ইউক্রেনে রুশ কমান্ডার কে? বুঝতে পারছে না যুক্তরাষ্ট্র
ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযানের নেতৃত্বে নির্দিষ্ট কোনো কমান্ডার আছে কিনা তা ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না যুক্তরাষ্ট্র। সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে সিএনএন।
দুজন মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, শীর্ষস্থানীয় কোনো কর্মকর্তা ছাড়া ইউক্রেনের বিভিন্ন অঞ্চলে রাশিয়ার বিভিন্ন মিলিটারি ইউনিটের মধ্যে সরঞ্জাম ও রসদ নিয়ে প্রতিযোগিতা চলছে এমনটা মনে হচ্ছে।
ইউক্রেন জুড়ে রাশিয়ান বাহিনীর ইউনিটগুলো নিজেদের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করতে পারছে না, কেন্দ্রীয় কোনো নির্দেশের পরিবর্তে বিচ্ছিন্নভাবে কাজ করছে বলে মনে হচ্ছে অবস্থাদৃষ্ট দেখে।
রাশিয়ান বাহিনীর মধ্যে যোগাযোগ নিয়েও সমস্যা তৈরি হয়েছে। সৈনিক ও কমান্ডাররা সাধারণ সেলফোন ও অন্যান্য অনিরাপদ মাধ্যমে যোগাযোগ করছে নিজেদের মধ্যে।
সিএনএনের মিলিটারি এনালিস্ট ও ইউরোপে ইউএস সেনাবাহিনীর সাবেক কমান্ডার অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মার্ক হারটলিং বলছেন, "যুদ্ধের অন্যতম মূলনীতি নির্দেশ ও কার্যবিধির সমন্বয় ও ঐক্য। অর্থাৎ কাউকে সার্বিক দায়িত্ব থাকতে হয়।"
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ইউক্রেন অভিযানে শীর্ষ কমান্ডার আছে কিনা বা এ সম্বন্ধীয় কিছু প্রকাশ করেনি। এ বিষয়ে জানতে চেয়ে সিএনএনের অনুরোধে সাড়া দেয়নি।
তবে হার্টলিং বলছেন, এমনটা সম্ভব যে রাশিয়া একজন শীর্ষ কমান্ডার ঠিক করেছে অভিযানের নেতৃত্ব দিতে, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র তাকে শনাক্ত করতে পারেনি।
"কিন্তু অভিযানের পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে কমান্ডার থাকলেও সে দক্ষ না", যোগ করেন তিনি।
রাশিয়ার ইউক্রেন অভিযানে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের মধ্যে অস্বাভাবিক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। ইউক্রেন বলছে, যুদ্ধের প্রথম তিন সপ্তাহে পাঁচজন রাশিয়ান জেনারেল হত্যা করেছে তারা। তবে এ দাবি যাচাই করতে পারেনি সিএনএন। তবে তারপরও, যুদ্ধে সামরিক কোনো জেনারেলের মৃত্যুর ঘটনা সচরাচর দেখা যায় না বলে মন্তব্য করেন ইউএস সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল ডেভিড পেট্রাউস।
বৃহস্পতিবার রাশিয়ার টিভি নেটওয়ার্ক জিটিআরকে জানিয়েছে, রাশিয়ান বিমান ইউনিটের কমান্ডার কর্নেল সারগেই সুখারেভ মারা গেছে।
"শেষ কথা হলো তাদের মধ্যে কমান্ড-কন্ট্রোল ভেঙে পড়েছে," বলেন পেট্রাউস।
ইউএস সেনাবাহিনীর আরেক অবসরপ্রাপ্ত লে. জেনারেল বেন হজেস বলেন, "রাশিয়ান সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী আর নৌবাহিনীর কাজের মধ্যে কোনো সমন্বয় দেখছি না আমি"।
স্থবির অবস্থা
