অর্ধেক খেয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে অর্থনৈতিক সংকটে জেরবার শ্রীলঙ্কানদের
শ্রীলঙ্কার মিনুওয়াঙ্গোদা শহর। একটি নিত্যপণ্যের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন থুসিতা হাদারাগামা। পাঁচ সদস্যের পরিবারের জন্য কী কী পণ্য কিনবেন, তা ভাবছিলেন থুসিতা। মাত্র ১৮১ ডলার মাসিক আয়ে সংসার চালান তিনি।
৪৩ বছর বয়সি থুসিতা পেশায় গাড়িচালক। শ্রীলঙ্কার বাণিজ্যিক রাজধানী কলম্বোতে কাজ করেন তিনি। দেশটির অর্থনৈতিক অবস্থার ক্রমেই খারাপের দিকে যাচ্ছে। প্রকট হচ্ছে নগদ অর্থ, বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ, জ্বালানি, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও খাদ্য সংকট।
অর্থনৈতিক দুরবস্থার ধাক্কায় বেসামাল থুসিতার মতো অসংখ্য সাধারণ মানুষ। ফলে তারা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে পারছেন না।
সংবাদমাধ্যম রয়টার্সকে থুসিতা জানান, 'জিনিসপত্রের দাম আবার বেড়ে গেছে। আমি কম কম কিনব। আগে যা খেতাম, তার অর্ধেক খেতে হবে এখন থেকে।'
আগে থেকেই নানা কারণে নাজুক অবস্থায় ছিল শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি। তার মাঝে করোনা মহামারির কারণে বড় ধাক্কা খায় দেশটির উপার্জনের সবচেয়ে বড় খাত পর্যটন। এছাড়া মহামারির কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণও কমে যায় অনেকটা। সব মিলিয়ে দেশটির অর্থনীতি মারাত্মক সংকটে পড়ে।
শ্রীলঙ্কার অবস্থা এতই খারাপের দিকে গেছে যে, বেশ কিছু শ্রীলঙ্কান অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশেরও চেষ্টা করেছেন। ২৩ মার্চ হিন্দুস্তান টাইমসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মঙ্গলবার ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যে অনুপ্রবেশের সময় ছয়জন শ্রীলঙ্কানকে আটক করে কোস্টগার্ড। ওই ছয় শ্রীলঙ্কান জানান, নিজ দেশের অর্থনৈতিক সংকটের কারণে নিত্যপণ্য কেনা কঠিন হয়ে যাওয়ায় তারা ভারতে প্রবেশের চেষ্টা করছিলেন।
ফেব্রুয়ারিতে শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল মাত্র ২.৩১ বিলিয়ন ডলারের মতো। অথচ দেশটিকে এ বছরের বাকি সময়ে প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণের অর্থ পরিশোধ করতে হবে।
কলম্বোর থিঙ্কট্যাঙ্ক অ্যাডভোকাটা ইন্সটিটিউট-এর প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা ধননাথ ফার্নান্দো বলেন, চলমান সংকটের কারণ পণ্য-ঘাটতি নয়, ডলারের ঘাটতি।
গত সপ্তাহে শ্রীলঙ্কা সরকার জানিয়েছিল, এ সংকট থেকে উত্তরণের জন্য তারা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে আলোচনা শুরু করবে।
প্রায় সোয়া ২ কোটি জনসংখ্যার দেশটি ভারত ও চীনের কাছেও সহায়তা চেয়েছে।
চলমান অর্থনৈতিক সংকটের কারণে সাধারণ শ্রীলঙ্কানদের জন্য প্রতিদিনের কাজ দিন দিন আরও কঠিন হয়ে উঠছে। মোটরসাইকেলে তেল ভরার জন্য থুসিতা হাদারাগামাকে দ্বিগুণ বেশি খরচ করতে হচ্ছে। তিন মাস আগেও এজ লিটার পেট্রোলের দাম যা ছিল, এখন তার দ্বিগুণ হয়ে গেছে।
বাড়িতেও রান্নার পরিমাণ কমিয়ে দিতে হয়েছে থুসিতার স্ত্রী ভারুনিকে। তিনি বলেন, 'আগে আমি তিনটি আলু রান্না করতাম। এখন দুটি রান্না করি।'
- সূত্র: রয়টার্স ও হিন্দুস্তান টাইমস