চার মাসে চীনে রাশিয়ার গ্যাস রপ্তানি বেড়েছে ৬০ শতাংশ
রাশিয়ার গ্যাস রাষ্ট্রায়ত্ত গ্যাস কোম্পানি- গ্যাজপ্রম জানিয়েছে, চলতি বছরের প্রথম চার মাসে দেশটি থেকে প্রতিবেশী চীনে গ্যাস রপ্তানি ২০২১ সালের একই সময়ের তুলনায় ৬০ শতাংশ বেড়েছে।
ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে যখন ইউরোপের অনেক দেশ রাশিয়া থেকে তাদের গ্যাস আমদানি কমাচ্ছে–ঠিক তখনই এমন সংবাদ জানালো কোম্পানিটি।
রোববার গ্যাজপ্রম জানায়, প্রথম চার মাসে 'নন-কমনওয়েলথ অব ইনডিপেন্ডেন্ট স্টেটস' জোটের দেশগুলোয় তাদের রপ্তানি কমে হয়েছে ৫০.১ বিলিয়ন ঘনমিটার। আগের বছরের চেয়ে যা ২৬.৯ শতাংশ কম।
অন্যদিকে, বেড়েছে চীনের কাছে বিক্রি। পাওয়ার অব সাইবেরিয়া-১ পাইপলাইনের মাধ্যমে চীনে গ্যাস রপ্তানি করে মস্কো, ২০১৪ সাল থেকে সচল হয় এ পাইপলাইন। ২০২০ সালে এটি দিয়ে ৪.১ বিলিয়ন ঘনমিটার গ্যাস সরবরাহ করা হয়। ২০২৫ সাল নাগাদ পূর্ণ সক্ষমতায় এ পাইপলাইন দিয়ে ৩৮ বিলিয়ন ঘনমিটার গ্যাস রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে বলে উল্লেখ করে গ্যাজপ্রমের আনুষ্ঠানিক বিবৃতি।
এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে চীনের সাথে ১১ হাজার ৭৫০ কোটি ডলারের একটি তেল ও গ্যাস বিক্রির চুক্তিতে সই করেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও তার চীনা রাষ্ট্রপ্রধান শি জিনপিং। এরমধ্যে নতুন একটি পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাজপ্রমের চীনে ১০ বিলিয়ন ঘনমিটার গ্যাস বিক্রির চুক্তিও রয়েছে। এই সরবরাহ করা হবে পাওয়ার অব সাইবেরিয়া-২ পাইপলাইন দিয়ে। রাশিয়ার দূর প্রাচ্যের শাখালিন দ্বীপ থেকে এটি চীনের উত্তরপূর্বের হেইলংজিয়াং প্রদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত হবে।
এনিয়ে গ্যাজপ্রমের বক্তব্য, "ফেব্রুয়ারিতে সই হওয়া চুক্তির সুবাদে দূর প্রাচ্যের রুট ধরে চীনে রাশিয়ান গ্যাসের চালান বার্ষিক ৪৮ বিলিয়ন ঘনমিটারে উন্নীত হবে।"
পাওয়ার অব সাইবেরিয়া-২ পাইপলাইনটি ২০২৬ সালের মধ্যে স্থাপন কাজ শেষ ও সচল হওয়ার আশা করা হচ্ছে। পুরোনোটির সাথে মিলে এটি ২০২১ সালে রপ্তানি হওয়া ১০ বিলিয়ন ঘনমিটার গ্যাস রপ্তানিকে আলোচিত ৪৮ বিলিয়নে উন্নীত করবে।
'সয়ুজ ভস্তক' নামের আরেকটি পাইপলাইন স্থাপনের পরিকল্পনাও করছে গ্যাজপ্রম। এই পাইপলাইন রাশিয়া থেকে মঙ্গোলিয়ার মধ্য দিয়ে চীন পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। এর মাধ্যমে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতি চীনে বছরে অতিরিক্ত আরও ৫০ বিলিয়ন ঘনমিটার গ্যাস পাইপের মাধ্যমে পাঠানো যাবে।
ইউক্রেনে আগ্রাসনের পর পর থেকেই মস্কোর ওপর নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে পশ্চিমা দেশগুলো, একইসঙ্গে তারা রাশিয়া থেকে জ্বালানি পণ্য আমদানির নির্ভরশীলতা কমানো ও বিকল্প উৎস থেকে সংগ্রহের চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু, বিশ্বের সবচেয়ে বড় জ্বালানি ভোক্তা চীন নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করে জানিয়েছে, রাশিয়ার সাথে তারা তেল,গ্যাস-সহ অন্যান্য পণ্যের বাণিজ্য অব্যাহত রাখবে।
জাহাজের মাধ্যমে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) ও পাইপলাইনের মাধ্যমে ২০২১ সালে রাশিয়া চীনে মোট ১৬.৫ বিলিয়ন ঘনমিটার গ্যাস রপ্তানি করেছে।
ইউক্রেন যুদ্ধের আগে ইউরোপে রাশিয়ার বার্ষিক গ্যাস রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১৭০ বিলিয়ন ঘনমিটার।
গত বছর চীনে গ্যাস ব্যবহারের পরিমাণ ছিল ৩৭২.৫ বিলিয়ন ঘনমিটার –এরমধ্যে আমদানি করা হয় ১৬৭.৫ ঘনমিটার। ২০২১ সালে দেশটির গ্যাস আমদানি আগের বছরের চেয়ে ১৯.৯ শতাংশ বেড়েছিল বলে চীনা সরকারি তথ্যসূত্র উল্লেখ করেছে।
- সূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট