পুরস্কারের টাকা কী কাজে লাগে!
প্রাইজ মানি মানে নোবেল পুরস্কারের টাকা নয়, গোকুর পুরস্কারের টাকা নয়। ইমপ্যাক, বুকার, পুলিৎজার এসব পুরস্কারের টাকা নয়। প্রাইজের মানে অন্য কিছু। প্রাইজ ল আছে. প্রাইজ কোর্ট আছে। প্রাইজ নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হলে প্রাইজ আদালত বিরোধ নিষ্পত্তি করত। কিন্তু তারও আগে, পঞ্চদশ শতকের আগে প্রাইজ কি ছিল তখনকার একটি ভাষ্যের অনুবাদ তা বলে দেবে: ডাকাতরা স্বর্ণকারের জানালা ভেঙ্গে যা নিয়ে গেল তার নামই প্রাইজ।
প্রাইজ টেকিং মানে চুরি ডাকাতির মাল নেওয়া। পঞ্চদশ শতকে বিভিন্ন দেশের বাণিজ্যিক জাহাজ যখন সমুদ্রে নামল, জলদস্যুও নামল, বিভিন্ন দেশের নৌবাহিনী যুদ্ধে জড়িয়ে গেল। হিউগো গ্রোটিয়াস ১৬০৪ সালে আইনের বই প্রকাশ করলেন 'কমেন্টারি অন দ্য ল অব প্রাইজ অ্যান্ড বুটি'--প্রাইজ এবং বুটি অনেকটাই কাছাকাছি--লুটের মাল। এই আইনের দ্বাদশ অধ্যায় স্পষ্ট করে দিল ডাচরা স্প্যানিশ ও পর্তুগিজ জাহাজ অবরোধ করতে পারলে তা অন্যায় মনে করা যাবে না। বলা আবশ্যক হিউগো গ্রোটিয়াস (১৫৮৩-১৬৪৫) একজন ডাচ আইনজীবী।
আক্রান্ত জাহাজ
হোমারের কাল থেকেই শত্রুর মালামাল অবরোধ করে নিজেদের অধিকার নিয়ে আসার বৈধতা দেওয়া হয়েছে। যুদ্ধের সময় যদি কোনো শত্রু জাহাজ বা কার্গো ধরা পড়ে তা হলে সে জাহাজের মালামাল বিজয়ীরা নিয়ে যেতে পারবে--এটাই প্রাইজ। প্রাইজ ল'তে এই প্রাইজ বন্টনের সূত্র দেওয়া হয়েছে। অর্থমূল্যে রূপান্তরিত হয়ে তা প্রাইজ মানি হয়। কোনো নিরপেক্ষ জাহাজ যদি নিষিদ্ধ পণ্য নিয়ে শত্রুর এলাকার দিকে যেতে থাকে তাহলে ধরা পড়া সেই নিরপেক্ষ জাহাজের পণ্যও প্রাইজ হিসেবে বিবেচিত হবে। এ ছাড়াও জলদস্যুর জাহাজ, দাস প্রথা বিলোপের পরও কোনো স্লেভশিপ এবং নেভিগেশন অ্যাক্ট অমান্য করা জলযান ধরতে পারলেও প্রাইজ মানি প্রদান করা হয়। প্রাইজ মানি কত ধরা হবে তা নির্ভর করবে অবরুদ্ধ জাহাজের পাওয়া বন্দুক গোলাবারুদ ও অন্যান্য সামগ্রীর মূল্যমানের উপর।
সংক্ষেপে স্থলভাগের সৈন্যরা যুদ্ধ জিতে কিংবা অবরোধ করে যে মালামাল লুট করে তা হচ্ছে বুটি আর নৌবাহিনী বিশেষ বিশেষ জাহাজ অবরোধ ও পরাস্থ করে যা পায় তা হচ্ছে প্রাইজ। প্রাইজ ল এখনও বিদ্যমান রয়েছে, তবে উনবিংশ শতকের মধ্যভাগের পর এই আইনের প্রয়োগ হ্রাস পায় এবং নৌবাহিনীর সদস্যদের প্রাইজ গ্রহণ নিষিদ্ধ ঘোষনা করা হয়।
সেনেকার স্মরণীয় উক্তি: In war there is no prize for runner up-যুদ্ধে রানার আপের কোনো পুরস্কার নেই।
'সম্মান হচ্ছে বোকার পুরস্কার, সুনামে মৃতের কিছু এসে যা না'। স্টার ওয়ার্স সিরিজের কানাডিয়ান লেখক ড্রু কার্পিশিন সম্ভবত ভুল বলেননি। যারা পুরস্কারের সম্মানের দিকটা দেখেন আমি তাদের দলে নেই, আমি পুরস্কারের টাকার অঙ্কটা দেখি। সে জন্যই চোখটা নোবেল পুরস্কারের টাকার উপর। ২০২০ সালে তা ডলারের অঙ্কে ১১ লক্ষ ৪৫ হাজার ডলার। ১৯২২-এ যখন আইনস্টাইন পেলেন ১২১,৫৭২ সুইডিশ ক্রোনার। কিন্তু আমাদের অজান্তে টাকার অঙ্কে মধ্যপ্রাচ্যের মিলিয়নস পোয়েট প্রাইজ নোবেল প্রাইজকে ছাড়িয়ে গেছে, অঙ্কটা ১৩ লক্ষ ৬১২১০ ডলার।
১৯০১ থেকে ২০২০ একশ কুড়ি বছরে মোট ৯৬২ জন নোবেল পুরস্কার পেয়েছে (পদার্থ বিজ্ঞান ২১৬, রসায়ন ১৮৬, চিকিৎসা বিজ্ঞান ২১২, সাহিত্য ১১৭, শান্তি ১৩৫, অর্থনীতি ৮৬)। এ তালিকা থেকে ক'জন পুরস্কারের টাকাটা কেমন করে খরচ করলেন তা তুলে ধরার চেষ্টা করা যেতে পারে।
তার আগে টাকাটা এলো কোথা থেকে?
