যুক্তরাষ্ট্রে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগেই বন্ধ হয়ে গেল টিকটক
নির্ধারিত নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার ঘণ্টা দুয়েক আগে শনিবার রাতেই যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক বন্ধ হয়ে গেছে। এই অপ্রত্যাশিত ব্ল্যাকআউটে ১৭ কোটি মার্কিন ব্যবহারকারী জনপ্রিয় এই সোশ্যাল মিডিয়া মাধ্যম অ্যাপে প্রবেশ করতে পারছেন না।
অ্যাপে প্রবেশের চেষ্টা করলেই একটি মেসেজ দেখাচ্ছে: 'দুঃখিত, এই মুহূর্তে টিকটক বন্ধ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক নিষিদ্ধের আইন কার্যকর হয়েছে। এর ফলে আপাতত আপনি টিকটক ব্যবহার করতে পারবেন না।'
যুক্তরাষ্ট্রে চীনা কোম্পানি বাইটড্যান্সের মালিকানাধীন টিকটক নিষিদ্ধ করার একটি আইন সুপ্রিম কোর্টেও বহাল রাখায় এভাবে বন্ধ হয়ে গেল অ্যাপটি। নতুন এই আইন অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে ১৯ জানুয়ারির মধ্যে টিকটকের মালিকানা যুক্তরাষ্ট্র বা তার কোনো মিত্রের কাছে বিক্রি না করলে কোম্পানিটির ওপর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে।
তবে টিকটক খুব বেশিদিন বন্ধ থাকবে না বলেই ধারণা করা হচ্ছে। কোম্পানিটি ইঙ্গিত দিয়েছে, তারা শিগগিরই—সম্ভবত সোমবারের মধ্যেই—ফিরে আসতে পারে।
অ্যাপটির পপ-আপ বার্তায় ব্যবহারকারীদের জানানো হয়: 'আমরা সৌভাগ্যবান যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দায়িত্ব গ্রহণের পর টিকটক আবার চালু করার করার উপায় বের করবতে আমাদের সঙ্গে কাজ করার ইঙ্গিত দিয়েছেন।'
এদিকে প্রেসিডেন্ট-নির্বাচিত ডোনাল্ড ট্রাম্প শনিবার এনবিসি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, তিনি সোমবার দায়িত্ব গ্রহণের পর 'খুব সম্ভব' টিকটকের ওপর নিষেধাজ্ঞা ৯০ দিনের জন্য পিছিয়ে দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করবেন। তবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি।
ট্রাম্প বলেন, 'আমরা অবশ্যই বিষয়টি বিবেচনা করব। সম্ভবত বাড়তি ৯০ দিন সময় দেওয়া হবে। …আমাদের সতর্কতার সঙ্গে বিষয়টি দেখতে হবে। এটা একটা বড় বিষয়।'
যুক্তরাষ্ট্রে বন্ধ করে দেওয়া এবং ফের চালু হওয়া নিয়ে এই নাটকীয়তা অ্যাপটির ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। অ্যাপটি ইতিমধ্যে অ্যাপল ও গুগলের অ্যাপ স্টোর থেকেও সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। টিকটকের মূল কোম্পানি বাইটড্যান্সের অন্যান্য অ্যাপ, যেমন ক্যাপকাটও শনিবার রাতে একই ধরনের বার্তা দেখিয়েছে।
মার্কিন আইনপ্রণেতারা চীনের সঙ্গে টিকটকের সম্পর্ক এবং বিপুল পরিমাণ ডেটা অ্যাক্সেসকে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে দেখছেন।
অনেক মার্কিন ব্যবহারকারী, বিশেষ করে এই প্ল্যাটফর্মের ওপর নির্ভরশীল ইনফ্লুয়েন্সার ও ছোট ব্যবসার মালিকরা, টিকটকের বন্ধ হয়ে যাওয়া নিয়ে আশঙ্কায় ছিলেন। তবে তারা আশাবাদী, কোনোভাবে অ্যাপটি নিষেধাজ্ঞা থেকে রক্ষা পাবে।
এদিকে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প টিকটক নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার আগমুহূর্তে অ্যাপটির সম্ভাব্য রক্ষাকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। সম্প্রতি তিনি ট্রুথ সোশ্যাল অ্যাকাউন্টে টিকটকে তার নিজের জনপ্রিয়তার পরিসংখ্যান শেয়ার করে প্রশ্ন রাখেন, 'আমি কেন টিকটক বন্ধ করে দিতে চাইব?'
টিকটকের সিইও শোউ চিউ সম্প্রতি ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। আগামী সোমবার ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠানেও তার উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
শনিবার রাতে টিকটক তাৎক্ষণিকভাবে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
গত বছর পাশ হওয়া আইনটি প্রেসিডেন্টকে নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের সময় ৯০ দিন পিছিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা দিয়েছে। তবে এর জন্য টিকটক কোনো মার্কিন মালিকানাধীন কোম্পানির কাছে বিক্রির প্রক্রিয়ায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হওয়ার প্রমাণ দেখাতে হবে।
তবে টিকটকের মূল কোম্পানি বাইটড্যান্স সম্ভাব্য ক্রেতাদের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। কোম্পানিটি যুক্তরাষ্ট্রে তাদের জনপ্রিয়তা এবং দেশটির ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ওপর এর প্রভাব উল্লেখ করে মালিকানা পরিবর্তন ছাড়াই নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর চেষ্টা করছে।
নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার পর টিকটক ব্যবহার করতে দিলে বড় জরিমানার মুখে পড়তে পারে, এমন কিছু কিছু সেবা প্রদানকারী—যেমন গুগল ও অ্যাপল—শনিবার টিকটককে জানিয়েছে, তারা আইনি ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
টিকটকের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র সিএনএনকে বলেছে, 'বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সেবাপ্রদানকারী' টিকটককে জানিয়েছে, তারা আর এই অ্যাপ বা এর ডেটা সরবরাহ করবে না। এ কারণে অ্যাপটি অফলাইনে যেতে বাধ্য হয়েছে।
নির্দিষ্ট সময়ের আগেই বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং ট্রাম্পের নামোল্লেখ করে দেওয়া পপ-আপ বার্তাটি সমাধানে আসতে আলোচনায় বসার জন্য নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টের ওপর আরও চাপ সৃষ্টি করতে পারে।