবে দেখেন।