প্রকৃত মৃত্যুর ৮ বছর আগে ডিনামাইট আবিষ্কারক আলফ্রেড নোবেল ফরাসি সংবাদপত্রে পড়লেন 'দ্যা মার্চেন্ট অব ডেথ ইজ ডেড'- মৃত্যু ব্যাপারি মারা গেছেন।
কোনো সন্দেহ নেই তার আরিষ্কার করা ঘাতক ডিনামাইট মাথায় রেখে আলফ্রেড নোবেলের জন্য এই শ্লেষ্মাত্মক অবিচুয়ারি লিখা হয়েছে। প্রকৃত পক্ষে সে সময় মৃত্যুবরণ করেন আলফ্রেড নোবেলের ভাই; তারা মনে করেছেন আলফ্রেড।
আলফ্রেড বড় ধাক্কা খেলেন। তা হলে এটাই তার সম্পর্কে সাধারণ ইমেজ। তিনি তার উইল বদলাতে হাত দিলেন এবং তার সম্পদের ৯৪ শতাংশ পুরস্কারের জন্য চিহ্নিত করে ফাউন্ডেশন সৃষ্টি করলেন। সবগুলো পুরস্কারের মৌল প্রেরণা হতে হবে মানব কল্যাণ।
১০ ডিসেম্বর ১৮৯৬ আলফ্রেড নোবেল মৃত্যুবরণ করেন। ১৯০১ থেকে পুরস্কার প্রদান শুরু হয়। বর্তমানে নোবেল ফাউন্ডেশনের বিনিয়োগকৃত অর্থকড়ির পরিমান প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি।
শুরুর টাকাটা আলফ্রেড পেলেন কোথায়? প্রথমত তিনি বিখ্যাত ও ধনী মানুষের সন্তান। তার বাবা ইমানুয়েল নোবেল প্রকৌশলী, স্থপতি, বিজ্ঞানী এবং শিল্পপতি। ঘুর্ণায়মান লেদ মেশিনের তিনি আবিষ্কারক। আর আলফ্রেড বাবাকে ছাড়িয়ে, ডিনামাইট বাদেও ৩৩৫টি পণ্যের প্যাটেন্ট রাইট ছিল তার। প্রচুর উপার্জন করেছেন।
শুরুটাই খারাপ ছিল
১৯০১ সালে আলফ্রেড নোবেলের মৃত্যুর পঞ্চম বছর প্রথম নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়। দুই মহাযুদ্ধের সময় কয়েকটি বছর বাদ দিয়ে প্রত্যেক বছরই নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়, অর্থনীতির পুরস্কারটা ১৯৬৯ থেকে শুরু হয়। টাকাটা যদিও ভিন্ন উৎস সুইডিশ ব্যাঙ্ক থেকে আসে তবুও এটিও নোবেল পুরস্কার নামেই পরিচিত।
প্রথমবার সাহিত্যের নোবেল পুরস্কার রুশ ঔপন্যাসিক লেভ তলস্তয় পেতে যাচ্ছেন এটা বেশ রটে গিয়েছিল। তার সঙ্গত কারণও ছিল। সে সময় তলস্তয়ের মতো সুপরিচিত এবং সাহিত্যগুণে তাকে ডিঙ্গিয়ে যাবার মতো কোনো লেখক ছিলেন না।
১৮৯৮ সালে গুজবটা যখন তুঙ্গে তলস্তয় বিশ্বাস করে নিয়েছিলেন যে তিনিই পাচ্ছেন। হায়াত মামুদ লিখেছেন,'তলস্তয় সরাসরি সুইডেনের একটি কাগজে এই মর্মে একটি চিঠি ছাপালেন যে পুরস্কার যদি তাকে দেয়া হয় তাহলে পুরস্কারের অর্থ এক হাজার রুবলের মতো যেন দুখবোর সম্প্রদায়ের হাতে অর্পন করা হয়।'
গুজবটির বাস্তব ভিত্তি সম্ভবত ছিল না। তিনি পুরস্কার পাননি। তলস্তয় তখন ফাদার সের্গেই ও রেজারেকশন গ্রন্থ বিক্রির আগাম ৮০,০০০ রুবল নিয়ে দুখবোর সম্প্রদায়কে দান করলেন। তখনও বই দুটো প্রকাশিত হয়নি। তার দেওয়া টাকায় একটি জাহাজ কিনে দুখবোর সম্প্রদায় স্বদেশ ছেড়ে কানাডায় চলে যায় এবং সেখানে স্থায়ী বসতি স্থাপন করে।
সুইডিশ একাডেমির পুরস্কার প্রাপক নির্বাচন কেলেঙ্কারির সূচনা প্রথম বছরেই। তারা সাহিত্যের প্রথম নোবেলটি লেভ তলস্তয়কে (১৮২৮-১৯১০) এড়িয়ে ফরাসি কবি সুলি প্রুদমকে (১৮৩৯-১৯০৭) প্রদান করলে সুইডিশ লেখকরাও চটে যান। তারা একাডেমির অবিবেচনাপ্র সূত সিদ্ধান্তের জন্য নিজেরা যে ক্ষুব্ধ তা জানিয়ে তলস্তয়কে চিঠি লিখেন। ২২ জানুয়ারি ১৯০২ তলস্তয় তাদের চিঠির জবাবে বলেন:
