২০২০ সালে বাস্তুহারা হয়েছে ৪ কোটি মানুষ
জেনেভাভিত্তিক অলাভজনক সংস্থা, দ্য ইন্টারনাল ডিসপ্লেসমেন্ট মনিটরিং সেন্টার-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে বিশ্বজুড়ে ৪০ দশমিক ৫ মিলিয়ন (৪ কোটি ৫ লাখ) মানুষ বাস্তুহারা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার এই তথ্য প্রকাশ করে সংস্থাটি জানায়, বিগত এক দশকের মধ্যে এটিই সবচেয়ে বড় আকারে স্থানচ্যুতির ঘটনা।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে ঝড়, বন্যা, দাবানল কিংবা সংঘাতকে বাস্তুহারা হওয়ার পেছনে মূল কারণ হিসেবে বলা হয়েছে।
গত এক শতকের মধ্যে সংঘটিত সবচেয়ে ভয়াবহ মহামারির কারণেও গৃহহীন মানুষের সংখ্যাটা বৃদ্ধি পেয়েছে।
দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতি, বিশেষত ঝড় ও বন্যার ফলে বহু মানুষকে নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে যেতে হয়েছে। এগুলোর সব দুর্যোগই মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে না হলেও, উল্লেখিত প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ও পরিবেশে গ্রিনহাউজ গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় পরিবেশগত বিপর্যয়ের তীব্রতা ও পুনঃপুন সংঘটনের মাত্রা বেড়েই চলেছে।
গত বছরের মে মাসে সাইক্লোন আম্ফানের কারণে বাংলাদেশ ও ভারত মিলিয়ে পাঁচ মিলিয়ন মানুষ বাস্তুহারা হয়েছে। বঙ্গোপসাগর দিয়ে এই সাইক্লোনটি পার হওয়ার সময় গাছপালা উপড়ে ফেলে, বিদ্যুৎ সংযোগ ব্যাহত করে এবং হাজার হাজার ভবন ধ্বংস হয়ে যায়। বাংলাদেশে এর কয়েক সপ্তাহ পরেই মুষলধারে বৃষ্টিপাতের ফলে নদীগুলো প্লাবিত হয় এবং দেশের চারভাগের এক ভাগ অঞ্চল তলিয়ে যায়। সেই সাথে তলিয়ে যায় মানুষের সহায় সম্পত্তি ও তাদের মাটি বা টিনের তৈরি ঘরবাড়ি, গৃহপালিত পশু এবং আহারের জন্য সঞ্চিত ধান-চালও।
গেল নভেম্বরে সেন্ট্রাল আমেরিকায় এটা ও লোটা নামক দুটি আগ্রাসী হ্যারিকেন ঝড়ের তান্ডবে ব্রিজ, গাছপালা ভাসিয়ে নিয়ে যায় এবং ভয়াবহ মাটিধ্বসসহ বন্যার সৃষ্টি হয়। ২০২০ সালের হ্যারিকেন মৌসুম ছিল ইতিহাসের সবচেয়ে সক্রিয় আটলান্টিক-হ্যারিকেন মৌসুম। সেই মৌসুমজুড়ে ৩০টি ঝড় এবং ১৩টি হ্যারিকেন সংঘটিত হয়।
তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে এখন যুক্তরাষ্ট্রে প্রায়ই বন্যা হচ্ছে। বিশেষ করে আটলান্টিক মহাসাগর উপকূলবর্তী অঞ্চল এবং মেক্সিকো উপসাগরীয় অঞ্চলে বন্যার হার দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি গবেষকরা। সম্প্রতি এনভায়রনমেন্টাল প্রটেকশন এজেন্সির প্রকাশিত হিসাবে দেখা গেছে, ১৯৫০ এর দশকের তুলনায় এখন বহু স্থানে পাঁচগুণ বেশি বন্যা হচ্ছে।
বিজ্ঞানীদের ধারণা এই বছরও আটলান্টিক-হ্যারিকেন মৌসুমে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি মাত্রায় ঝড় উঠবে।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাতাসের উষ্ণ বায়ু অধিক আর্দ্রতা ধরে রাখায় এবারের ঝড় হবে অধিকতর বর্ষণমুখর। জলবায়ু পরিবর্তন এবং হ্যারিকেনের মধ্যে সম্পৃক্ততার বিষয়টি যখন জটিল হয়ে উঠেছে, তখন বিজ্ঞানীরা পরামর্শ দিয়েছেন যে উষ্ণায়নের কারণে আটলান্টিক ঝড় এখন আরো বেশি সংঘটিত হবে। আর এ ধরনের ঝড় একই স্থানে বেশি সময় ধরে থাকে বলে তা মানুষের জন্য আরো ধ্বংসাত্মক হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
মানুষের গৃহহীন হওয়ার সংখ্যা এশিয়া মহাদেশে সবচাইতে বেশি। চীনে ৫ মিলিয়ন, বাংলাদেশ ও ফিলিপাইনে প্রায় ৪ দশমিক ৪ মিলিয়ন করে এবং ভারতে ৩ দশমিক ৯ মিলিয়ন মানুষ গৃহহীন হয়েছে। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে এই সংখ্যাটা ১ দশমিক ৭ মিলিয়ন। সংঘাতজনিত কারণে সবচেয়ে বেশি মানুষ গৃহহীন হয়েছে কঙ্গো ( ২ দশমিক ২ মিলিয়ন) ও সিরিয়াতে (১ দশমিক ৮ মিলিয়ন)।