মালয়েশিয়ার কোম্পানিগুলোকে অন্তত একজন নারী পরিচালক নিয়োগের নির্দেশ সরকারের
আগামী বছর থেকে মালয়েশিয়ার সকল পাবলিক কোম্পানি বা ব্যবসায় সংস্থার পরিচালনা পর্ষদে কমপক্ষে একজন নারী পরিচালক নিয়োগ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে দেশটির সরকার।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশে ব্যবসা ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ আরও বেশি দৃঢ় করার লক্ষ্যেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানায় কর্তৃপক্ষ।
বড় পাবলিক কোম্পানিগুলোতে আগামী বছর, অর্থাৎ ২০২২ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে এবং অন্যান্য তালিকাভুক্ত সংস্থাগুলোতে আগামী বছরের ১ জুন থেকে এই নির্দেশনা কার্যকর হবে। দেশটির অর্থমন্ত্রী জাফরুল আবদুল আজিজ শুক্রবার এ কথা জানিয়েছেন।
জাফরুল বলেন, 'সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় নারীদের ভূমিকাকে স্বীকৃতি দেওয়া এবং নেতৃত্বকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি পরিচালনা পর্ষদের কার্যকারিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।'
তিনি আরও বলেন, 'অর্থনীতিতে নারীদের অবদান কখনোই বিতর্কিত ছিল না, এবং বাস্তবে এটি আরও জোরদার করা উচিত।'
বিশ্বজুড়ে সরকার, রাজনৈতিক দল এবং নির্বাহী গোষ্ঠীগুলো পরিচালনা পর্ষদে নারীদের নিয়োগ নিশ্চিতকরণে জোর দিচ্ছে। কারণ গবেষণায় দেখা গেছে, পরিচালনা পর্ষদে নারীদের অংশগ্রহণের ফলে প্রতিষ্ঠানগুলো বেশি কার্যকর সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে।
তবু কিছু নারী সংগঠনের কাছে সরকারের সর্বশেষ এই পদক্ষেপ প্রত্যাশার চেয়ে অনেক কম।
অল উইমেনস অ্যাকশন সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক নিশা সাবানায়াগাম জানান, প্রতিষ্ঠানগুলোতে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণে সরকারের সাম্প্রতিক পদক্ষেপ সত্যিই প্রশংসনীয়। তবে পরিচালনা পর্ষদে মাত্র একজন নারী পরিচালক নিয়োগের ব্যাপারে তিনি সন্তুষ্ট হতে পারেননি।
নারীদের সংখ্যা আরও বাড়ানোর পক্ষে মত দিয়ে তিনি বলেন, সরকারের উচিত ছিল নারী প্রতিনিধিত্বের লক্ষ্যমাত্রা ৩০ শতাংশ নির্ধারণ করা।
এছাড়া তিনি মনে করেন, সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় নারীদের অংশগ্রহণের ব্যাপারটি কেবল কাগজে-কলমে একটি প্রতীক হিসেবে থাকলে সেটি মোটেই ফলপ্রদ হবে না, বরং ব্যাপারটিকে কার্যকরভাবে ধারণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে।
নিশা বলেন, 'জেন্ডার ডাইভার্সিটির অর্থ এই নয় যে, আপনি একজন নারী পরিচালককে নিয়োগ দেবেন যেন সরকারের শর্ত পূরণে নির্দিষ্ট বাক্সে টিকচিহ্ন বসাতে পারেন; বরং আপনাকে বুঝতে হবে নারীদের অংশগ্রহণ শেষ পর্যন্ত আরও সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনে অবদান রাখতে সাহায্য করে।'
উইমেনস সেন্টার ফর চেঞ্জ-এর প্রকল্প পরিচালক কারেন লাই সরকারকে প্রশাসনিক পর্যায়ে নারীদের প্রতিনিধিত্ব আরও বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী ইসমাইল সাবরি ইয়াকুবের ৭০ জনের মন্ত্রিসভায় নারী মন্ত্রী রয়েছেন মাত্র নয়জন।
সংবাদপত্র দ্য স্টার'কে কারেন আরও বলেন, 'সংসদ ও রাজ্যসভাগুলো নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণের ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে রয়েছে এবং এটি নাগরিক পর্যায়ে সরাসরি প্রভাব ফেলছে।'
অর্থমন্ত্রী জাফরুল বলেন, মালয়েশিয়ার ১০০টি বড় পাবলিক কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে নারীদের অংশগ্রহণ রয়েছে প্রায় ২৫ শতাংশ। অন্যদিকে, ২৫২টি এমন কোম্পানি রয়েছে যেগুলোর ২৭ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদে নারীদের অংশগ্রহণ নেই।
এছাড়া, তিনি নারী ও শিশুদের প্রতি যৌন হয়রানির মামলা তদন্ত পরিচালনাকারী পুলিশ ইউনিটকে আরও শক্তিশালী করতে ১৩ মিলিয়ন রিঙ্গিত (৩.১ মিলিয়ন ডলার) বরাদ্দের ঘোষণা দিয়েছেন। সেইসঙ্গে সরকার নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে সচেতনতামূলক কর্মসূচি চালুর পাশাপাশি পারিবারিক নির্যাতনের শিকার এমন মানুষদের জন্য আশ্রয় বাড়ানোর পদক্ষেপ নেবে বলেও জানান তিনি।
-
সূত্র: ব্লুমবার্গ