নোবেল পুরস্কার যে আমাকে দেওয়া হয়নি তাতে আমি ভারি খুশি হয়েছি। প্রথমত এত টাকা দিয়ে আমি কি করতাম--সে সমস্যা থেকে আমাকে বাঁচিয়ে দেওয়া হয়েছে, কারণ আমার বিবেচনায় অর্থ কেবল অশুভের দিকেই নিয়ে যায়। দ্বিতীয়ত আমি যাদের চিনি না, জানিনা এমন কত জ্ঞানীগুণী মানুষের সমবেদনা লাভের সম্মান ও সৌভাগ্য তো আমার হতো না। (হায়াত মাহমুদের অনুবাদ)
১৯০১ সালের পর আরও ৯ বছর তলস্তয় বেঁচেছিলেন। তিনি পাননি প্রত্যাশিত নোবেল পুরস্কার। এ টাকার একটি অংশ লাঞ্ছিত দুখবোর সম্প্রদায়কে দিতে চেয়েছিলেন, পান্ডুলিপির জন্য আগাম টাকা নিয়ে তার চেয়ে বহুগুণ বেশি অর্থ তাদের দিয়েছেন। অর্থই অনর্থের মূল-এর সবটুকুই সত্য নয়। যদি তলস্তয়কে দিয়ে শুরু করা যেত নোবেলের অর্থ বিপন্ন মানুষের জন্য খরচ করার একটি ঐতিহ্য সম্ভবত গড়ে উঠত।
নোবেলের টাকা: রবীন্দ্রনাথ কী করলেন?
বিশ্বভারতী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছে লেখা আবোল-তাবোল চিঠি (পত্রলেখকদের কাছে অবশ্যই সিরিয়াস) পাগলা ফাইলে সংরক্ষণ করেছে অমিতাভ চৌধুরী সেখান থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ চিঠি তুলে এনেছেন।
গুরুদেবকে তার এক ভক্ত পাঠক, সম্ভবত লেখকও লিখেছেন :
সবিনয় নিবেদন,
আপনার নোবেল প্রাইজ পাবার টেকনিক অতিসত্ত্বর জানান। তাহা হইলে আমি যদি প্রাইজ পাই, মোট প্রাপ্য টাকার অর্ধাংশ আপনাকে দিব।
গুরুদেব হাজার চিঠির জবাব লিখলেও এই চিঠিটির ব্যাপারে নিশ্চুপ ছিলেন। অর্ধেক টাকা পাবার সম্ভাবনা থাকার পরও তিনি টেকনিকটি তাকে জানাননি। সম্ভবতঃ তিনি চাননি তার জীবদ্দশায় তার সমমর্যাদার কেউ তার সামনে ছড়ি ঘুরিয়ে বেড়ান, বড় বড় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি, সভাপতির চেয়ারে বসুন! ট্রেড সিক্রেটটা তিনি ফাঁস করেনি। অমর্ত্য সেন অর্থনীতির নোবেল পেয়ে টেকনিকটা ভ্রাতুষ্পুত্রসহ অভিজিৎকে বলেছিলেন বলেই না আরেকটা নোবেল এসেছে। রবীন্দ্রনাথের টেকনিক তার সাথে শশ্মানঘাটে ভষ্মীভূত হয়ে গেছে, এ জন্যই তার মৃত্যুর চার কুড়ি বছরেও কোনো বাঙ্গালির সাহিত্যে নোবেল পাবার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
এটা তো সত্যি সঙ্গ অফারিংস নামের। ঈশ্বর ভজন করা দোয়াদরুদের একটি বই-ই সুইডিশ একাডেমির সদস্যদের মন ভজাতে যথেষ্ট নয়; কাজেই বিলেতে গিয়ে শেতাঙ্গদের ভালোমন্দ খাবার খাইয়ে হাত করে প্রস্তাব পাঠাতে অনুপ্রানিত করিয়েছেন।
টেকনিক জানতে চাননি এমন ক'জন সমস্যাপীড়িত মানুষ কমবেশি টাকা চেয়ে রবীন্দ্রনাথকে চিঠি দিয়েছেন। আত্মসম্মান জ্ঞানসম্পন্ন দু'একজন টাকা ফেরত দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ধার চেয়েছেন। রবীন্দ্রনাথ তাদের কিছু দিয়েছেন এমন রেকর্ড নেই।
