সাংবিধানিক সংকটের অতল গহ্বরে পাকিস্তান: ডন
পাকিস্তানের অনাস্থা ভোটের আগে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বারবার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে তার হাতে একটি ট্রাম্প কার্ড রয়েছে। যেখানে দেশটির শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক থেকে শুরু করে সব মিডিয়া অনাস্থা ভোটে ইমরান খানের পরাজয়ের ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল, সেখানে কেউই ভাবেনি যে তিনি একটি গণতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত দলের মাধ্যমে দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে গুঁড়িয়ে ফেলবেন।
সোমবার (৪ এপ্রিল) পাকিস্তান ভিত্তিক ইংরেজি সংবাদপত্র ডনে প্রকাশিত একটি সম্পাদকীয়তে এ কথা লেখা হয়।
পার্লামেন্টারি প্রক্রিয়াকে বিকৃত করা একজন নেতার হাতে এখনও ক্ষমতা টিকে রয়েছে। এতে করে সাংবিধানিক সংকটের এক অন্ধকার অতল গহ্বরে নিমজ্জিত হচ্ছে পাকিস্তান। ইমরান খান এই জঘন্য খেলা খেলার পরিকল্পনা আরও আগে থেকে করেছেন বলে উল্লেখ করে তারা।
"একজন স্বঘোষিত 'যোদ্ধা'র এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য বেশ নিচে নামতে হয়। 'শেষ বল পর্যন্ত খেলার' পরিবর্তে খেলার নিয়ম ভঙ্গ করে ইমরান খান সাংবিধানিকতার উপর মারাত্মক আঘাত হেনেছেন। সেইসাথে, তিনি যে একটি গণতান্ত্রিক শৃঙ্খলার মধ্যে সরকারি পদে অধিষ্ঠিত হওয়ায় যোগ্য নয়- এ শঙ্কাও বেড়েছে বহুগুণ।"
রোববার ইসলামাবাদে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে অনাস্থা ভোট পরিচালনার দায়িত্ব ছিল স্পিকার আসাদ কাইজারের। কিন্তু অধিবেশন শুরুর আগেই তার বিরুদ্ধে অনাস্থা আনেন বিরোধীরা। আবেদনপত্র জমা পড়ে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির সচিবালয়ে। শেষমেশ স্পিকারের আসনে বসে অনাস্থাভোট করানোর দায়িত্ব গিয়ে পড়ে ডেপুটি স্পিকার কাশিম খান সুরির ওপর।
সুরি স্পিকারের চেয়ারে বসেই বললেন, ''আমি ডেপুটি স্পিকার হিসেবে রুলিং দিচ্ছি প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাব বাতিল করা হল।'' তারপরই তিনি অনির্দিষ্টকালের জন্য অ্যাসেম্বলি মুলতবি করে দেন। কারণ হিসেবে সুরি বলেন, বিরোধীদের আনা অনাস্থা প্রস্তাব অসাংবিধানিক। এটি সংবিধানের পাঁচ নম্বর ধারার পরিপন্থী।
কোনোরকমের প্রমাণ ছাড়াই অনাস্থা প্রস্তাবকে অসাংবিধানিক উল্লেখ করে বাতিল করে দেওয়া হয় বলে উল্লেখ করা হয় ডনের সম্পাদকীয়তে।
এমনকি, পাকিস্তান যখন এই ধাক্কার সামাল দিচ্ছিলো, তখন অনাস্থা প্রস্তাব 'ব্যর্থ' হওয়ার জন্য জাতিকে অভিনন্দন জানান ইমরান।
তিনি আরও বলেন যে, নতুন নির্বাচনের জন্য ইতোমধ্যেই রাষ্ট্রপতিকে এনএ ভেঙ্গে দেওয়ার কথা উল্লেখ করে চিঠি দিয়েছিলেন তিনি।
এদিকে, পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি আরিফ আলভির কথা উল্লেখ করে ডন বলে, সাংবিধানিকতার সাথে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরিবর্তে ইমরান খানের অনুগত হিসাবে কাজ করেছেন তিনি। একইসাথে তার পক্ষপাতমূলক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে নিজের অফিসকে অপমান করেছেন আরিফ আলভি।
পাকিস্তানি দৈনিকটি আরও লিখে, ইমরান খান 'একজন সত্যিকারের খেলোয়াড়ের মতো রাজনৈতিক খেলা' খেলতে পারতেন এবং এখনও ক্ষমতায় থাকতে পারতেন।
কিন্তু তিনি এর পরিবর্তে 'দেশকে একটি সাংবিধানিক সংকটের দিকে ঠেলে দেওয়ার পথই বেছে নিয়েছেন'।
- ডনের সম্পাদকীয় থেকে অনূদিত