স্টালিন-বন্দনার জন্য নোবেল পুরস্কার থেকে আরেকটু হলেই বাদ পড়তে যাচ্ছিলেন নেরুদা!
১৯৭১ সালে সাহিত্যে নোবেল জয় করেছিলেন বিশ্বনন্দিত কবি পাবলো নেরুদা। কিন্তু সম্প্রতি স্টকহোমে পাওয়া নতুন আর্কাইভ থেকে বেরিয়ে এসেছে চমকপ্রদ তথ্য। জানা গেছে, চিলিয়ান এই কবির 'সমাজতান্ত্রিক মতাদর্শ'র কারণে তাকে নোবেল পদকের তালিকা থেকে প্রায় বাদই দিতে যাচ্ছিলেন বিচারকেরা!
নোবেল জয়ের প্রতিযোগিতায় থাকা লেখকদের তালিকা এবং সুইডিশ একাডেমির বিচারক প্যানেলের সদস্যদের নাম গোপন রাখা হবে, গত ৫০ বছর ধরে এটাই ছিল নিয়ম। নতুন আর্কাইভে দেখা গেছে, ১৯৭১ সালের নোবেল বিজয়ী নেরুদাকে বিচারকেরা প্রশংসা করেছেন মৌলিক শক্তিবোধসম্পন্ন কবিতার মাধ্যমে একটি মহাদেশের নিয়তি ও স্বপ্নকে জীবিত করে তোলার জন্য। কিন্তু পর্দার আড়ালের গল্প বলছে, নেরুদাকে এ পদক দিতে দ্বিধান্বিত ছিলেন সুইডিশ একাডেমির সদস্যরা।
সুইডিশ সংবাদপত্র সভেনস্কা দাগব্লাডেট- এর জন্য সুইডিশ একাডেমির ১৯৭১ সালের দলিলপত্র নিয়ে কাজ করেছেন সাংবাদিক কাজ শ্যুলার। তিনি জানান, নেরুদার কবিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন বিচারকেরা। উদাহরণস্বরূপ, তার কবিতা 'ওডস টু স্টালিন' আলফ্রেড নোবেলের 'আদর্শের সঙ্গে সাংঘাতপূর্ণ' নোবেলের আদর্শের সঙ্গে খাপ খায় কিনা, এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তারা।
নোবেল কমিটির চেয়ারপার্সন আর্ন্দেস অস্টারলিং নেরুদার কাব্যিক সহজাত শক্তি ও অগ্রসরমান জীবনীশক্তির প্রশংসা কবেলন। কিন্তু নেরুদার কবিতায় ফুটে ওঠা সমাজতান্ত্রিক মতবাদ নোবেল পদকের উদ্দেশ্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ কিনা- তা নিয়ে তিনিও প্রশ্ন তুলেছিলেন।
প্রগাঢ়, প্রেমময় কবিতার জন্য পরিচিত কবি নেরুদা একই সাথে একজন বামপন্থী রাজনীতিবিদ এবং কূটনীতিকও ছিলেন। চিলির সাবেক সমাজতান্ত্রিক প্রেসিডেন্ট সালভাদর আলেন্দের একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন তিনি। ১৯৭৩ সালে অগাস্টো পিনোশের সেনা-অভ্যুত্থানের কিছুদিন পরেই নেরুদা মারা যান। তার মৃত্যুর কারণ এখনো বিশ্বের কাছে রহস্যময়।
শ্যুলার জানান, ১৯৬৩ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত অস্টারলিংয়ের মতামত ছিল- "একজন লেখকের চিন্তাধারা- সেটা মার্ক্সসিস্ট, সিন্ডিক্যালিস্ট (শ্রমিক আন্দোলনের একটি ধারা), নৈরাজ্যবাদী বা যাই হোক না কেন; সেটা তার নিজের স্বাধীনতা। স্টালিন-বন্দনা থেকে শুরু করে তার অন্যান্য রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বিবেচনায়, আমার তার প্রার্থীতা নিয়ে হয়তো কিছুটা আপত্তি আছে; কিন্তু তাকে একেবারেই বাতিল করে দেওয়ার পক্ষে আমি নই।
এর আগে অস্টারলিং মার্কিন কবি এজরা পাউন্ডের প্রার্থীতার বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলেছিলেন কারণ তার ভাষ্যে, 'এজরার সাহিত্যের চিন্তাধারা নোবেল প্রাইজের মূলনীতির বিরোধী।' এছাড়া স্যামুয়েল বেকেটের নিহিলিজম (ধ্বংসবাদ) মতবাদেরও বিরোধী ছিলেন তিনি। কিন্তু নেরুদার ক্ষেত্রে শেষ পর্যন্ত তার মেধা-মননের কাছে হার মানতে বাধ্য হয়েছিলেন অস্টেরলিং। এদিকে বেকেট ১৯৬৯ সালে নোবেল জিতলেও এজরা পাউন্ড কখনোই নোবেল পাননি।
নতুন আর্কাইভের মাধ্যমে আরও জানা যায়, ডব্লিউএইচ অডেন, জেমস বলডুইন, ফিলিপ লার্কিন এবং হোর্হে লুইস বোরহেসও ১৯৭১ সালে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিলেন। সে বছর নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত ৯০ জন লেখকের মধ্যে একমাত্র নারী ছিলেন এস্তোনিয়ান কবি মারি আন্ডার।