নোবেল পুরস্কার এবং সঙ্গে অনেকগুলো টাকা পেয়ে রবীন্দ্রনাথ হতবাক হয়ে গিয়েছেন মনে করার কারণ নেই। তার দাদা প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর ব্রিটিশদের যে পরিমান উপহার সামগ্রী দিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ তার একাংশ কেবল তুলে আনতে পেরেছেন।
দ্বারকানাথের বংশধরদের কাছে এটা টাকার অঙ্কে খুব বড় কিছু নয়। টাকাসহ পুরস্কার কলিকাতার দিকে আসছে রবীন্দ্রনাথ জানতেন। তিনি পুরস্কার গ্রহণে সম্মত কিনা তার প্রকাশক ম্যাকমিলানের মাধ্যমে জানতে চাওয়া হয়। সাড়ে উনিশ টাকা ডাক খরচ দিয়ে বিলেতে প্রকাশকের ঠিকানায় তিনি টেলিগ্রামে সম্মতিসূচক জবাব দিয়েছেন।
প্রশান্ত কুমার পালের রবিজীবনী ষষ্ঠ খন্ডে প্রমাণাদিসহ বলা হয়েছে যে, চার্ডার্ড ব্যাংকের চেক মারফত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছে ১,১৬,২৬৯ টাকা এসেছে। এর মধ্যে ৪৮০০০ টাকা শতকরা ৭ টাকা সুদে কৃষি ব্যাংকে জমা করা হয়। একই সুদে কালীগ্রাম কৃষি ব্যাংকে জমা রাখা হয় ২৭০০০। এই টাকার সুদ চলে যেত ব্রহ্মাশ্রমে।
নোবেল পুরস্কারের কারণে রবীন্দ্রনাথের ১৯১৪-১৯১৫ অর্থ বছরের আয় বেড়ে যাওয়ায় তাকে ২,০৭০ টাকার কিঞ্চিত বেশি পরিমান অর্থ আয়কর হিসেবে প্রদান করতে হয়।
ম্যারি কুরির নোবেল মানি
সরবোন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম নোবেল বিজয়ী, নারীদের মধ্যেও নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তিতে সর্বপ্রথম ম্যারি কুরি। ১৯০৩ সালে পদার্থ বিজ্ঞানের পুরস্কারের টাকাটা প্রথমে দুভাগ হয়--স্পন্টেনাস রেডিও অ্যাক্টিভিটিজ আবিষ্কারক আন্তোইন অরি বেকারেল পান অর্ধেক টাকা; আর এই গবেষণা এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য পিয়েরে কুরি পান সিকিভাগ এবং তার স্ত্রী মাদাম ম্যারি কুরি পান বাকী সিকিভাগ।
পিয়েরে এবং ম্যারি তাদের ভাগের টাকাটা আরো বেশি গবেষণার জন্য ঢেলে দেন। তাতে সুফল ফলে, ১৯১১ সালে ম্যারি কুরি রেডিওঅ্যাক্টিভ র্যাডিয়াম ও পলোনিয়াম আবিষ্কারসহ এই শাখায় উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য এককভাবে রসায়নের নোবেল পুরসস্কার পান। টাকাগুলো পুনরায় গবেষনায় বিনিয়োগ করেন--১৯৩৫ সালে তার কন্যা আইরিন জুলিও কুরি এবং তার স্বামী ফ্রেডেরিক জুলিও কুরি রসায়নে নোবেল পুরস্কার পান।
ল্যাবরেটরিতে কাজ করার সময় তেজস্ক্রিয় মৌল তার হাত ও বাহু পুড়িয়ে দেয়, মনে করা হয় এই তেজস্ক্রিয়তা তার রক্তে ক্যান্সার লিউকোমিয়া বাড়িয়ে দেয় এবং ৫৮ বছর বয়সে তার মৃত্যু হয়।
নোবেলের টাকায় ধর্মশালা