২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরুর পর থেকে মিসাইল নিক্ষেপের মাধ্যমে দেশটির বহুতল ভবন, হাসপাতাল ও স্কুল ধ্বংস করেছে, নিহত হয়েছে অনেক বেসামরিক নাগরিক। তবে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা বলছে, কৌশলগত ভুলের কারণে ও ইউক্রেনীয়দের প্রতিরোধে ভূমিপথে অভিযান স্থবির হয়ে আছে।
মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব লয়েড অস্টিন শুক্রবার সিএনএন-এর ডন লেমনকে বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার অনেকগুলি ভুল পদক্ষেপ দেখতে পেয়েছে। লজিস্টিক সংক্রান্ত সমস্যায় পড়েছে মস্কো।
বর্তমান প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা ও অন্যান্য বিশ্লেষকরা বলছেন, সিরিয়া ও ক্রিমিয়াসহ সাম্প্রতিক নানা সংকটে রাশিয়া সেনাবাহিনী মোতায়েন করলেও, সামরিক বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটের মধ্যে সমন্বয় করে অভিযান চালানোর মতো বড় পদক্ষেপও নেয়নি রাশিয়া।
হজেস বলছেন, রাশিয়া তাদের আঞ্চলিক মিলিটারি ইউনিটের মধ্যে বার্ষিক সামরিক মহড়া চালায়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের মতো সামরিক বাহিনীর সব ইউনিটের মধ্যে সমন্বয় স্থাপনকারী কার্যক্রম চালায় না।
"তাদের এক্ষেত্রে কোনো অভিজ্ঞতা নেই। অন্তত এ ধরনের পরিতস্থিতির মতো বড় কোনো ক্ষেত্রের জন্য নয়। এতো বড় পরিসরে তারা কিছু করেছে তার কয়েক দশক পেরিয়ে গেছে। ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া ও রাশিয়াতে তা যা করেছে, বর্তমান পরিস্থিতির তুলনায় তা কিছুই না"।
তাদের যৌথ অপারেশনাল কমান্ডার আছে, তা মনে হয় না বলেও মন্তব্য করেন সাবেক এ সেনা কর্মকর্তা।
গোপনীয়তায় ভরসা পুতিনের
কিছু কর্মকর্তা বলছেন, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এই অভিযানের সবকিছু এতো গোপনীয়ভাবে পরিকল্পনা করেছেন যে, যুদ্ধক্ষেত্রে থাকা তার নিজের সামরিক বাহিনীর অনেক কমান্ডার একদম শেষ মুহূর্তে গিয়ে পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারেনি।
ফেব্রুয়ারির শুরুতে এক সিনিয়র ইউরোপিয়ান কর্মকর্তা বলেছিলেন, "মূল্যায়নে আমরা দেখতে পাচ্ছি, এটা পরিষ্কার যে রাশিয়ান বাহিনীর অনেকে কী চলছে তা বুঝতে পারছে না"।
কেন্দ্রীয় সমন্বয়ের অভাবের প্রভাব পড়েছে রাশিয়ার বাহিনী সাজানোতেও। যুদ্ধক্ষেত্রে থাকা সেনাদের পর্যাপ্ত খাবার, জ্বালানি আর সরঞ্জাম সরবরাহ করতেও বেগ পোহাতে হয়েছে রাশিয়াকে। এরমধ্যে বেড়েছে হতাহতের সংখ্যাও। বিদেশি যোদ্ধা ও অন্যত্র থাকা রাশিয়ান ট্রুপসের মাধ্যমে রাশিয়া এ ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে এমন তথ্যও পাওয়া যাচ্ছে।
হোজেস বলছেন, একজন থিয়েটার কমান্ডার ছাড়া সীমিত সম্পদের বরাদ্দ দেওয়াটা চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়ায়।
"অগ্রাধিকার ঠিক করা, কখন কোথায় কী লাগবে, তা যৌথ বাহিনীর কমান্ডারের কাজ। কে আগে জ্বলানি, অস্ত্র, গোলাবারুদ বা কোনো নির্দিষ্ট রসদ পাবে তা কমান্ডারই ঠিক করেন", বলেন তিনি।
সূত্র: সিএনএন