রাশিয়া কেন রুবলে গ্যাস বিক্রি করতে চাইছে?
বুধবার (২৩ মার্চ) রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং সরকারকে গ্যাস রপ্তানির ক্ষেত্রে নিজস্ব মুদ্রা রুবলের মাধ্যমে লেনদেনের উপায় খুঁজে বের করতে নির্দেশ দিয়েছেন। এ কাজের জন্য কর্তৃপক্ষকে এক সপ্তাহের সময় বেধে দিয়েছেন তিনি। রুশ প্রেসিডেন্টের এমন ঘোষণায় রাশিয়ার গ্যাস ক্রেতারা পড়েছেন চিন্তায়; ঠিক কীভাবে এটি বাস্তবায়ন করা হবে, আদৌ কি এই পদক্ষেপ ধোপে টিকবে কিনা তা নিয়ে ইতোমধ্যেই জল্পনা শুরু হয়েছে। রাশিয়ার সংবাদমাধ্যম আরটি নিউজ এই পদক্ষেপের কিছু সম্ভাব্যতা ব্যখ্যা করেছে তাদের এক প্রতিবেদনে।
কেন লেনদেনের মাধ্যম রুবেল?
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররা রাশিয়ার আর্থনীতিকে টার্গেট করে নজিরবিহীন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। প্রেসিডেন্ট পুতিনের মতে, রাশিয়ার সম্পদ জব্দ করতে বেশ কয়েকটি পশ্চিমা দেশের এই অবৈধ নিষেধাজ্ঞা রাশিয়ার মুদ্রার ওপর থেকে আস্থা নষ্ট করেছে। কিন্তু রাশিয়ার জ্বালানি রপ্তানি খাত এখনও পশ্চিমা বিধিনিষেধের শিকার হতে পারেনি। তবে যেহেতু প্রায় সমস্ত জ্বালানি ক্রয় চুক্তি ইউরো বা মার্কিন ডলারের ভিত্তিতে হয়েছে, তাই পশ্চিমারা দ্রুতই এটিকে তাদের লক্ষ্য বানাতে পারে। আর এ কারণেই এখন রাশিয়া জ্বালানি রপ্তানির ক্ষেত্রে নিজস্ব মুদ্রা রুবলকেই নিরাপদ বলে মনে করছে। এর মাধ্যমে দেশটি সম্ভাব্য পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা এড়াতে পারবে।
এতে কোন দেশগুলো প্রভাবিত হবে?
প্রস্তাবিত এই পদক্ষেপ মূলত রাশিয়ার বিরোধী দেশগুলোকেই সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করবে, যারা দেশটির ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এমন দেশের মধ্যে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং বেশিরভাগ ইইউভুক্ত দেশ।
ক্রেতারা রুবলের মাধ্যমে লেনদেনে অস্বীকৃতি জানালে কী হবে?
এ ক্ষেত্রে তারা রাশিয়ার কাছ থেকে গ্যাস কিনতে পারবে না। কারণ অন্য কোনো মুদ্রা গ্রহণ করবে না রাশিয়া। আর এটি হবে ইউরোপের জন্য এক বিশাল ধাক্কা। কারণ ওই অঞ্চলে ৪০ শতাংশের বেশি গ্যাস রপ্তানি হয় কেবল রাশিয়া থেকে।
কীভাবে পরিচালিত হবে রুবেল পেমেন্ট সিস্টেম?
রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক গ্যাস ক্রেতাদের কাছে রুবেল বিক্রি করতে পারে অথবা খোলা বাজারে থেকেও এই মুদ্রা কেনার ব্যবস্থা করতে পারে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ক্রেতা সরকারেরা তাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোতে রুবল রিজার্ভ করেও রাখতে পারে।
ডলার এবং ইউরোতে এর প্রভাব কী হবে?
বিশ্লেষকদের মতে, রাশিয়ার এই পদক্ষেপ সফল হলে তা বিশ্বের রিজার্ভ কারেন্সি হিসেবে ডলারের আধিপত্যকে বিপন্ন করতে পারে। ইউরোও কমবেশি একই ধরনের ঝুঁকিতে পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
রুবলের ওপর এই পদক্ষেপের প্রভাব কী হতে পারে?
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে রুবেলের ভূমিকা বাড়ানো মানে এই মুদ্রাকে আরও শক্তিশালী করে তোলা। রাশিয়ার বিশাল প্রাকৃতিক সম্পদের মাধ্যমেই এই পদক্ষেপ সফল করার উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। রাশিয়ার জ্বালানির বৈশ্বিক চাহিদার কারণেই রুবল একদিন আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে প্রধান বিনিময় মুদ্রার একটি হয়ে উঠতে পারে। রুশ প্রেসিডেন্টের ওই ঘোষণার পর গত তিন সপ্তাহে রুবলের মান এখন ঊর্ধ্বমুখী।
এর বৃহত্তর প্রভাব কী হতে পারে?
পুতিন তার ঘোষণায় ইঙ্গিত দিয়েছেন, প্রাকৃতিক গ্যাসই রুবলে বিক্রি হওয়া প্রথম রাশিয়ান পণ্য হতে চলেছে। চলতি সপ্তাহের শুরুতে তিনি বলেন, "যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমি লেনদেন সংশোধনের জন্য একটি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। রাশিয়ার প্রতিকূল দেশগুলোতে গ্যাস সরবরাহে লেনদেনের মাধ্যম হিসেবে রুবল চালু হবে; হ্যাঁ, চলুন এটি দিয়েই শুরু করা যাক।"
গ্যাসের পর তেলসহ অন্যান্য রুশ পণ্যের রপ্তানির ক্ষেত্রেও অর্থ প্রদানের মাধ্যম হিসেবে ডলার বা ইউরোর পরিবর্তে রুবল চালু হতে পারে। প্রেসিডেন্ট পুতিনের শব্দচয়ন এমনটিই ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এতে করে আন্তর্জাতিক মুদ্রা বাজারে রুবল আরও শক্তিশালী হবে এবং বিপরীতে ডলার ও ইউরো বর্তমানের তুলনায় দুর্বল হয়ে পড়বে।
- সূত্র: আরটি নিউজ