১৯৯৯-র চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল বিজয়ী গুন্টার ব্লোবেল প্রোটিন গবেষণায় এককভাবে পুরস্কার পান। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় গুন্টার ব্লোবেল শরণার্থী ক্যাম্প থেকে দেখেছেন তার প্রিয় শহর ড্রেসডেন মিত্রবাহিনীর বোমাবর্ষণে ভষ্মীভূত হচ্ছে। গির্জা, সিনাগগ কোনো কিছুই আগুনের লেলিহান শিখা থেকে রেহাই পাচ্ছিল না। বোমার আগুনে নিহত হয় তার উনিশ বছর বয়সী বোন রুথ ব্লোবেল। ১৯৪৫ সালে শহরের বাইরের একটি শরনার্থী শিবির ছিল তার আশ্রয়স্থল। পুরস্কারের পুরো টাকা প্রায় এক মিলিয়ন ডলার তিনি ড্রেসডেন সিটি কাউন্সিলকে দিয়ে দেন। টাকাটা ব্যয় হবে একটি নতুন সিনাগগ (ইহুদি প্রার্থনালয়) নির্মাণে এবং ক্যাথিড্রাল মেরামতে।
তিনি লিখেছেন: আমার জীবনের সবচেয়ে বড় আনন্দ পুরস্কারের সব টাকা আমার বোন রুথ ব্লোবেলের স্মৃতির উদ্দেশ্যে ড্রেসডেন শহরের পুনর্গঠনে দান করতে পেরেছি। গুন্টার ব্লোবেল নিজের আরও অর্থ দান করেছেন তার স্ত্রী লরার বাবার শহর ইতালির ফুবাইনে একটি চার্চ পুনর্গঠনে। গুন্টার ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ সালে মৃত্যুবরণ করেন।
২০১২ সালের শান্তির নোবেল দেওয়া হয় ইউরোপিয় ইউনিয়নকে। পুরো টাকা যুদ্ধে লিপ্ত অঞ্চলগুলোর শিশুদের কল্যাণে দান করা হয়। ১৯৯১-র শান্তির নোবেল বিজয়ী অং সান সুচি তার পুরস্কারের পুরো টাকা ১.৩ মিলিয়ন ডলার দুঃস্থ বার্মিজদের জন্য স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ট্রাস্ট গঠন করে তাতে দান করবেন বলে ঘোষণা দেন। কিন্তু তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের একটি হচ্ছে তিনি এই টাকা আদৌ দেশেই আনেননি। কর ফাঁকি দিয়ে তা বিদেশে খরচ করেছেন। রোহিঙ্গা গণহত্যা ও জাতিগত উচ্ছেদে প্রত্যক্ষ সমর্থন দিয়ে তিনি যথেষ্ট নিন্দিত হয়েছেন এবং তার নোবেল পুরস্কার প্রত্যাহারের দাবি উঠছে অনেকদিন ধরেই।
দানেই তৃপ্তি
শান্তির জন্য নোবেলের পুরো টাকাটা মাদার টেরেসা অনাথ শিশুদের কল্যাণে ব্যয় করেছেন। শুধু টাকা নয় তিনি তো জীবনটাই উৎসর্গ করছেন মানুষের কল্যাণে।
২০০৯ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী বারাক ওবামাকে নিয়ে নরওয়েজিয়ান কমিটির সচিব বলেছেন, তিনি যে নোবেল আদর্শের সমমাপের নন এটা কমিটিকে বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছেন। ভালো দিক পুরস্কারের পুরো টাকা তিনি সুবিধাবঞ্চিত তরুণদের উচ্চ শিক্ষার জন্য দান করেছেন।
২০০৬ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কারের অর্ধেক গ্রামীন ব্যাংকের এবং অর্ধেক ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ ইউনুসের জন্য বরাদ্দ হয়। অধ্যাপক ইউনুস তার ভাগের অর্থ দরিদ্রজনকে সক্ষম কর্মীতে পরিণত করার কাজে ব্যয় করেছেন।
২০০৭ সালের শান্তি পুরস্কার ভাগাভাগি হয়েছে আইপিসিসি (ইন্টারগর্ভানমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ) এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং পরিবেশ আন্দোলনে নেতৃত্ব দানকারী আল গোরের মধ্যে। আল গোর তার ভাগের প্রায় সাড়ে সাত লক্ষ ডলার এলায়েন্স ফর ক্লাইমেন্ট প্রটেকশনকে দান করেছেন।
নোবেলের টাকায় বাড়ি-ঘর
