মহাকাশ স্টেশনে ভ্রমণ শেষে ফিরলেন নাসার প্রথম বেসামরিক পর্যটক দল
আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে এক ব্যয়বহুল ভ্রমণ শেষ করে অবশেষে পৃথিবীর বুকে ফিরেছেন ধনাঢ্য তিন ব্যবসায়ী। এর মাধ্যমে বি অ্যান্ড বি হোস্ট হিসেবে সফল অভিষেক হয়েছে নাসার।
স্পেসএক্স এর প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়, পর্যটকদের বহনকারী ক্যাপসুলটি ফ্লোরিডা উপকূলবর্তী আটলান্টিক মহাসাগরে অবতরণ করছে। আর ১৭ দিনের এই শ্বাসরুদ্ধকর ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিতে তিন ব্যবসায়ীকে ব্যয় করতে হয়েছে মাথাপিছু ৫৫ মিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ বাংলাদেশি মুদ্রায় তা প্রায় ৪৭৮ কোটি টাকা!
তবে মহাকাশ স্টেশনে ৭ দিন ভ্রমণের কথা থাকলেও, তারা থেকেছেন এর দ্বিগুণের বেশি দিন।
পৃথিবীতে ফিরে আসতেই তাই সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার স্পেসএক্স কেন্দ্র থেকে রেডিওতে শোনা যায় কন্ঠস্বর-"ওয়েলকাম ব্যাক টু প্লানেট আর্থ! আশা করি, মহাকাশে বাড়তি কয়েকটা দিন আপনারা দারুণ উপভোগ করেছেন।"
রিয়েল এস্টেট টাইকুন ল্যারি কনোরের গলায়ও ঝরে পড়ে তৃপ্তি, "অসাধারণ একটা মিশন!"
রবিবার রাতে মহাকাশ স্টেশন ত্যাগ করার আগে নাসার তিন নভোচারী এবং সাতজন হোস্টকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন অভিযাত্রীরা।
রাশিয়া কয়েক দশক যাবত মহাকাশ স্টেশনে ভ্রমণ অব্যহত রাখলেও, নাসা এতদিন তা এড়িয়ে গিয়েছিল। গত শরতেই একটি রাশিয়ান সিনেমা ক্রু এবং এরপর এক জাপানি ফ্যাশন মুঘল ও তার সহকারী মহাকাশে ঘুরে আসেন। প্রতিটি ভ্রমণেই তাদের সাথে একজন করে সক্রিয় মহাকাশচারীকে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে সদ্য মহাকাশ স্টেশনে ঘুরে আসা অতিথিদের সাথে ছিলেন নাসার একজন সাবেক নভোচারী, যিনি বর্তমানে এক্সিয়ম স্পেস-এ কাজ করছেন। এই ট্রিপের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো মহাকাশ স্টেশনে সম্পূর্ণ বেসামরিক পর্যটক দল পাঠানো হলো।
তবে অতিথি না বলে ক্রেতা বা গ্রাহক বলাটাই বেশি সমীচিন হবে, কারণ গাটের পয়সা খরচ করেই গেছেন কিনা তিনজন! গ্রাহকদের ভ্রমণসংক্রান্ত লজিস্টিকসের দায়িত্বে ছিল এক্সিয়ম স্পেস। গ্রাহকেরা হলেন ওহিওর রিয়েল এস্টেট টাইকুন ল্যারি কনোর, কানাডিয়ান প্রাইভেট ইকুইটি সিইও মার্ক প্যাথি এবং ইসরায়েলি বিনিয়োগকারী আইটান স্টিব। তাদের সহচরী হিসেবে ছিলেন এক্সিয়মের ভাইস-প্রেসিডেন্ট মাইকেল লোপেজ অ্যালেগ্রিয়া, যিনি ইতোমধ্যেই নাসার একজন নভোচারী হিসেবে চারবার মহাকাশে গিয়েছেন।
মহাকাশ স্টেশনে ভ্রমণকালীন নানা রকম এক্সপেরিমেন্ট চালিয়েছেন তারা। প্যাথি বলেন, "এই ভ্রমণ অনেক বিষয়ে আমাকে আলোকিত করেছে। আমার জীবনে এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব রয়ে যাবে।"
আইটান স্টিবের কাছে এই মহাকাশ ভ্রমণ ছিল আরো বিশেষ কিছু। ইসরায়েলের প্রথম নভোচারী ইলান র্যাণমনের অধীনে ফাইটার পাইলট হিসেবে কাজ করেছেন স্টিব। ২০০৩ সালে কলাম্বিয়ায় স্পেস শাটলের মধ্যেই মারা যান র্যা মন। সে সময় স্টিবই র্যাামনের ডায়েরির অক্ষত পৃষ্ঠাগুলো এবং তার বানানো শিল্পকর্মের কপি তার স্ত্রী-সন্তানের কাছে পৌঁছে দিয়েছিলেন।
এদিকে আগামী বসন্তে মহাকাশে দ্বিতীয় ফ্লাইট ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে এক্সিয়ম। ২০৩০ সালের মধ্যেই নিজস্ব স্পেস স্টেশন তৈরির প্রত্যাশা রয়েছে তাদের।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান