স্মার্টফোনের সাম্রাজ্যে মুকুট হারানো হুয়াওয়ে
মাত্র আট মাস আগের কথা- বিশ্বের বৃহত্তম স্মার্টফোন প্রস্তুতকারক কোম্পানি হিসেবে আখ্যায়িত হলো হুয়াওয়ে। কিন্তু এখন দৃশ্যপট ভিন্ন। এখন একই তালিকায় সেরা তিনের ভেতরও নেই কোম্পানিটি।
বুধবার চীনা এই প্রযুক্তি জায়ান্ট স্বীকার করে নিয়েছে, মার্কিন নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত তাদের প্রবৃদ্ধির পথে বড় প্রতিবন্ধকতা তৈরী করেছে। এমনকি বাজার হারানোয় তাদের প্রতিষ্ঠানের ডিভাইসের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু উপকরণ কিনতে পারে নি হুয়াওয়ে।
কোম্পানির সর্বশেষ আয়ের প্রতিবেদন প্রকাশের পর শেনজেনে এক সংবাদ সম্মেলনে হুয়াওয়ের চেয়ারম্যান কেন হু বলেন, "মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক অন্যায় নিষেধাজ্ঞার কারণেই আমাদের স্মার্টফোনের রাজস্ব হ্রাস পেয়েছে"।
গত বছর ঠিক কত একক রাজস্ব হ্রাস পেয়েছে তা এই ব্যক্তিমালিকানাধীন সংস্থাটি নির্দিষ্ট করে বলতে চায়নি। গার্টনার এবং কাউন্টারপয়েন্টের তথ্য অনুসারে, বৈশ্বিক হিসেবে তো দূরের কথা, চীনের বাজারেই এখন আর হুয়াওয়ের একক আধিপত্য বজায় নেই।
তবে স্মার্টফোনের বাজারে ভরাডুবির সম্মুখীন হলেও হুয়াওয়ে ঠিকই তাদের অন্যান্য ইলেকট্রনিক পণ্যের বিক্রিতে কাটতি ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। ২০১৯ এর তুলনায় গত বছর হুয়াওয়ের ল্যাপটপ, ট্যাবলেট এবং পরিধানযোগ্য ডিভাইসসমূহের বিক্রি বেড়েছে ৬৫%। হু নিজেও বলেন, 'সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হুয়াওয়ে তার অন্যান্য ডিভাইসসমূহের লাইনআপ সম্প্রসারিত করেছে যা আমাদের কৌশলের প্রতি আমাদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করেছে'।
হ্যান্ডসেট ব্যবসায়ে ক্ষতির পরেও ২০২০ সালে হুয়াওয়ের সামগ্রিক রাজস্ব বেড়েছে ৮৯১.৪ বিলিয়ন ইউয়ান (১৩৬ বিলিয়ন ডলার প্রায়)। তবে রাজস্ব কেবলমাত্র ৩.৮% বৃদ্ধি পেয়েছে, আর মুনাফা বেড়েছে ৩.২%, যা পূর্ববর্তী বছরগুলোর তুলনায় প্রবৃদ্ধির তুলনায় অনেক দুর্বল।
হু গণমাধ্যমকে জানান, "এটা স্বীকার করতে দ্বিধা নেই যে, ২০২০ এ আমাদের প্রবৃদ্ধির হার হ্রাস পেয়েছে এবং সে সময় আমাদের জন্য জীবন অতিবাহিত করাটা খুব সহজ ছিল না'। তিনি আরও জানান, হুয়াওয়ে তাদের সরবরাহ শৃঙ্খলে বৈচিত্র্য আনাসহ ব্যবসায় নতুন কিছু কৌশল গ্রহণের কারণেই অবশিষ্ট প্রবৃদ্ধির ধারা বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছিল।
তাছাড়া সংস্থাটির একজন মুখপাত্রের মতে, মেইনল্যান্ড চায়নাতে প্রাথমিক উত্থানের ফলে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারেও সফল হয়েছে হুয়াওয়ে। ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকায় যতটুকু হ্রাস পেয়েছে, তার চাইতে দেশের বাজারে হুয়াওয়ের রাজস্ব বৃদ্ধি পেয়েছে ১৫.৪%।
সাম্প্রতিক সময়ে অপ্পো এবং শাওমি হুয়াওয়েকে এতদিনের আসন থেকে টপকে ফেলে দিয়েছে, প্রথমটি চীনে এ মুহূর্তে শীর্ষ স্মার্টফোন প্রস্তুতকারক এবং দ্বিতীয় কোম্পানিটি চীনের সবচেয়ে জনপ্রিয় বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান।
হু বলেন, স্মার্টফোনের ব্যবসার এমন অব্যাহত অনিশ্চয়তার প্রেক্ষিতে তাদের জন্য কোম্পানির ভবিষ্যদ্বাণী করাটা খুব কঠিন।
কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চের মোবাইল ডিভাইস এবং ইকোসিস্টেম বিশ্লেষক বরুণ মিশ্রের ধারণা, খুব শীঘ্রই হুয়াওয়ের কাছ থেকে আগের সেই গর্জন শোনা যাবে না।
এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, "চীনের সাথে বহির্বিশ্বেও প্রতিনিয়ত ব্যবসার গতি পরিবর্তিত হচ্ছে'"।
এর আগে হুয়াওয়ে তার বাজেট স্মার্টফোন ব্র্যান্ড অনার বিক্রি করার ঘোষণা দেয়। তারা জানায় যে, অনার স্মার্টফোন ব্র্যান্ডে এর কোনও অংশীদারিত্ব থাকবে না। এর ফলে ২০২০ এ হুয়াওয়ের মোট চালানের ৪০% উঠে আসে। কিন্তু সতিটা হলো, এতে কোম্পানির সার্বিক অবস্থার পরিবর্তন হয়নি।
হুয়াওয়ের প্রধান নির্বাহী রেন ঝেংফেই বলেন, 'সিদ্ধান্তটি আরোপিত ছিল; পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে আমরা বাধ্য হয়েছিলাম এটি গ্রহণ করতে'। মূলত মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ফলে ক্ষতির কারণে সংস্থাটি এ পদক্ষেপ নেয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে নিজের স্থান পুনরুদ্ধার করাটা হুয়াওয়ের ভবিষ্যতের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ।
তবে আফসোসের বিষয় হলো, মার্কিন প্রশাসনে রদবদলের পরেও চীনা কোম্পানিটির জন্য পরিস্থিতি এখনো অনুকূলে আসেনি। হুয়াওয়েসহ চীনের কয়েকটি টেলিকম সংস্থার বিরুদ্ধে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকির অভিযোগ আনে মার্কিন ফেডারেল কম্যুনিকেশনস কমিশন।
মিশ্র বলেন, "যদি এ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না করা হয়, তবে আমি অন্তত তাদের স্মার্টফোনের (বাণিজ্য) পুনরুত্থানের সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি না"।
- সূত্র-সিএনএন বিজনেস