শান্তিতে নোবেল জিতল জাপানি সংগঠন নিহন হিদানকিয়ো
২০২৪ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছে জাপানি সংগঠন নিহন হিদানকিয়ো।
এ সংগঠন হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমা হামলার শিকার ব্যক্তিদের নিয়ে তৃণমূল পর্যায়ে যে আন্দোলন গড়ে তুলেছে, তা হিবাকুশা নামেও পরিচিত।
পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব গড়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছে সংগঠনটি। পরমাণু অস্ত্র হামলায় বেঁচে যাওয়া মানুষদের নিয়ে গঠিত এই সংগঠন বিশ্বকে পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত করার যে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে, তার স্বীকৃতি হিসেবে নোবেল দেওয়া হয়েছে।
আজ স্থানীয় সময় সকাল ১১টা ও বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩টায় নরওয়ের রাজধানী অসলোর নোবেল ইনস্টিটিউট থেকে বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হয়।
এক বিবৃতিতে নোবেল কমিটি বলেছে, ১৯৪৫ সালের আগস্টে পরমাণু বোমা হামলার প্রতিক্রিয়ায় একটি বৈশ্বিক আন্দোলন শুরু হয়, যার সদস্যরা পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের মানবিক বিপর্যয়ের পরিণতি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। এ আন্দোলনের জেরে ধীরে ধীরে পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহারের নৈতিক অগ্রহণযোগ্যতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
পারমাণবিক বোমা হামলায় বেঁচে যাওয়া এই ভুক্তভোগীরা, অর্থাৎ হিবাকুশারা বছরের পর বছর ধরে বিশ্বের কাছে পরমাণু বোমার ধ্বংসাত্মক পরিণতি এবং মানবজীবনে এর ভয়াবহতা তুলে ধরেছেন। তাদের সাহসী প্রচেষ্টা ও অঙ্গীকারের মাধ্যমে বিশ্বে শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে নিহন হিদানকিয়ো।
গত প্রায় ৮০ বছর ধরে যুদ্ধের ময়দানে কোনো পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করা হয়নি। নিহন হিদানকিয়ো ও অন্য হিবাকুশাদের অসাধারণ প্রচেষ্টা পারমাণবিক অস্ত্রের বিরুদ্ধে এই 'ট্যাবু' গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছে।
নিহন হিদানকিয়ো প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৫৬ সালে। পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের ফলে সৃষ্ট 'ভয়াবহ ক্ষতি' ও দুর্ভোগের অভিজ্ঞতা জানানোর জন্য পরমাণু অস্ত্র হামলা থেকে বেঁচে থাকা ব্যক্তিদের বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠায় সংগঠনটি।
হিরোশিমা ও নাগাসাকির ধ্বংসযজ্ঞের প্রায় এক দশক পরে কাজ শুরু করে এ সংগঠন।
১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট একটি মার্কিন বোমারু বিমান হিরোশিমায় ইউরেনিয়াম বোমা ফেলেছিল। এতে প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষ মারা যায়।
এর তিন দিন পর নাগাসাকিতে ফেলা হয় দ্বিতীয় পারমাণবিক অস্ত্র। তার দুই সপ্তাহ পর জাপান আত্মসমর্পণ করলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে।
জাপানে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে নিহন হিদানকিয়োর সহ-সভাপতি তোশিউকি মিমাকি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি এএফপিকে বলেন, 'এমনটা হবে (নোবেলপ্রাপ্তি), কখনো কল্পনাও করিনি।
উল্লেখ্য, এ বছর ফিলিস্তিনিদের সহায়তাকারী জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনডব্লিউআরএ নোবেল শান্তি পুরস্কার পেতে পারে বলে ব্যাপক জল্পনা ছিল। আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) নোবেল পাওয়া নিয়েও আলোচনা ছিল।
গত বছর শান্তিতে নোবেল জিতেছিলেন ইরানের কারাবন্দি নারী অধিকারকর্মী নার্গিস মোহাম্মদী। তিনি নারী অধিকার ও মৃত্যুদণ্ড বাতিল নিয়ে কাজ করছেন।
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে অনুসারে, ২০২৪ সালে শান্তিতে নোবেলের জন্য মোট ২৮৬ প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে ১৯৭ ব্যক্তি ও ৮৯টি প্রতিষ্ঠান স্থান পেয়েছে। গত বছর মনোনীত প্রার্থীর সংখ্যা ছিল ৩৫১।