রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞায় চিপে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার তাগিদ পাচ্ছে চীন
ইউক্রেন সংকটকে ঘিরে রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা দেশগুলোর আরোপ করা নিষেধাজ্ঞা পড়েছে বৈশ্বিক রপ্তানিপণ্য চিপ থেকে শুরু করে কম্পিউটার আর ইলেকট্রনিকসের ওপরেও। সেইসঙ্গে চীনের সেমি-কন্ডাক্টর খাতেও এর প্রভাব পড়তে যাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
পশ্চিমা দেশগুলোর জারি করা নিষেধাজ্ঞার রপ্তানি বাধার কারণে কোম্পানিগুলোর মার্কিন প্রযুক্তি বা যন্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে এমন হাই আর লো-টেক পণ্য রাশিয়ায় সরবরাহের আগে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে লাইসেন্স নিতে হবে।
চিপ উৎপাদনের ক্ষেত্রে চীনের রাশিয়ার মতো উন্নত সক্ষমতা নেই। তবে সেমিকন্ডাক্টর খাতে স্বনির্ভর হওয়ার দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য ও নীতিমালা আছে দেশটির।
২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত নিষেধাজ্ঞার পর হুয়াওয়ে টেকনোলজিস কো লিমিটেডের স্মার্টফোন ব্যবসায় যখন ধস নামলো, তখনই এ খাতে দেশটির স্বনির্ভর হওয়ার প্রয়োজনীয়তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে দেশের বাইরে থেকে আসা অধিকাংশ চিপ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়, নিজস্ব উৎপাদনেও বাধা পড়ে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কনসালট্যান্ট চীন থেকে রয়টার্স্কে বলেন, রাশিয়ার ওপর এই নিষেধাজ্ঞা, আসন্ন পরিস্থিতি ও প্রভাব পর্যবেক্ষক করে সিদ্ধান্ত নিতে পারে চীন।
২০২০ সালে চীনের শীর্ষ চিপ উৎপাদনকারী সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্টারন্যাশনাল করপোরেশনের (এসএমআইসি) ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ওয়াশিংটন।
গত ১০ বছর ধরে বিশ্বের শীর্ষ চিপ আমদানিকারক দেশ চীন 'মেইড ইন চায়না ২০২৫' প্রকল্পকে সামনে রেখে সেমিকন্ডাক্টর প্রকল্পগুলোতে ব্যাপক অর্থায়ন করেছে। এ প্রকল্প অনুযায়ী ২০২৫ সালের মধ্যে জটিল প্রযুক্তির ক্ষেত্রে মূল উপাদানগুলোতে ৭০ শতাংশ স্বনির্ভরতা গড়ে তোলার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে চীন।
খুব দ্রুতই দেশটির চিপ উৎপাদন খাত বড় হচ্ছে। তবে দেশটির চিপ রপ্তানির এখনো বেশ কম। সেমিকন্ডাক্টর ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য বলছে, দেশটির ফ্যাবলেস চীপ উৎপাদনকারীদের দখলে বিশ্ব বাজারের ১৬ শতাংশ শেয়ার।
নিষেধাজ্ঞা আরোপ হওয়া রাশিয়াকে সাহায্য করতে চীন কতোটুকু করতে পারবে তাও সীমাবদ্ধ এ কারণে।
একজন সিনিয়র মার্কিন প্রশাসনিক কর্মকর্তা বলেন, 'চীন একা রাশিয়ার সব মিলিটারি প্রয়োজন সরবরাহ করতে পারবে না"।
"বেশিরভাগ উন্নত প্রযুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশের কোনো উৎপাদন করে না চীন। একারণে চীন আর রাশিয়া দুটি দেশই অন্যান্য দেশের সরবরাহকারীদের ওপর নির্ভরশীল, এবং মার্কিন প্রযুক্তিই তাদের প্রয়োজন মেটায়"।
জাতিসংঘের কমট্রেডের তথ্য বলছে, ২০২০ সালে রাশিয়াকে আনুমানিক ১০ বিলিয়ন ডলারের ইলেকট্রনিকস সরবরাহ করে চীন। দেশটির রপ্তানির প্রায় ২০ শতাংশ এটি।
এর মধ্যে একটি বড় অংশ স্মার্টফোন, চীনা ব্র্যান্ড শাওমি আর রিয়েলমি রাশিয়ায় অন্যতম শীর্ষ মোবাইল বিক্রেতা।
"রাশিয়ার চিপের প্রয়োজন খুব বেশি না, এর অর্ধেকের বেশিই সরবরাহ করে চীন," বলেন সিটি ইউনিভার্সিটি অব হংকংয়ে চীনের প্রযুক্তি নীতি নিয়ে গবেষণায় নিয়োজিত ডোগ ফুলার।
"অন্য সবখান থেকে চিপ সরবরাহ একেবারে বন্ধ হয়ে গেলে রপ্তানিতে চীন আনুমানিক অতিরিক্ত ২০০ মিলিয়ন ডলার পাবে। এরমধ্যে রাশিয়ার এমন কিছু চিপ লাগে যা চীন বানায়-ই না"।
সূত্র: রয়টার্স