এমআইটির প্রফেসর ভোল্কগাং কেটের্ল আরো দুজনের সাথে ২০০৯ সালের পদার্থ বিজ্ঞানের নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। তার নিজস্ব কোনো বাড়ি ছিল না। তিনি বললেন,'নোবেলের টাকায় আমি একটি বাড়ি কিনেছি, বাকীটা ছেলেমেয়ের পড়াশোনায় ব্যয় করেছি। ১৯৮৫ তে অর্থনীতির নোবেল পেয়েছে ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলোজির অধ্যাপক ইতালির বংশোদ্ভূত ফ্রাঙ্কো মদিলিয়ানি, তিনি নোবেলের টাকায় পালের নৌকা কিনেছেন।
২০১২-র নোবেল সাহিত্য পুরস্কার বিজয়ী চীনের কথাশিল্পী মো ইয়ান নোবেলের টাকার একাংশ দিয়ে শহরে বাড়ি কিনেছেন, বাকীটা ব্যাঙ্কে রেখে দিয়েছেন।
১৯৯৩-র চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল বিজয়ী দু'জনের একজন আমেরিকান ফিলিপ শার্প পুরোনো আমলের একটি বাড়ি কিনেছেন আর ব্রিটিশ বিজ্ঞানী রিচার্ড রবার্টস টাকা দিয়ে তার বাড়ির সামনের ৮০০০ বর্গফুট বল খেলার উপযোগী করে তুলেছেন।
২০০৪-র নোবেল সাহিত্য পুরস্কার বিজয়ী এলফ্রিদে ইলেনেক পুরস্কারের অর্থ পেয়েছেন ১.৪ মিলিয়ন ডলার, পাবার পর এক সাংবাদিক জিজ্ঞেস করলেন, তার কাছে এ পুরস্কারের মানে কি? তিনি জবাব দিলেন, অবশ্যই অর্থনৈতিক স্বাধীনতা। এই টাকা তিনি খরচ করেছেন বাড়ির বন্ধক পরিশোধে, একটি গাড়ি কিনে আর দুর্দিনের কথা ভেবে কিছু টাকা ব্যাংকে রেখে দিয়েছেন। অস্ট্রিয়ান এই নোবেল বিজয়ী মূলত ঔপন্যাসিক, তার জন্ম ২০ অক্টোবর ১৯৪৬, তার নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তিতে প্রতিবাদ করে সদস্য লুট আনলুন্ড একাডেমি থেকে পদত্যাগ করে বলেছেন--একজন অনুপযুক্ত লেখককে পুরস্কৃত করা হয়েছে। ঘাতক স্লোভোদান মিলোসেভিচের সমর্থক পিটার হান্ডকের পুরস্কার প্রাপ্তির প্রশংসা করে তিনি সমালোচিত হয়েছেন।
১৯৯৫-র চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল বিজয়ী ক্রিস্টিন লুসলিন ভোলার্ড তার পুরস্কারের অধিকাংশ অর্থ একটি চ্যারিটিকে দিয়েছেন, এই চ্যারিটি জার্মান নারীদের বিজ্ঞান শিক্ষায় সহায়তা করে। তার নিজের নামে গড়া একটি ফাউন্ডেশন নারী বিজ্ঞানীদের নিরবিচ্ছিন্ন কাজে সহায়তা করতে তাদের সন্তান লালনসহ নানা গার্হস্থ্য প্রয়োজনে সহয়তা সমর্থন দিয়ে থাকে।
টাকা ও তৃপ্তি, সঞ্চয় ও খরচ
স্কটল্যান্ডে জন্ম তবে আমেরিকান অর্থনীতিবিদ অঙ্গাস ডিটন অর্থনীতির নোবেল পুরস্কার পেলেন ২০১০ সালে- ভোগ, দারিদ্র্য ও কল্যাণের বিশ্লেষণে। তারা পুরোজীবন কেটেছে টাকা পয়সার গবেষণায়, তিনি কেমন করে খরচ করবেন? তিনি জবাব দিলেন, আমার পেশাগত জীবনে ব্যয় ও সঞ্চয় নিয়ে কাজ করেছি, কিন্তু এখনো অনেক কিছু বুঝে উঠতে পারিনি। তবে আমরা একটা ব্যাপার শিখেছি হঠাৎ করে পাওয়া টাকা সবটা খরচ করতে নেই। ট্যাক্স শোধ করার পর আমি টাকাটা সঞ্চয় করে রেখেছি। যুক্তরাষ্ট্রে পুরস্কারের টাকা আর সাধারণ আয়ের টাকা একভাবেই বিবেচনা করা হয়।' তিনি তখন কেবল প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর নিয়েছেন। 'কাজেই পুরস্কারের টাকাটা রিটায়ারমেন্ট ফান্ডের সাথে যোগ হবে--পরবর্তী বছরগুলোতে তা খরচ করব।'
