সামাজিক অনুষ্ঠানে বেলি ডান্স করায় চাকরি হারালেন মিশরীয় শিক্ষিকা, ছেড়ে গেলেন স্বামীও
মিশরে জনৈক শিক্ষিকার বেলি ডান্সিং এর ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর দেশটির সামাজিক রক্ষণশীলতা এবং নারী অধিকার নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক জন্ম নিয়েছে।
জানা যায়, স্কুলের একটি অনুষ্ঠানে নাচ করার সময় তার অনুমতি না নিয়েই কোনো এক সহকর্মী তার ভিডিও করেন এবং সেটি ইন্টারনেট জগতে ভাইরাল হয়। ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পরপরই তাকে স্কুলের চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয় এবং তার স্বামীও তাকে ডিভোর্স দেন। ভুক্তভোগী ওই মিশরীয় নারীর নাম আয়া ইউসেফ।
প্রকাশিত ফুটেজে দেখা যায়, অনুষ্ঠানে পুরুষ সহকর্মীদের পাশে দাঁড়িয়েই গানের তালে নাচছেন ইউসেফ। লম্বা হাতার জামা ও স্কার্ফে মাথা ঢাকা ইউসেফকে পশ্চিমা স্ট্যান্ডার্ডে বেশ স্বাভাবিক থাকতেই দেখা যায়।
মিশরে ফারাওদের সময় থেকেই বেলি ডান্সের উৎপত্তি বলা হলেও, বর্তমানে দেশটিতে নারীদের জনসম্মুখে নাচের বিষয়টি প্রায়ই অনুমোদন করা হয় না।
ইউসেফের নাচের ভিডিও গত এক সপ্তাহ যাবত আরব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ঘুরে বেড়ালেও, সমাজের রক্ষণশীল শ্রেণীর মধ্যে এটি তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে।
সমালোচকেরা বলছেন, জনসম্মুখে এমন নাচের মাধ্যমে তিনি জঘন্য কাজ করেছেন। টুইটারে একজন লেখেন, "এখান থেকে (ভিডিও) স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে আমরা কি ভয়াবহ সময়ে বাস করছি! এখানে যে যা খুশি করে যাচ্ছে।"
আরেকজন মন্তব্য করেছেন, "মিশরে শিক্ষার মান কতটা নিচে নেমে গেছে তা এটা দেখেই বোঝা যাচ্ছে।" তিনি এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছেন।
মিশরের নীল ডেল্টা অঞ্চলের দাখালিয়া গভার্নোরেট প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বেশ কয়েক বছর ধরে কর্মরত ছিলেন আয়া ইউসেফ। এ ঘটনার পর স্কুল কর্তৃপক্ষ তার চাকরি কেড়ে নিয়েছে।
ভাইরাল ভিডিওর কারণে ভুক্তভোগী ইউসেফ জানিয়েছেন, তিনি প্রতিজ্ঞা করেছেন আর কোনোদিনই নাচের দিকে পা বাড়াবেন না। এমনকি এ ঘটনার পর তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন বলেও জানা যায়।
"নীলনদ উপকূলে নৌভ্রমণের ওই দশ মিনিট আমার জীবনের সবকিছু কেড়ে নিয়েছে", বলেন ইউসেফ।
এদিকে ইউসেফের পক্ষে সোচ্চার হয়েছেন মিশরের নারী অধিকারকর্মীরা। তারা মনে করেন, ইউসেফ কোনো অপরাধ করেননি, বরং তাকে সামাজিক প্রথার বলি বানানো হয়েছে।
ইউসেফের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করতে এবং নারী স্বাধীনতার পক্ষে দাঁড়াতে মিশরের অন্য একটি স্কুলের ডেপুটি প্রধান শিক্ষিকা তার মেয়ের বিয়েতে তার নাচের ছবি পোস্ট করেছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
ইজিপশিয়ান সেন্টার ফর উইমেন'স রাইটস-এর প্রধান ড নিহাদ আবু কুসমান ইতোমধ্যে ইউসেফকে তার কার্যালয়ে একটি চাকরির প্রস্তাব দিয়েছেন। তাকে স্কুল থেকে বরখাস্তের বিরুদ্ধে আইনি অভিযোগ দায়ের করার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ করারও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
তবে অধিকারকর্মীদের এ প্রতিবাদের ফলে টনক নড়েছে মিশরীয় কর্তৃপক্ষের। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ তাকে নতুন আরেকটি স্কুলে চাকরির জন্য নিয়োগপত্র দিয়েছেন।
আয়া ইউসেফ বলেন, তিনি কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বা শিক্ষার্থীদের সামনে নাচেননি। এ ভিডিও ভাইরালের মাধ্যমে তার ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন করা হয়েছে এবং তিনি ভিডিও ধারণকারী ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করার কথা ভাবছেন।
সূত্র: বিবিসি