শ্রম অধিকার উন্নয়নের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিএসপি ফিরে পেতে পারে বাংলাদেশ: বাণিজ্য উপদেষ্টা
বাংলাদেশে শ্রম অধিকারসংক্রান্ত ১১ দফার দ্রুত বাস্তবায়ন চায় যুক্তরাষ্ট্র। এগুলো বাস্তবায়ন হলে দেশটির বাজারে অগ্রাধিকার বাণিজ্য সুবিধাও (জিএসপি) পাওয়া যাবে।
আজ রোববার (২৪ নভেম্বর) সচিবালয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের আন্তর্জাতিক শ্রমবিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি সফররত কেলি এম ফে রদ্রিগেজের নেতৃত্বে ২০ সদস্যের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন এ কথা জানান।
এসময় বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, শ্রম আইন যুগোপযোগী করা, সব শ্রমিকের ইউনিয়ন করার সুযোগ দেওয়া, ন্যুনতম মজুরি নিশ্চিত এবং কর্ম পরিবেশ যথাযথ করাসহ ১১ দফা বাস্তবায়ন করার তাগিদ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
তিনি বলেন, এগুলো করতে পারলে আমরা যুক্তরাষ্ট্রে জিএসপি সুবিধা পাব।
বৈঠকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সেলিম উদ্দিন, ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের চার্জ ডি'অফেয়ার্স মেগান বোল্ডিন এবং অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
উপদেষ্টা বলেন, 'যদি শ্রম অধিকার সঠিকভাবে কার্যকর হয়, তবে বাংলাদেশ নিশ্চিতভাবেই জিএসপি সুবিধা ফিরে পাবে। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিএসপি সুবিধা পাওয়ার জন্য, রপ্তানি প্রতিষ্ঠানগুলোকে আইএলও (আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা) কনভেনশন, স্থানীয় শ্রম আইন, প্রাসঙ্গিক বিধিমালা, ক্রেতা আচরণবিধি এবং তাদের নিজস্ব কোম্পানির নীতিমালা অনুসরণ করতে হবে।'
সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্য সচিব সেলিম উদ্দিন বলেন, 'শ্রম অধিকার নিশ্চিত করার জন্য শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় কাজ করছে। শ্রমিকদের জীবনযাত্রার মান উন্নত এবং তাদের ইউনিয়ন গঠনের অধিকার সুরক্ষিত করার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ও এই প্রচেষ্টায় জড়িত।'
সেলিম উদ্দিন আরও বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দল নিয়মিত সফরের অংশ হিসেবে বাংলাদেশে এসেছে। আমাদের আলোচনা ছিল বাণিজ্য বৃদ্ধি এবং বাংলাদেশের জন্য বাজারে প্রবেশের সুযোগ বৃদ্ধির বিষয়ে। মার্কিন প্রতিনিধি দল এই ক্ষেত্রগুলোতে সমর্থন দিয়েছে। তারা শ্রমিকদের অধিকার, নিরাপত্তা, ন্যূনতম মজুরি এবং অন্যান্য সম্পর্কিত বিষয়গুলোর গুরুত্বও তুলে ধরেছে।'
তিনি আরও বলেন, 'সরকার অনেক সংস্কার উদ্যোগ শুরু করেছে এবং একটি দল শ্রম খাতের উন্নতির জন্য কাজ করছে। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয় এবং প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় একসঙ্গে কাজ করছে। এসব প্রচেষ্টার কথা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলকে জানানো হয়েছে।'
বৈঠকে উপস্থিত এক সূত্র জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দল ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের প্রক্রিয়া সহজ করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে।
তারা চায় শ্রম আইন দ্রুত সংশোধন করা হোক, যার মধ্যে রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলকেও অন্তর্ভুক্ত করা হবে। সরকারের এই প্রচেষ্টাগুলো দৃশ্যমান হলে যুক্তরাষ্ট্র সাহায্য করবে।
১৯৭৬ সালে জিএসপি চালু হয়। এটি একটি বাণিজ্যিক স্কিম, যা স্বল্পোন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য মার্কিন বাজারে শুল্ক ছাড় বা শুল্কবিহীনভাবে পণ্য রপ্তানি করার সুযোগ দেয়।
তবে, গার্মেন্ট শিল্পে নিরাপত্তাহীনতা, রানা প্লাজা ধস এবং তাজরীন ফ্যাশনে আগুনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৩ সালের জুন মাসে ওবামা প্রশাসন বাংলাদেশের জিএসপি মর্যাদা স্থগিত করে।