১৯৯৭ সালের রসায়নের নোবেল বিজয়ীদের পুরস্কারের টাকাটা তিনভাগ হয়ে গেছে। তাদের একজন স্যার জন ওয়াকার বললেন ভাগাভাগির কারণে টাকার অঙ্কটা তেমন বড় নয়। যখন টাকাটা হাতে আসে আমার সন্তানরা ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হতে যাচ্ছে। টাকাগুলো তাদের আন্ডার গ্র্যাজুয়েট ও গ্র্যাজুয়েট স্টাডিতে ব্যয় হয়েছে। নোবেলের টাকাটা অবশ্যই আমার অনেক দুশ্চিন্তা দূর করেছে। পড়াশোনার খরচ তো কম নয়।'
সুপ্রজনন বিজ্ঞানী স্যার পল নার্স ২০০১ সালে চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল পেলেন; টিম হান্টের সাথে মিলে প্রোটিন কণিকা আবিষ্কার করলেন যা কোষ ও কোষ সাইকেল নিয়ন্ত্রণ করে। গুজব রটল নোবেলের টাকায় তিনি ব্যক্তিগত উড়োজাহাজ কিনেছেন। যারা গুজবটি রটিয়েছে উড়োজাহাজের দাম সম্পর্কে তাদের ধারনাই নাই। আসলে তিনি নিজেকে উপহার দিয়েছেন একটি কাওয়াসাকি মোটর সাইকেল, পরে একটি গাড়ি কেনেন।
মায়ের নামে পুরস্কার
২০০০ সালের চিকিৎসা বিজ্ঞানের নোবেল পেয়েছেন তিনজন: স্যার পার্ল গ্রিনগার্ড, আরভিড কার্লসন এবং এরিখ ক্যান্ডেল। গ্রিনগার্ড তার ভাগের পুরো টাকা (৪ লক্ষ ডলার) দিয়ে পার্ল মিস্টার গ্রিনগার্ড প্রাইজ প্রবর্তন করেছেন।
পার্ল মিস্টার ছিলেন এই বিজ্ঞানীর মা। তাকে জন্ম দিতে গিয়ে মায়ের মৃত্যু হয়। যে মাকে তিনি কখনো দেখেননি তার সম্মানে নারী বিজ্ঞানীদের জন্যে ৫০ হাজার ডলারের পুরস্কার প্রবর্তন করেন। তিনি মনে করেন এমন কি উচ্চ পর্যায়েও বিজ্ঞানে নারীদের প্রবেশাধিকার সীমিত করে রাখা হয়েছে।
আয়করের ভয়ে
২০০৬ সালের পদার্থ বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন দু'জন জর্জ স্টুট এবং জজ সি মাথের। জর্জ স্টুট বলেন, পুরস্কারের টাকাটা আমি নিলে যুক্তরাষ্ট্র আর ক্যালিফোর্নিয়ার আয়কর বিভাগের লোকজন অর্ধেক টাকাটা কেটে নিত। সুতরাং টাকাটা নিজে না নিয়ে আয়কর বিভাগকে না দিয়ে তরুণদের উচ্চশিক্ষায় ব্যয় করতে একটি ফাউন্ডেশনকে দিয়ে দিয়েছেন। আর জন সি মাথের বললেন, তার গবেষণা টিমে কাজ করেছেন ১৫০০ জন। নোবেলের টাকা সবাইকে ভাগ করে দিলে কারোই তেমন উপকার হবে না। কাজেই নাসায় কর্মরত তরুণ মহাকাশ বিজ্ঞানীদের কল্যাণে এই টাকা দিয়ে নিজের ও স্ত্রীর নামে জন ও জেইন মাথের ফাউন্ডেশন গড়ে তুলেছেন। নোবেলের টাকার সাথে যোগ করেছেন মহাকাশ গবেষণার জন্য ২০০৬ সালের গ্রুবার প্রাইজের টাকাটাও এতে যোগ করেছেন।
২০১৭-র পদার্থ বিজ্ঞানে নোবেল বিজয়ী রেইনার উইস পুরস্কারের টাকাই তার প্রতিষ্ঠান ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনালজিকে দিয়ে দিয়েছেন।
একই বছরের অর্থনীতির নোবেল বিজয়ী রিচার্ড থালের কৌতুক করে বলেছেন, যতটা অযৌক্তিকভাবে টাকাটা খরচ করা সম্ভব হয় আমি তাই করব।' রিচার্ড থালের অচরণগত অর্থনীতির অন্যতম প্রবক্তা। ব্যক্তির সিদ্ধান্ত গ্রহণে অর্থনৈতিক ও মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণের একটি সেতু নির্মাণ করেছেন তিনি।
