মেয়েদের স্কুল থেকে নিষিদ্ধের দাবি অস্বীকার করল তালেবান
আফগান নারীদের মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে নিষিদ্ধ করার দাবি অস্বীকার করেছে তালেবান। সম্প্রতি কেবল ছেলেদেরকে স্কুলে ফেরার নির্দেশ দেয় তারা। দেশটির ছাত্রীদেরকে ক্লাসরুমে ফেরার অনুমতি দেওয়ার আগে তাদের জন্য "নিরাপদ পরিবহন ব্যবস্থা" চালু করতে হবে, জানায় দলটি।
তালেবান শিক্ষা মন্ত্রণালয় আফগানিস্তানের ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র ও শিক্ষকদের শনিবার থেকে শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর নির্দেশ দিয়েছে। শুক্রবার জারি করা এই ঘোষণায় নারী শিক্ষার্থীদের কথা উল্লেখ করা হয়নি। ফলে, এবারও দেশটির মেয়েদের মাধ্যমিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে।
১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ পর্যন্ত তালেবান সর্বশেষ ক্ষমতায় থাকাকালে তারা নারীদেরকে শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্র থেকে নিষিদ্ধ করে। সেই সাথে তাদের অধিকারও কঠোরভাবে সীমাবদ্ধ করা হয়।
তবে, শনিবার সিএনএন-কে তালেবান মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেন, নারীদের পড়াশোনার অনুমতি দেওয়া হবে। মুজাহিদ জানান, তালেবান বর্তমানে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির মেয়েদের জন্য নিরাপদ পরিবহন ব্যবস্থা তৈরির কাজ করছে।
তিনি বলেন, "নিরাপদ এবং সুস্থ থাকার জন্য ক্লাসে থাকাকালীন সময়ে তাদের অবশ্যই কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে।"
তিনি আরও উল্লেখ করেন, অন্যান্য বয়সের নারীদের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। "মেয়েরা বেসরকারি এবং সরকারী অর্থায়িত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তাদের পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি আমরা," বলেন মুজাহিদ।
স্কুলে ফিরে যেতে প্রত্যাশী এক আফগান মেয়ে সিএনএনকে বলে, যেখানে তালেবান মেয়েদেরকে প্রাথমিক স্কুলে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে, সেখানে তাদের শুক্রবারের ঘোষণাটি তার কাছে একটি ধাক্কার মত লাগছে।
নিজের পুরো নাম প্রকাশ করতে না চাওয়া তামানা বলে, "আমি স্কুলে ফিরে যাওয়ার এবং আমার স্বপ্নের কাছাকাছি যাওয়ার আশা করছিলাম। কিন্তু এখন সবকিছুই অস্পষ্ট দেখাচ্ছে। যদি তালেবান আমাদের স্কুলে ফিরে যেতে না দেয়, তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ এবং আশা চিরতরে ভেঙে যাবে।"
তালেবান নেতারা এর আগে বেশ কয়েকবার নারীর অধিকারকে সম্মান করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। প্রকাশ্যে জোর দিয়ে তারা বলেছিলেন, নারীরা সমাজে বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করবে এবং শিক্ষার সুযোগ পাবে।
কিন্তু, আফগানিস্তানের বর্তমান বাস্তবতা সেই প্রতিশ্রুতি থেকে বেশ ভিন্ন। দেশের নতুন, কট্টর সরকারের মন্ত্রীসভা থেকে নারীদেরকে সম্পূর্ণভাবে বাদ দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া, তালেবান কিছু ক্ষেত্রে নারীদেরকে তাদের কর্মস্থল ত্যাগ করার নির্দেশ দিয়েছে। এমতাবস্থায় সর্বোপরি পুরুষ শাসিত সরকারের ঘোষণার প্রতিবাদে গত সপ্তাহে একদল নারী কাবুলের রাস্তায় আন্দোলন করলে তাদের উপর চাবুক ও লাঠি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে তালেবান বাহিনী।
এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীদেরকে তাদের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হলেও শ্রেণীকক্ষে নারী ও পুরুষ ছাত্র-ছাত্রীদের আলাদা বসার নিয়ম বাধ্যতামূলক করেছে তালেবান। তাছাড়া, ছাত্রী এবং নারী প্রভাষক ও কর্মচারীদের অবশ্যই শরিয়া আইন বিষয়ে দলটির নিজস্ব ব্যাখ্যা অনুযায়ী হিজাব পরতে হবে।
ইউনিসেফের প্রধান হেনরিয়েটা ফোর জানান, আফগানিস্তানে নারীদেরকে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত করার বিষয়ে তারা চিন্তিত। শুক্রবার তিনি বলেন, "নারীরা পিছিয়ে থাকতে পারে না এবং এটি উচিতও নয়। আর দেরি না করে সব বয়সের মেয়েরা নিজেদের পড়াশোনা পুনরায় শুরু করার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। এর জন্য, শিক্ষিকাদেরকে আবারও শিক্ষকতা শুরু করতে হবে।"
- সূত্র: সিএনএন