রোহিঙ্গা গণহত্যার দায় স্বীকার করে নিতে সু চির প্রতি আহ্বান ৭ নোবেল বিজয়ীর
নেদারল্যান্ডসের হেগে মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) শুরু হচ্ছে রোহিঙ্গা গণহত্যা বিচার মামলার শুনানি। তিন দিনব্যাপী এ শুনানিতে আদালতে হাজির হচ্ছেন মিয়ানমারের নেত্রী অং সাং সু চি । দেশের পক্ষে এ আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াবেন সু চি।
রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যার দায় স্বীকার করে নিতে তার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাত নোবেলজয়ী। একই সঙ্গে ওই ‘গণহত্যা’র জন্য সু চি ও মিয়ানমারের সেনা কমান্ডারদের জবাবদিহিতার আহ্বানও জানান তারা।
সাত নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী হলেন- ইরানের শিরিন এবাদী (২০০৩), লাইবেরিয়ার লেইমা গোই (২০১১), ইয়েমেনের তাওয়াক্কোল কারমান (২০১১), উত্তর আয়ারল্যান্ডের মাইরিয়াদ ম্যাগিয়ার (১৯৭৬), গুয়াতেমালার রিগোবার্তা মেঞ্ছু তুম (১৯৯২), মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জোডি উইলিয়ামস (১৯৯৭) এবং ভারতের কৈলাশ সত্যার্থী (২০১৪)।
২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে আসেন শিরিন এবাদী, তাওয়াক্কোল কারমান ও মাইরিয়াদ ম্যাগিয়ার। সেখানে তারা একশ’ রোহিঙ্গা নারীর সঙ্গে কথা বলেন। বিতাড়িত মিয়ানমারের নাগরিকদের কথা শুনে তারা জানতে পারেন, সেখানে তাদের ওপর নির্মম নির্যাতন ও গণহত্যা হয়েছে, যা মানবাধিকার লঙ্ঘন।
গণহত্যা সংক্রান্ত এ আইনি লড়াইয়ে বিশ্ববাসীর চোখ এখন নেদারল্যান্ডসের পিস প্যালেসে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, আইসিজেতে মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় বেলা তিনটায় রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলার শুনানি শুরু হবে। রাখাইনে রোহিঙ্গা গণহত্যার দায়ে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে দায়ের করা এই মামলার শুনানিতে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলও অংশ নেবে।
১৭ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল এ মামলা পর্যবেক্ষণ করবে। এছাড়া কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া তিনজন রোহিঙ্গাও শুনানি চলাকালে আদালতে উপস্থিত থাকবেন।
চলতি বছরের ১১ নভেম্বর মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ এনে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মামলা করে গাম্বিয়া। মঙ্গলবার গাম্বিয়ার প্রতিনিধি দল গণহত্যার বিষয়ে তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করবে।
গাম্বিয়ার পক্ষে এই মামলার প্রতিনিধিত্ব করবেন দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেল ও আইনমন্ত্রী আবুবকর মারি তামবাদু। বুধবার (১১ ডিসেম্বর) গাম্বিয়ার বক্তব্যের যুক্তি খণ্ডন করবে রোহিঙ্গা ‘গণহত্যায়’ অভিযুক্ত মিয়ানমার।
নেদারল্যান্ডসের আদালতে দায়ের করা মামলার শুনানিতে মিয়ানমারের পক্ষে অংশ নিচ্ছেন দেশটির স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি। তিনি নিজ দেশের পক্ষে বক্তব্য রাখবেন।
তবে আদালতে মিয়ানমারের নেত্রীর অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্তে বিশ্বজুড়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে। হেগের আন্তর্জাতিক আদালতে এই মামলার শুনানি শেষ হবে বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর)। মামলার বিষয়ে গাম্বিয়া তাদের যুক্তি এরই মধ্যে বিশ্ব নেতাদের কাছে তুলে ধরেছে।
তবে মামলার শুনানি নিয়ে বাংলাদেশ সরকার এখনই কোনো মন্তব্য করতে রাজি নয়। একাধিক সূত্র বলছে, যেহেতু সরকার এই মামলা করেনি, তাই মামলার শুনানি পর্যবেক্ষণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ। এজন্য হেগে একটি প্রতিনিধি দল পাঠানো হয়েছে।