স্বাধীনতা ক্রয়
২০১৫ সালের সাহিত্যের নোবেল লরিয়েট স্ফেতলানা আলেক্সিয়েভা পেলেন ৯ লক্ষ ৫৩ হাজার ডলার। তিনি বললেন, এই টাকায় আমি স্বাধীনতা কিনব। আমি অনেক দিন ধরে বই লিখি, ছাপি, এখানে ওখানে যাই, তাতে টাকার দরকার হয়। কেমন করে টাকা উপার্জন করব সেই দুশ্চিন্তা না করে আমি এখন আমার কাজ করে যেতে পারব।
১৯৮৮-র পদার্থ বিজ্ঞানের বিজয়ী লিওন লেডারম্যান, মেলভিন শোয়ার্জ এবং জ্যাক স্টেইনবার্গার। নোবেলের এক তৃতীয়াংশ টাকা পেলে লিওন লেডারম্যান এই টাকায় শান্তিতে সময় কাটাবার জন্য তিনি ও তার স্ত্রী আইডাহোতে একটি ভ্যাকেশন কেবিন কিনলেন। ২০৯৫ সালে তার চিকিৎসার জন্য নোবেল পদকটি নিলামে বিক্রি করা হয় এবং ৭৬৫০০০ ডলার পাওয়া যায়। ২০১১ থেকে তিনি স্মৃতিভ্রংশ রোগে ভুগছিলেন। ৩ অক্টোবর ২০১৮ এই বিজ্ঞানী আইডাহোতে মৃত্যুবরণ করেন।
২০১০ সালে পিটার ডায়মন্ড ডেইল মরস্টেনের সাথে লন্ডন স্কুল অব ইকনমিক্সের অধ্যাপক ক্রিস্টোফার পিসারাইডস অর্থনীতির নোবেল পুরস্কার পান। ক্রিস পিসারাইডস তার বাড়ি সাজিয়ে পরিবারের সবার জন্য ভালো কাপড় চোপড় কিনে এবং অনেককে সাথে নিয়ে নোবেল পুরস্কারের অনুষ্ঠানে গিয়ে ভ্রমণ খরচ দিয়ে টাকা শেষ করে ফেলেন।
হেমিংওয়ে ও ম্যারি ওয়েলশ
২৮ অক্টোবর ১৯৫৪। ভোরবেলা আর্নেস্ট হেমিংওয়ের চতুর্থ স্ত্রী ম্যারি ওয়েলশ ঘুমিয়ে আছেন। হামাগুড়ি দিয়ে কাছে এসে ফিসফিস করে হেমিংওয়ে তার স্ত্রীকে বললেন, আমি ওটা পেয়ে গেছি!
ম্যারি জিজ্ঞেস করলেন, কোনটা?
হেমিংওয়ে বললেন, সুইডিশ জিনিসটা।
তারপর দম নিয়ে বললেন, ৩৫ হাজার ডলার। অনেক টাকা। ৩৫ হাজার ডলার দিয়ে অনেক মজা করা যাবে।
হেমিংওয়ে সারাজীবন নিজের মত করে মজাই করেছেন, আয়ের বড় অংশ মদ্যপানে এবং সমুদ্রে ব্যয় করেছেন। বেশ ক'টি বন্দুকও কিনেছেন। ১৯৬১-র ২ জুলাই মুখের ভেতর দু'নলা বন্দুক ঢুকিয়ে ট্রিগার টিপে নিজের জীবন হনন করে নিয়েছেন।
১৯২০ সালের শান্তির নোবেল বিজয়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট উড্রু উইলসন তার নোবেল পুরস্কারের টাকাটা আমেরিকায় আনেননি, টাকা রেখে দেন সুইডেনের ব্যাংকে, সেখানে সুদের টাকাটা যোগ হবে। উড্রু উইলসন চিন্তিত ছিলেন তার প্রেসিডেন্ট পরবর্তী জীবনের জন্য। সে সময় প্রেসিডেন্টের জন্য কোনো পেনশন নির্ধারিত ছিল না।
১৯৯৩-র চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিজয়ী ফিলিপ শার্পের কথাটাই সবচেয়ে সত্য মনে হয় 'দ্য মানি ইজ অ্যা নাইস পার্ট অব দ্য প্রসেস' টাকাটাই এই প্রক্রিয়ার চমৎকার একটি অংশ। যদি নোবেল পুরস্কারের আর্থিক মূল্য এক লক্ষ টাকা হতো তা হলে এর গুরুত্ব বাংলা একাডেমি পুরস্কারের চেয়ে কম হতো।
টাকাটা বেশি হওয়ায় তালাকের আর্থিক সমস্যা মেটানো যায়, যেমন মিটিয়েছেন আলবার্ট আইনস্টাইন।