শব্দের চেয়েও পাঁচগুণ বেশি গতির ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালালো যুক্তরাষ্ট্র
শব্দের চেয়েও পাঁচগুণ দ্রুত গতিতে চলতে সক্ষম এমন এক হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সোমবার পেন্টাগন এক বিবৃতিতে জানায়, ২০১৩ সালের পর গত সপ্তাহে প্রথমবারের মতো এ ধরনের অস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালালো দেশটির সামরিক বাহিনী।
ডিফেন্স অ্যাডভান্সড রিসার্চ প্রজেক্টস এজেন্সি (ডিএআরপিএ) এক বিবৃতিতে বলেছে, রেইথিয়ন টেকনোলজিস নির্মিত ক্ষেপণাস্ত্রটি নর্থরোপ গ্রুমম্যানের স্ক্র্যামজেট ইঞ্জিন চালু হওয়ার ঠিক কয়েক সেকেন্ড আগে একটি বিমান থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ক্ষেপণাস্ত্রের ইঞ্জিনে 'কম্প্রেসড এয়ার' বা সংকুচিত বাতাসের সঙ্গে হাইড্রোকার্বনকে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ক্ষেপণাস্ত্রটি প্রতি সেকেন্ডে ১,৭০০ মিটার উচ্চতায় উঠতে সক্ষম, যা শব্দের গতির পাঁচগুণ।
বর্তমানে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং চীনের কাছে সবচেয়ে উচ্চগতির হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি রয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় রাশিয়া এবং চীন অনেক এগিয়ে।
চলতি বছরের মে মাসে, রাশিয়া 'স্যাটান ২' নামে তিনটি হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে বলে ঘোষণা দেয়। অনেকেই সে সময় বলেছিল, ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসের মতো বড় আয়তনের জায়গা মুছে ফেলতে সক্ষম।
এর দু'মাস পর রাশিয়া দাবি করে, তারা জিরকন হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালিয়েছে। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন গর্ব করে বলেছিলেন, "এটি পৃথিবীর যেকোনো জায়ায় আঘাত হানতে সক্ষম; এমকি এটি মার্কিন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকেও ভেদ করতে পারবে"।
অন্যদিকে, চীন এখনও পারমাণবিক শক্তির উল্লেখযোগ্য উন্নয়নের মাঝে রয়েছে। হাইপারসনিক পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, উভয় ক্ষেত্রেই দেশটি আরও উন্নয়ন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র হাইপারসনিক এয়ার-ব্রিদিং উইপন কনসেপ্ট (এইচএডব্লিউসি) এর এই ফ্রি ফ্লাইট টেস্ট পরিচালনার তথ্য ডিফেন্স অ্যাডভান্সড রিসার্স প্রজেক্ট এজেন্সি (ডিএআরপিএ)-এর এক বিবৃতিতে নিশ্চিত করা হয়েছে।
এইচএডব্লিউসি'র প্রকল্প ব্যবস্থাপক অ্যান্ড্রু নোয়েডলার বলেন, "সামরিক শক্তির সক্ষমতার দিক দিয়ে এটি যুক্তরাষ্ট্রকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গেল।"
বায়ুমণ্ডলের উপরিভাগ দিয়ে চলা এই হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ঘণ্টায় ৬,২০০ কিলোমিটার গতিতে ছুটবে।
এর আগে ২০০৪ সালে, নাসার মনুষ্যবহীন হাইপারসনিক এয়ারক্রাফট এক্স-৪৩ ঘণ্টায় ৭,৩৬৬ মাইল পর্যন্ত উঁচুতে উঠতে সক্ষম হয়েছিল; যা ছিল সে সময়ের সর্বোচ্চ রেকর্ড।
২০১৯ সালে, ডেইলিমেইলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রেইথিয়ন এবং নর্থরোপ গ্রুমম্যান এমন ক্ষেপণাস্ত্রের উন্নয়ন ঘটিয়েছে, যার ইঞ্জিন তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে থ্রিডি প্রিন্টার।
গত বছর ডিএআরপিএ-এর পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, অ্যারোজেট রকেটডাইনের সঙ্গে প্রায় ২ কোটি ডলারের একটি প্রকল্পে কাজ করছে তারা। সেই প্রকল্পের অধীনে এমন একটি হাইপারসনিক রকেট তৈরি করা হবে, যেটি শত্রুপক্ষের ক্ষেপণাস্ত্রকে মাঝ আকাশেই আটকাতে পারবে।
- সূত্র: ডেইলি মেইল