আপাতত ইমরানই থাকছেন প্রধানমন্ত্রীর পদে
তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের আগ পর্যন্ত পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে বহাল থাকছেন পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান ইমরান খান। প্রেসিডেন্টের দপ্তর থেকে রোববার মধ্যরাতের পরে জারি করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়েছে। খবর জিও নিউজের।
সেখানে বলা হয়, ইসলামি প্রজাতন্ত্রী পাকিস্তানের সংবিধানের ২২৪-এ (৪) অনুচ্ছেদের অধীনে তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত ইমরান আহমেদ খান নিয়াজি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বহাল থাকবেন।
এর আগে রোববার ইমরান খানকে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে অপসারণের জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি করে পাকিস্তানের ক্যাবিনেট সচিবালয়।
তবে পাকিস্তানের সংবিধানের ২২৪ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত ইমরান খান প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বহাল থাকতে পারবেন।
টুইটারে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভিও ঘোষণা দেন যে, আপাতত ইমরান খানই প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করবেন।
তবে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি ভেঙে দেওয়ায় তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী কীভাবে নিযুক্ত হবেন সেটি এখনও স্পষ্ট নয়।
নির্বাচিত দিনগুলোর জন্য প্রধানমন্ত্রীর পদে বহাল থাকলেও সে সময় একজন নির্বাচিত সরকারপ্রধান যে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন ইমরান খানকে সে ক্ষমতা দেওয়া হবে না।
রোববার ইমরান খানের পরামর্শে সংসদ ভেঙে দেন প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি।
এর আগে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোট শুরু হওয়ার পর ডেপুটি স্পিকার কাশিম খান সুরি অনাস্থা ভোট প্রত্যাখ্যান করেন।
পাকিস্তানের তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের নিয়মনীতি
পাকিস্তানভিত্তিক ইংরেজি গণমাধ্যম দ্য ডন-এর একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, পাকিস্তানে 'অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার' গঠনের জন্য সংসদের বাইরের কর্মকর্তাদের নিযুক্ত করা হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ক্ষমতায় থাকা সরকার মেয়াদ শেষ হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হলেও, পাকিস্তানের ক্ষেত্রে তা হয় না।
ডেমোক্রেসি রিপোর্টিং ইন্টারন্যাশনাল (ডিআরআই) নামের একটি বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) বরাত দিয়ে দ্য ডন আরও জানিয়েছে, পাকিস্তানই বিশ্বের একমাত্র দেশ যেটি নির্বাচনের জন্য এ পদ্ধতিটি অবলম্বন করে।
পাকিস্তানের অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মূল কাজ হলো একটি স্বাধীন ও স্বচ্ছ নির্বাচনের জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি করা।
একইসাথে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এটিও নিশ্চিত করে যে সংসদ ভেঙে যাওয়া ও নতুন নির্বাচিত সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের মধ্যবর্তী সময়ে দেশটির সরকারি ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে যেন কোনো প্রকার স্থবিরতার সৃষ্টি না হয়।
বলা বাহুল্য, এ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অবশ্যই নিরপেক্ষ হতে হবে এবং এটি কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত হতে পারবে না।
২০২১ সালে পাকিস্তানের সংবিধানের কুড়িতম সংশোধনী আনা হয়। এ সংশোধনী অনুযায়ী কোনো প্রেসিডেন্ট তার পছন্দ অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা মুখ্যমন্ত্রী নিয়োগের ক্ষমতা রাখেন না।
তার বদলে ওই সংশোধনীতে দেশের প্রধানমন্ত্রী ও ভেঙে যাওয়া সংসদের বিরোধী দলের নেতা, এবং প্রতিটি প্রাদেশিক অ্যাসেম্বলির মুখ্যমন্ত্রী ও বিরোধী দলনেতাদের তত্ত্বাবধায়ক সরকার তৈরির ক্ষমতা দেওয়া হয়।
২০তম সংশোধনীতে আর্টিকেল ২২৪এ নামের নতুন একটি ধারা যুক্ত করা হয়। ওই ধারা অনুযায়ী যদি প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলের নেতা তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনে যদি কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিতে না পারেন, তখন ব্যাপারটি একটি সংসদীয় কমিটিতে হস্তান্তর করা হবে। সরকারি দল ও বিরোধী দল থেকে সমান সংখ্যক সদস্য নিয়ে ওই সংসদীয় কমিটি গঠন করা হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের ক্ষেত্রে এ কমিটিই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবে।